বন্ধুরা, উ হান সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমস এখন চলছে, আমরা প্রথমে এ সম্পর্কে কিছু খবর আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?
টুটুল: উ হানে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমস উদ্বোধন
অক্টোবর ১৯: সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১৮ অক্টোবর চীনের হুপেই প্রদেশের উ হান শহরের ক্রীড়া কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, চীনের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
৫০টি দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ, বাহিনীর নেতৃবৃন্দ ও চীনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের মিলিটারি অ্যাটাশেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বিশ্ব মিলিটারি গেমস চালু হওয়ার ২৪ বছর পর এবারই প্রথম চীনে এ গেমস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি হচ্ছে চীনের প্রথম বার ব্যাপক আন্তর্জাতিক সামরিক গেমস আয়োজন করা।
১০ দিনব্যাপী গেমসে শুটিং, সুইমিং, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, ফুটবল, বাস্কেটবলসহ মোট ২৭টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মিলিটারি সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা, নৌবাহিনী সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা, ওরিয়েনটিয়ারিং ও প্যারাশুটিং হচ্ছে সামরিক বৈশিষ্ট্যময় ইভেন্ট। এবারের গেমসের ইভেন্টের পরিমাণও বিশ্ব মিলিটারি গেমসের ইতিহাসের শীর্ষ স্থানে।
উ হানে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বাহিনীর নেতৃবৃন্দ ও সিআইএসএমের কর্মকর্তাদের সাথে চীনা প্রেসিডেন্টের সাক্ষাত্
অক্টোবর ১৯: চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং গতকাল (শুক্রবার) উ হান শহরে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বাহিনীর নেতৃবৃন্দ ও সিআইএসএম কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত্ করেন। তিনি চীন সরকার, জনগণ ও বাহিনীর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বাহিনীর নেতৃবৃন্দদেরকে, আন্তর্জাতিক মিলিটারি স্পোর্টস কাউন্সিল (সিআইএসএম)-র কর্মকর্তাদেরকে ও বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দেরকে উষ্ণ স্বাগত জানান।
সি চিন পিং বলেন, আজ, আমরা উ হানে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমস আয়োজন করছি। শতাধিক দেশের প্রায় দশ সহস্রাধিক সেনা একসাথে উহানে মিলিত হয়েছেন। তারা একসাথে আদান-প্রদানের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করছেন। খেলাধুলা হচ্ছে সমাজের উন্নয়ন ও মানবজাতির অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ও জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খেলাধুলার সাথে সেনাদের একটা সংযোগ রয়েছে। শুটিং, ম্যারাথনসহ অনেক খেলাধুলার ইভেন্ট সামরিক খাত থেকে শুরু হয়েছে।
সামরিক খেলাধুলার মাধ্যমে সেনারা শরীর চর্চা করতে পারেন, স্পিরিট তৈরি করতে পারেন, ঐক্য জোরদার কতে পারেন, সেনাদের ভাবমূর্তি প্রদর্শন করতে পারেন এবং বিভিন্ন দেশের বাহিনীর মধ্যে আদান-প্রদান জোরদার করতে পারেন। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ খেলাধুলার উপর গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরো বলেন, চীন বরাবরই সামরিক খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেয়, ব্যাপকভাবে সামরিক খেলাধুলার কার্যক্রম আয়োজন করে এবং ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক সামরিক খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিশেষ করে ১৯৭৮ সালে চীন আন্তর্জাতিক মিলিটারি স্পোর্টস কাউন্সিলে (সিআইএসএম) অংশ নেয়ার পর, বিভিন্ন সদস্যদেশগুলোর সাথে একসাথে খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, সামরিক খেলাধুলার কার্যক্রম আয়োজন করে, সহযোগিতা ও আদান-প্রদান করে এবং আন্তর্জাতিক সামরিক খেলাধুলার ইতিবাচক অংশগ্রহণকারী, নির্মাণকারী ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারীতে পরিণত হয়।
সি চিন পিং জানান, শান্তির জন্ম স্মরণ করার জন্য বিশ্ব মিলিটারি গেমসের জন্ম হয়। বন্ধুত্ব সম্প্রচারের জন্য তা উন্নয়ন হয়। তা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রদর্শন, বন্ধুত্ব জোরদার ও প্রভাব সম্প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। ২০১৫ সালের মে মাসে, সাফল্যের সাথে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের বিডিং জয় করার পর, 'সবুজ, শেয়ারিং, উন্মুক্ত, স্বচ্ছতা' এই ধারণা অনুসারে উচ্চ মাণ ও উচ্চ গুণগতমাণসম্পন্ন গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে চীন সরকার ও বাহিনী। এবারের গেমসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'সেনাদের গৌরব সৃষ্টি করা, বিশ্বের শান্তি নির্মাণ করা'। যাতে গেমসে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা অধ্যবসায়ের খেলাধুলার স্পিরিট প্রদর্শন করবে, খেলাধুলার সূর্যালোকের মাধ্যমে যুদ্ধের কুয়াশা দূর করতে পারবে, বন্ধুত্বের মাধ্যমে সভ্যতার যোগাযোগ এগিয়ে নেবে, মনের যোগাযোগ ও সংযোগের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ শক্তি যোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা এ বারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসকে বিভিন্ন দেশের সানাদের একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার শান্তিপূর্ণ সম্মিলনী এবং বিভিন্ন দেশের সামরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক সম্মিলনী হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করবো।
