খাই শান দ্বীপ
আবহাওয়া ভালো হলে ১২ নটিকেল মাইল দূরের জেটি থেকে চীনের হুয়াং সমুদ্রের খাই শান দ্বীপ দেখা যায়। দ্বীপটি চীনের চিয়াংসু প্রদেশের লিয়ান ইয়ুন কাং শহরের ইয়ান ওয়েই কাং থানার জনগণের মুখে একটি 'পানি কারাগার'। দ্বীপে এক সময় কোনো গাছপালা ছিল না, দুটি ফুটবল মাঠের মতো আয়তনের দ্বীপে শুধুই পাথর আর পাথর।
দ্বীপটি বহিঃসমুদ্রের খুব কাছাকাছি। এর কৌশলগত অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩৯ সালে জাপানি বাহিনী এই দ্বীপের মাধ্যমে সমুদ্র অতিক্রম করে চিয়াংসু প্রদেশের লিয়ান ইয়ুন কাং শহর দখল করেছিল। গণচীন প্রতিষ্ঠার পর খাই শান দ্বীপে শানতুং প্রদেশের জিনান বাহিনীর একটি দল মোতায়েন করা হয়।। গত শতাব্দীর ৮০ দশক থেকে মিলিশিয়া ফাঁড়িতে পরিণত হয় দ্বীপটি। দশ বারো জন মিলিশিয়া সেখানে মোতায়েন থাকত। তবে, দ্বীপে খাবার পানি নেই, বিদ্যুত্ নেই, ইঁদুর যেন দ্বীপের একচ্ছত্র মালিক! আর্দ্রতাপূর্ণ এবং নিঃসঙ্গ একটি দ্বীপ। ইঁদুরগুলো সর্বোচ্চ ১৩ বছর বাঁচতে পারে। এর বেশি বেঁচে থাকা সম্ভব না!
তবে সেখানে ওয়াং সি হুয়া নামে এক মহিলা ৩৩ বছর ধরে আছেন। তার স্বামী ওয়াং জি ছাই, গত বছরের জুলাই মাসে মারা যান। তার আগে তিনি ওই দ্বীপে ৩২ বছর কাটিয়েছেন।
দ্বীপের জীবন নিয়ে তাদের গল্প চীনাদের মুগ্ধ করেছে।
সেদিন সাংবাদিক ওয়াং সি হুয়াকে দেখার জন্য, জাহাজ নিয়ে খাই শান দ্বীপে যান। বিশাল বিশাল ঢেউ। জাহাজের পাটাতনে দাঁড়িয়ে থাকাই ভীষণ দায়! দ্বীপে যাওয়া ভীষণ কষ্টের কাজর। ওয়াং সি হুয়ার হাঁটতে একটু কষ্ট হয়। কারণ, তার বাম পা কোনো ওজন নিতে পারে না। সেদিন ওয়াং সি হুয়া সাংবাদিকদের দ্বীপটি একবার ঘুরে দেখান। সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। দ্বীপে বসবাসের সময় তিনি ও তার স্বামী ওয়াং জি ছাই প্রতিদিন দুইবার দ্বীপটি টহল করতেন।
দম্পতি ফাঁড়ি
১৯৮৬ সালের জুলাই মাস। কোনো মিলিশিয়া দীর্ঘসময় ধরে খাই শান দ্বীপে থাকতে চায় না। তখন কর্তৃপক্ষ মিলিশিয়ার প্রধান ওয়াং জি ছাইকে দ্বীপে মোতায়েন করার অনুরোধ জানান। তবে, তখন ওয়াং সি হুয়া তার স্বামীর দ্বীপে মোতায়েন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তখন তিনি ছিলেন একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাদের একটি দুই বছর বয়সের মেয়ে আছে। তখন ওয়াং সি হুয়ার খুব সাদামাটা একটা স্বপ্ন ছিল। যেমন একজন ভালো স্ত্রী হওয়া, একজন ভালো মা হওয়া, একজন ভালো শিক্ষক হওয়া।
জেলার কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে স্বামী ওয়াং জি ছাই এক সপ্তাহের জন্য অদৃশ্য হয়ে যান। কেউই স্ত্রী ওয়াং সি হুয়াকে কিছুই জানায় নি। অবশেষে তিনি জানতে পারেন যে, তার স্বামীকে দ্বীপে মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে দ্বীপে একবার দেখার জন্য অনুরোধ জানান। এর আগে তিনি কখনই খাই শান দ্বীপের নামও শোনেন নি, তিনি জীবনে কখনওই সমুদ্রেও যান নি।
স্বামী ওয়াং জি ছাই দ্বীপে মোতায়েনের ৪৮তম দিন ভোরে স্ত্রী ওয়াং জি হুয়া জাহাজে উঠে দ্বীপে যান। সমুদ্রে ঘন কুয়াশা! চারদিকে কিছুই দেখা যায় না! তার ভীষণ রাগ হতে থাকে। দেড় ঘণ্টা পর তিনি দ্বীপে পৌঁছান। তিনি দেখেন তাঁর স্বামী ওয়াং জি ছাই একাই জেটিতে বসে আছেন, দাড়িও কাটা হয়নি তার। তখন স্বামীর ওপর সব রাগ হঠাত্ মিলিয়ে যায়, বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে।
স্বামী ওয়াং জি ছাই স্ত্রী ওয়াং সি হুয়াকে নিয়ে দ্বীপে একবার ঘুরে আসেন। তার ঘরের চার দিকে দেখা যায় মদের বোতল, চপস্টিক্স এবং নোংরা কাপড়। বাসায় ফিরে যাওয়ার আগে স্ত্রী ওয়াং সি হুয়া তার স্বামীকে বলেন: দ্বীপ ছেড়ে বাসায় চলো। কেউ এখানে থাকতে চায় না, তুমি কেন এখানে থাকবে!'
