ন্যাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : জোরালো হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক
  2019-10-27 18:58:55  cri
১৮তম জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন-ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ২৫ ও ২৬ অক্টোবর এ সম্মেলনে যোগ দেন ন্যামভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। দুদিনের সম্মেলনে উদ্বোধনী ও সমাপনী দুটি অধিবেশনেই যোগ দেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা তুলে ধরেন বিশ্বনেতাদের কাছে। বৈঠক করেন আজারবাইজান, মালয়েশিয়া, নেপাল ও ফিলিস্তিনের নেতাদের সঙ্গে। যোগ দেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনায়। সেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের কথা তুলে ধরেন। সফরকালে বাকুতে ব্যস্ত সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী।

ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিতে ২৪ অক্টোবর চার দিনের সফরে আজারবাইজান যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকালে রাজধানী বাকুতে ন্যাম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যে শেখ হাসিনা বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরেন। তবে এ সফলতার বিপরীতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মতো দুটি বড়ো চ্যালেঞ্জে মুখে রয়েছে বলে জানান বিশ্বনেতাদের। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বাংলাদেশ তার সাধ্যমতো করছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের তৈরি উল্লেখ করে এ সংকট দেশটিকে সমাধান করতে হবে বলে জানান তিনি।

একই দিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিসহ সংকট মোকাবেলায় মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমারের আচরণকে নিষ্ঠুর আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন মালয়েশিয় প্রধানমন্ত্রী।

২৬ অক্টোবর বাকু ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ন্যাম সম্মেলন। সমাপনী অধিবেশনেও যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এদিন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম এলিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন দুনেতা।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও আজারবাইজানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও আজারবাইজানের সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী আবুলফাস গারায়েভ নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন তারা। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালিকী একই দিন সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ জোরালোভাবে উত্থাপন করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করারও আগ্রহ প্রকাশ করেন ফিলিস্তিনি মন্ত্রী। ফিলিস্তিনের প্রাচীন শহর হেবরনে একটি রাস্তার নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করার কথাও শেখ হাসিনাকে জানান রিয়াদ মালিকী।

২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাকুর হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করেন সরকার প্রধান। বলেন, সরকার মাদক-সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অপরাধীকে ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে আবারো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখা হবে। অপরাধী আওয়ামী লীগের হলেও ছাড় পাবে বলে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

ন্যাম সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরতে পারাটা বাংলাদেশের জন্য সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আজারবাইজানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তিতে দুদেশের মানুষ উপকৃত হবে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আজারবাইজান সফরকে ফলপ্রসু হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040