সি চিন পিং আরো বলেন, এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসের মাধ্যমে চীনা বাহিনী অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে, বিভিন্ন দেশের বাহিনীদের সাথে আদান-প্রদান জোরদার করতে, কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব গ্রহণ করে হাতে হাত ধরে অভিন্ন নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলা করতে, বিশ্বের শান্তি রক্ষা ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনকে এগিয়ে নেয়ার খাতে আরো বড় অবদান রাখতে ইচ্ছুক।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আরো জানান, সবাই এ বারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন যুগে চীন ও চীনা বাহিনীর সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন, চীনা জনগণের উষ্ণতা ও আন্তরিকতা উপলব্ধি করতে পারবেন বলে আমি আশা করি। কামনা করি এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমস সাফল্যমণ্ডিত হবে, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল ভালো পারফর্মেন্স করতে পারবেন এবং বন্ধুত্ব উন্নয়ন করতে পারবেন।
সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের প্রথম স্বর্ণ পদক জয় করলো চীন
২০ অক্টোবর সকালে অনুষ্ঠিত সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের পুরুষদের ২৫ মিটার পিস্তল শুটিংয়ে চীন স্বর্ণ পদক লাভ করেছে। তা হচ্ছে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের প্রথম স্বর্ণ পদক এবং এবারের গেমসে চীনের প্রথম স্বর্ণ পদক।
এদিন সকালে ছাই তিয়ান প্রতিরক্ষা বিষয়ক শুটিং রেঞ্জে সর্বশেষ দফা শুটিং শেষ হওয়ার পর, বড় পর্দায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের শুটিংয়ের ফলাফল দেখা যায়। অবশেষে চীনের শিয়ে চেন শিয়াং, চিন ইয়োং টে, ইয়াও চাও নানের দলটি পুরুষদের ২৫ মিটার পিস্তল শুটিংয়ে স্বর্ণ পদক লাভ করে। তা হচ্ছে এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসে চীনা প্রতিনিধি দলের প্রথম স্বর্ণ পদক। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার দলটি এ ইভেন্টে পৃথক পৃথকভাবে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে।
উল্লেখ্য যে, চীনা দলের বয়োজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় চিন ইয়োং টে ১৮ অক্টোবর এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং স্টেডিয়ামে মিলিটারি গেমসের মশাল রিলের দ্বিতীয় মশাল বহনকারীর দায়িত্ব পালন করেন।
চিন ইয়োং টে প্রতিযোগিতায় অসাধারণ ভাল রেকর্ড সৃষ্টি করেন। তিনি ইতোমধ্যে ২৬ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাংবাদিককে বলেন, এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসে আসলে তিনি অনেক চাপের সম্মুখীন হয়েছেন।
তিনি বলেন,
আকাশ: অনেকে এর উপর নজর রাখছেন, এজন্য আমি অনেক বেশি চাপ বোধ করছি। কিন্তু আমি আমার ফোকাস প্রতিযোগিতার ভেতরে আরোপ করার চেষ্টা করি, সুষ্ঠুভাবে প্রতিযোগিতায় ভাল করার চেষ্টা করি। দেশ ও বাহিনীর জন্য আরো গৌরব অর্জন করার আশা করছি আমরা।
সামরিক পিস্তল শুটিং হচ্ছে মিলিটারি গেমসের বৈশিষ্ট্যময় শুটিং ইভেন্ট। এ প্রতিযোগিতার নিয়ম হচ্ছে দলটির তিনজন খেলোয়াড়ের রেকর্ড যোগ করার পর চূড়ান্ত ফলাফল সৃষ্টি করা হয়। প্রতি খেলোয়াড় প্রতিযোগিতার সময় মোট ৬ দফা শুটিং করতে পারেন।
চীনের "পয়লা অগাস্ট" শুটিং দলটির ক্যাপ্টেন লি লি ইয়া সাংবাদিককে ব্যাখ্যা করেন যে, বাহিনীর প্রশিক্ষণের সাথে এ প্রতিযোগিতার অনেক মিল রয়েছে। তিনি বলেন,
আকাশ: এ ইভেন্ট মাত্র বাহিনীর প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তা আমাদের বাহিনীর প্রশিক্ষণের কাছাকাছি। প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত পিস্তলের ক্যালিবার বাহিনীর ব্যবহৃত পিস্তলের ক্যালিবারের একইরকম।
১৯ অক্টোবর বিকালে পুরুষদের ২৫ মিটার পিস্তল শুটিং সামরিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী আয়োজিত হয়। দেশের জাতীয় সংগীত বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় খেলার মাঠে। চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা লিউ ওয়েই হুয়া মনে করেন, এ স্বর্ণ পদক জয় করা সহজ নয়। খেলোয়াড়দের ঐক্য, সমন্বয়, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অবশেষে তা অর্জন করা যায়। তিনি আশা করেন, চীনের খেলোয়াড় আরো পরিশ্রম করে আরো সুফলাফল অর্জন করবেন।
তিনি বলেন,
আকাশ: তিনজন কমরেড ঐক্য, সমন্বয়, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে চেষ্টা করতে থাকেন। বিশেষ করে খেলার শেষ দিকে, প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের রেকর্ডে আসলে বেশি পার্থক্য নেই। আজকের এ স্বর্ণ অর্জন করা সত্যি সহজ নয়। এধরনের বড় আকারের প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়দের মাণ দেখা যায়। এ মাণ আসলে প্রতিদিনের কঠোর প্রশিক্ষণ থেকে অর্জন করা হয়।
১৯ অক্টোবর হচ্ছে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমসের প্রথম প্রতিযোগিতার দিন। এ স্বর্ণ পদক ছাড়া, চীনের খেলোয়াড় অ্যারোনটিক্যাল পেন্টাথলন, সাইক্লিং, জুডো, ফেন্সিং ও সুইমিংয়ে ভালো পারফর্মেন্স করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন।