৫ থেকে ১০ নভেম্বর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা চীনের শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমি চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র সাংবাদিক হিসেবে মেলা কাভার করতে যাবো। আজকের 'পুবের জানালা' আসরে আমরা প্রথম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার ওপর খানিকটা আলোকপাত করার পাশাপাশি, আসন্ন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার কিছু তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
২০১৮ সালের ৫ থেকে ১০ নভেম্বর শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম
আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি মেলায় অংশগ্রহণকারী ১৭২টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ৩৬০০টিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানান। তিনি আশা করেন, বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা চীনের উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগিয়ে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাবে।
আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা বর্তমান বিশ্বের প্রথম আমদানিবিষয়ক জাতীয় মেলা, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য উন্নয়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, এই মেলা বিশ্বের জন্য চীনের বাজারকে আরও উন্মুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ থেকে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থাকে সমর্থন করে, অবাধ বাণিজ্যব্যবস্থা উন্নয়নের পক্ষের শক্তি, এবং উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে সমর্থন করে।
অভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বতর্মান বিশ্বে বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ ও একপক্ষবাদের প্রবণতা ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে; অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, বহুপক্ষবাদ ও অবাধ বাণিজ্যব্যবস্থা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের সকল দেশের উচিত যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। আর উন্মুক্ত সহযোগিতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একমাত্র প্রাণশক্তি। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও মানবজাতির উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।
বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক উন্মুক্ত সহযোগিতা জোরদারে ৩-দফা প্রস্তাব পেশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি বলেন, সকল দেশকে পরস্পরের জন্য বাজার উন্মুক্ত করতে হবে; পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে; নব্যতাপ্রবর্তনভিত্তিক সহনশীল ও কল্যাণকর অভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। বিভিন্ন দেশের উচিত দৃঢ়ভাবে সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদের বিরোধিতা করা; নিজেদের বাজার উন্মুক্তকরণের কাজ অব্যাহত রাখা; পারস্পরিক অর্থনৈতিক সংযুক্তি ও বিনিময়ের জন্য কাজ করা; যৌথভাবে উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তোলা; সামষ্টিক আর্থিক নীতিমালা সমন্বিত করা; ন্যায়গত, যুক্তিযুক্ত ও স্বচ্ছ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালা গড়ে তোলা; বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো; এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করতে প্রচেষ্টা চালানো।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের উচিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্পে সংস্কারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে, ডিজিটাল অর্থনীতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে সহযোগিতা জোরদার করা এবং যৌথভাবে নতুন প্রযুক্তি ও নতুন শিল্প গড়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া।
উন্মুক্তকরণ আধুনিক চীনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি চালুর পর বিগত ৪০ বছরে চীন ধীরে ধীরে নিজের বাজারকে বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করেছে এবং সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। উন্মুক্তকরণের ভিত্তিতে চীন নিজে উন্নত হচ্ছে এবং বিশ্বের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনছে। চীন উন্মুক্তকরণের এই ধারা বজায় রাখবে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
আগামী ১৫ বছরে বিদেশ থেকে ৪০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা আমদানি করবে চীন। এর মধ্যে পণ্য আমদানি হবে ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এবং সেবা ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের। চীন আমদানি বাড়াবে, নিজের বাজারে বিদেশি পণ্য ও সেবা প্রবেশের বিধিনিষেধ শিথিল করবে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাণিজ্যপরিবেশ সৃষ্টি করবে, উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণে নতুন পরীক্ষামূলক বিশেষ অঞ্চল গড়ে তুলবে, এবং বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা গভীরতর করবে।
সি চিন পিং বলেন, উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে চীন রফতানিপণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমাবে, আমদানি-প্রক্রিয়া সহজতর করবে, আঞ্চলিক অনলাইন-বাণিজ্য দ্রুত উন্নত করবে. আর্থিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিজের বাজার ক্রমশ উন্মুক্ত করবে, পরিষেবা শিল্পকে উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে, এবং শিক্ষা ও চিকিত্সা ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়াবে।
মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ-ব্যবস্থা চালু করবে চীন। এক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করা হবে। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োগ পর্যবেক্ষণের মান ও কার্যকারিতা আরও উন্নত করা হবে। এর উদ্দেশ্য হবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীনে আরও সন্তোষজনক ব্যবসা-পরিবেশ সৃষ্টি করা।
প্রথম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় ১৭২টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নেয়। এতে ক্রেতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ লক্ষাধিক। মেলায় স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তির আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৫৭.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
মেলার উপ-পরিচালক সুন ছেং হাই জানান, প্রথম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় ৩ হাজার ৬ শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি বা সেবার পরিমাণ ৫৭৯টিরও বেশি। ৫৭.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তির মধ্যে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
এদিকে, আসন্ন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫০০টি কম্পানির অর্ধেককে ইতোমধ্যেই আকর্ষণ করেছে। এ পর্যন্ত কম্পানি ইউনিয়নের ৬৮টি সদস্য আমদানি মেলায় অংশগ্রহণের জন্য নাম লিখিয়েছে। আরও কয়েক ডজন আন্তর্জাতিক কম্পানি ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।
এবার মেলায় যেমন দেখা যাবে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তেমন প্রদর্শন করা হবে নানা দেশের সংস্কৃতি যেমন খাবার, পোশাক, জহরত। বাংলাদেশের কিছু কোম্পানি এবার সম্মেলনে অংশ নেবে। সাংবাদিক হিসেবে আমি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সবার সামনে মেলাকে তুলে ধরবো। আমি আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের শ্রোতাদের আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে একটু জানতে চাই। এবার বিশ্ব আমদানি মেলায় আপনি কী কী দেখতে চান? কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি? ইমেলে আমাকে জানান। আমাদের ইমেলের ঠিকানা ben@cri.com.cn । (শিশির/আলিম/রুবি)