তবে ওয়াং জি ছাই যান নি, তিনি স্ত্রীকে শুধু বলেন: ভালোভাবে শিশুদের শিক্ষা দাও, মেয়ের যত্ন নাও, আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না'।
স্ত্রী ফিরে যাওয়ার পর স্বামী ওয়াং জি ছাই হাউ মাউ করে কাঁদেন!
ওয়াং জি ছাই মারা যাওয়ার আগে একটি ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন। ভিডিওতে ওয়াং জি ছাই দ্বীপে থাকার শুরুর সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন: তখন, এখানে থাকতে খুব ভয় লাগত। এখানে আমি ছাড়া কেউ নেই। দরজায় একটু শব্দ হলে ভয় লাগত! ভীষণ ভয়! না-জানি দরজার বাইরে কী আছে!'
বাসায় ফিরে যাওয়ার পর ওয়াং সি হুয়া স্বামীর কথা খুব ভাবতে থাকেন। সারাদিন শুধু স্বামীর কথাই ভাবেন। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে দ্বীপে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তবে শাশুড়ি শিশুর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেন। তাই, অবশেষে স্ত্রী ওয়াং সি হুয়া একাই দ্বীপে চলে যান। এটি ছিল বড় একটি সিদ্ধান্ত। ওয়াং সি হুয়ার তারুণ্যদীপ্ত জীবনের সব সুন্দর কল্পনা ভেঙ্গেচুরে খান্ খান্ হয়ে যায়!
তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয় দ্বীপে। তখন সমুদ্রে টাইফুন চলছিল। উথাল-পাথাল ঢেউ দ্বীপে আছড়ে পড়ছিল! চারদিক প্রচণ্ড ঝড়। সমুদ্রের আবহাওয়া এত খারাপ ছিল যে, কোনো জাহাজ দ্বীপে যেতে পারছিল না। সন্তান প্রসবের সময় প্রচণ্ড কষ্ট হয় ওয়াং সি হুয়ার। তিনি বলেন, তখন সত্যি স্বামীর ওপর প্রচণ্ড রাগ ও ঘৃণা তৈরি হয়।' কোথাও কোনো সাহায্য পাওয়ার উপায় নেই। ওয়াং জি ছাই নিজের কাপড়কে গজ হিসেবে ব্যবহার করেন, নিজেই কাঁচি দিয়ে নাড়ী কেটে শিশুর জন্ম দেন!
সৌভাগ্যের বিষয় হলো, মা ও শিশু দুজনই সে যাত্রায় রক্ষা পায়। পাঁচ দিনের পর শাশুড়ি দ্বীপে এসে এমন বিপদের কথা শুনে খুব তিরস্কার করেন।
ওয়াং জি ছাই খুব লাজুক একজন মানুষ, সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না। এমনকি নিজের তিন সন্তানের সামনে তিনিও সবসময় একজন কঠোর বাবার ভাবমূর্তি ধরে থাকেন। তবে স্ত্রী ওয়াং সি হুয়া বলেন: 'তবে, আমি তাকে ভালোবাসি। ঠিক তাকে ভালোবাসার কারণেই। কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে, দ্বীপে থাকতে তোমার ভয় লাগে কি না! আমি বলি, ভয় লাগে না। স্বামী সবসময় দ্বীপের বাইরে বিভিন্ন কাজে চলে যান। আমি একাই দ্বীপে থাকি। এই দ্বীপ আমার বাসা, স্বামী এই দ্বীপ রক্ষা করেন, দেশ রক্ষা করেন; আমি ও আমার স্বামী একসঙ্গে থাকবো। আমাদের বাসা রক্ষা করবো।
পরে আমি উপলব্ধি করেছি যে, দ্বীপ রক্ষা করা এক ধরনের দায়িত্ব। আমার স্বামী এ কাজ না করলে, অন্য কাউকে সে কাজ করতে হবে।
দ্বীপকে রক্ষা করা সহজ ব্যাপার নয়
গত শতকের ৮০ ও ৯০ দশকে, উপকূলীয় অঞ্চলে চোরাচালান এবং ঘন ঘন পাচার হতো। খাই শান দ্বীপের মাধ্যমে অনেক পাচারকারী পাচার এবং চোরাচালান করতে চেয়েছিল। তারা ওয়াং জি ছাইকে ঘুষ দেওয়ার অনেক চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে কেউ এক জন দিনে দ্বীপে এসে ওয়াং জি ছাইকে ১ লাখ ইউয়ান দিতে চায়। ওয়াং জি ছাই অবশ্যই তাতে রাজি হন নি। এই পাচারকারী ওয়াং জি ছাইকে জেটিতে নিয়ে খুব মারধোর করেছে এবং তার শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াং জি ছাইকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। আরেকবার পাচারকারী তার দ্বীপের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়!
দ্বীপকে রক্ষা করার ৩৩ বছরে, এই দম্পতি নয়বার অবৈধ ব্যাপারে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
দ্বীপে ওঠার প্রথম বছর ১ অক্টোবর, অর্থাত্ চীনের জাতীয় দিবসের দিনে, ওয়াং জি ছাই ও ওয়াং সি হুয়া জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেন। 'তারকাখচিত জাতীয় পতাকা বাতাসে উড়লে দ্বীপে অন্তত কিছু রং দেখা যাবে! এই দ্বীপ রক্ষার কাজটি অর্থপূর্ণ হবে।
অপরাধীদের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি দ্বীপে থাকার বেশিরভাগ সময় শুধুই নিঃসঙ্গতা এবং আর্দ্রতার কারণে হাড়ের ব্যথা তাদের স্থায়ী সঙ্গী হয়।
মাঝে মাঝে এই দম্পতি গাছ লাগাতেন। এখন খাই শান দ্বীপে শতাধিক গাছ আছে তাদের টহল করার পথের দু'পাশে। এমনকি এখন দ্বীপে ফলের গাছও আছে। ওয়াং সি হুয়া স্বামীর কথা স্মরণ করে বলেন: সে আমাকে বলত, যদিও শুরুর দিকে এই দ্বীপে গাছ ছিল না, ঘাস ছিল না, বিদ্যুত্-পানি কিছুই ছিল না। কিন্তু, যখন আমরা দ্বীপ ছেড়ে বাসায় ফিরে যাব, তখন আমরা দু'জন এই দ্বীপকে সবুজ করে যাবো।
মাঝে মাঝে তারা গবাদি পশু লালন-পালন করতেন। তারা কয়েকটি ছাগল দ্বীপে নিয়ে এসেছিলেন। ছোট ছাগল সবসময় দ্বীপের খাড়া উঁচু পাহাড়ে দাঁড়াতো। একবার সমুদ্রের প্রচণ্ড বাতাসের ধাক্কায় ছাগল সমুদ্রে পড়ে মরে যায়। পরে তারা আর ছাগল লালন করেন নি। এখন খাই শান দ্বীপে তিনটি কুকুর আছে। সবচেয়ে বয়স্ক কুকুরের বয়স ১২ বছর।
মাঝে মাঝে সমুদ্রে ঘন কুয়াশা হয়। যে জেলের নৌকায় রেডার নেই, তাদের নৌকা সহজেই দ্বীপের সঙ্গে ধাক্কা খায়। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এমন আবহাওয়ায় ওয়াং জি ছাই দ্বীপের জেটিতে দাঁড়িয়ে নৌকার নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন।
আধুনিক সভ্যতা এই দ্বীপ থেকে অনেক দূরে আছে!
দীর্ঘসময় ধরে ওয়াং সি হুয়া দম্পতি বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন শুধু চিঠির মাধ্যমে। ২০০৮ সালেও খাই শান দ্বীপে বিদ্যুত্ সরবরাহ ছিল না! বাইরের তথ্য জানতে ওয়াং সি হুয়া দম্পতি শুধুই রেডিও শুনতেন।
দ্বীপ রক্ষার জন্য ওয়াং সি হুয়া দম্পতি অনেক ত্যাগ করেন। ওয়াং জি ছাই নিজের মেয়ের জন্য খুব জাঁকজমক একটি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, দ্বীপ রক্ষার জন্য তিনি নিজের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে পারেন নি। সেদিন ওয়াং সি হুয়া মেয়েকে বলেন, তুমি তোমার বাবার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে। তবে তোমার বাবাও একজন সেনা। দ্বীপ রক্ষা করা তার নিজের জীবনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পরে, তার মেয়ের বিয়ের দিনে, নিজের বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দ্বীপের দিকে তাকিয়েছিলেন।
দ্বীপে সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ দ্বীপে জাহাজের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে যখন ওয়াং জি ছাই জানতে পারেন যে, একবার পানি পাঠাতে ৫ হাজার ইউয়ান লাগে। তিনি আর তা গ্রহণ করেন না, বরং নিজেই দ্বীপে পানি বিশুদ্ধ করার কাজ শুরু করেন।
অনেকেই ওয়াং জি ছাইকে 'দ্বীপের মালিকা' হিসেবে ডাকেন। কারণ খাই শান দ্বীপে তারা অনেক মানুষকে উদ্ধার করেছেন। তারা বলেন: এটি খুব সাধারণ ব্যাপার, মানুষ বিপদে পড়ে, তাকে তো অবশ্যই সাহায্য করা উচিত, তাই না?
২০০৮ সালে খাই শান দ্বীপে প্রথম ছোট আকারের জেনারেটর স্থাপন করা হয়। ওয়াং সি হুয়া ও ওয়াং জি ছাই জীবনের প্রথম টিভি অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। তবে শুধু ছয় মাস! কারণ, এরপর সেই জেনারেটর নষ্ট হয়ে যায়। তা আর ঠিক করা হয়নি। তারা আবারও বিদ্যুত্হীন জীবনে ফিরে যান। শুধু দ্বীপে চীনের জাতীয় পতাকাটিই সবসময় নতুন থাকে। ৩২ বছরের মধ্যে তারা প্রায় ২ শ'টি জাতীয় পতাকা কিনেছেন। এর দাম আগের কয়েক ইউয়ান থেকে কয়েক ডজন ইউয়ান বেড়েছে, তবে তাদের বেতন ৩২ বছর ধরে সবসময় ৩৭০০ ইউয়ানই ছিল। এর কোনো পরিবর্তন হয় নি।
কেউ জিজ্ঞেস করে, তোমরা এমন করো কেন? কেউ কেউ তাদেরকে বোকা বলে!
ওয়াং জি ছাই বলেন, তোমাদের জীবন কাটানোর পদ্ধতি আছে, আমার নিজের জীবন কাটানোরও পদ্ধতি আছে, জীবন সম্বন্ধে আমাদের লক্ষ্য তোমাদের চেয়ে ভিন্ন।
তিন বছর আগে, ওয়াং জি ছাই এবং ওয়া সি হুয়ার প্রতি বছরের ভর্তুকি ২০ হাজার ইউয়ান বাড়ে। তাদের আর্থিক অবস্থা দেখতে দেখতে ভালো হয়। তবে ওয়াং জি ছাই এমন সময়ই মারা যান। ২০১৮ সালে একবার টহলের সময় আকস্মিক ঘটনায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয় মাত্র ৫৮ বছর!
এরপর স্ত্রী ওয়াং জি হুয়া দ্বীপ রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতভাবে আবেদন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় দুই বছর পার হয়েছে। কিন্তু স্বামীর কথা উল্লেখ করলে ওয়াং সি হুয়া এখনো কাঁদেন। এত বছর দ্বীপে আমরা থেকেছি, সে কখনওই আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারে নি। কারণ, দ্বীপে যে কাজ আছে, সেসব ভারী ও কঠিন কাজ! সে বলে, তোমার এত বেশি কাজ করার দরকার নেই, আমি আছি। এসব কাজ থেকে আমি তার ভালোবাসা বুঝতে পারি।
ওয়াং সি হুয়া'র হাড়ের রোগের কারণে খুব ব্যথা হয়, ডাক্তার তাকে অস্ত্রোপচার করার প্রস্তাব দেন। তবে তিনি তা অস্বীকার করেন। তার আশঙ্কা, অস্ত্রোপচার হলে যদি আর দ্বীপে উঠতে না পারেন ! তাহলে কী হবে!
ওয়াং সি হুয়া বলেন, তার স্বামী মারা যাননি, বরং সবসময় তার সঙ্গে দ্বীপেই আছেন, শুধু চোখের আড়ালে আছেন!