১. চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের জিডিপি আগের বছরের তুলনায় ৬.২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯.৭৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে (৯.৮৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)। সম্প্রতি চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ তথ্য প্রকাশ করে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার চলতি বছরের টার্গেট ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিসংখ্যান অনুসারে, বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে সেবা-খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া, চীনের অর্থনীতেতে ভোগের অবদানও ক্রমশ বাড়ছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ ভোগের হিস্যা ছিল ৬০.৫ শতাংশ।
২. দেশকে বিদেশি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও উন্মুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং। তিনি সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় পরিষদ তথা চীনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যবসা-পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে আরও কার্যকরভাবে বিদেশি পুঁজি ব্যবহার করার নির্দেশনাও দেন।
প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, আরও আকর্ষণীয় ব্যবসা-পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে, ন্যায়সঙ্গত তত্ত্বাবধান-ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, এবং সংস্কার গভীরতর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চীনে বিদেশি ব্যাংক ও স্টক কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানির কার্যক্রমসংশ্লিষ্ট নতুন সংশোধিত নিয়ম-বিধি মেনে চলতে হবে। তা ছাড়া, বিনিয়োগকারীদের সুবিধা বৃদ্ধি, সমতার ভিত্তিতে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের বৈধ স্বার্থ রক্ষা, এবং পুঁজি আকর্ষণ করতে স্থানীয় সরকারগুলোকে সমর্থন করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
৩. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেছেন, তাঁর দেশে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও সহযোগিতার আগ্রহকে স্বাগত জানানো হবে। চীন তার উন্মুক্ত দরজা ভবিষ্যতে আরও প্রশস্ত করবে। আর এর উদ্দেশ্য পারস্পরিক কল্যাণ অর্জন। সম্প্রতি বেইজিংয়ে চীন-মার্কিন ব্যবসা পরিষদের প্রধান ইভান গ্রিনবার্গের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, চীনে যান্ত্রিক নির্মাণশিল্প সার্বিকভাবে উন্মুক্ত হয়েছে; সেবাশিল্প উন্মুক্ত হচ্ছে। চীন আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসা-পরিবেশ গড়ে তুলতেও কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে চীনে দেশি-বিদেশি সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম-আচরণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চীন প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল বাজার। এই বাজারে ক্রমশ ভোগ বাড়ছে। এতে বিশাল বাণিজ্যিক সুযোগ ও সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। বস্তুত, চীনের উন্নয়ন বিশ্বের জন্য সুযোগ। চীন-মার্কিন ব্যবসা পরিষদ দু'দেশের মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে পারস্পরিক সমঝোতা বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জবাবে মার্কিন প্রতিনিধিদলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহযোগিতা দু'পক্ষের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তেরাষ্ট্রের শিল্প ও বাণিজ্য মহল চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী এবং বাণিজ্যযুদ্ধ ও পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ দেখতে চায় না। দু'পক্ষ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে অর্থবহ চুক্তিতে উপনীত হবে এবং দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ন্যায়সঙ্গত ও নিশ্চিত ব্যবসা-পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
৪. 'বিশ্ব ইন্টারনেট উন্নয়ন রিপোর্ট, ২০১৯' এবং 'চীনের ইন্টারনেট উন্নয়ন রিপোর্ট, ২০১৯' সম্প্রতি চীনে আয়োজিত ষষ্ঠ বিশ্ব ইন্টারনেট সম্মেলনে প্রকাশিত হয়।
'চীনের ইর্টারনেট উন্নয়ন রিপোর্ট, ২০১৯'-তে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৩১.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা চীনের জিডিপি'র ৩৪.৮ শতাংশ। ডিজিটাল অর্থনীতি চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত চীনে নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮৫.৪ কোটি। এ ছাড়া, একই সময় পর্যন্ত ৯৪টি দেশের ২৮০টি টেলি-যোগোযোগ কোম্পানি ৫জি সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। চীনে ২০১৯ সালের ৬ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ৫জি'র লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেইজিং, কুয়াংচৌ, শাংহাই, চ্যচিয়াং ও চিয়াংসু প্রদেশের ইন্টারনেটের মান সবচেয়ে উন্নত।
৫. সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর স্থায়ী সদস্য ও গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চেয়ারম্যান ওয়াং ইয়াং বেইজিংয়ে চীনের 'দারিদ্র্যবিমোচন পুরস্কার' বিজয়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতে ওয়াং ইয়াং পুরস্কারবিজয়ী বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তিবর্গকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, চীনে পার্টি এবং সকল জাতি ও জনগণ পরিশ্রমের মাধ্যমে, দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিভিন্ন জটিলতা সত্ত্বেও, সি চিন পিংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, চীনের সরকার ২০২০ সালের মধ্যে দেশকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
৬. চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ দেশি-বিদেশি পর্যটক চীনের সিনচিয়াংয়ের খর্গোস শহর ভ্রমণ করেন। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২.৯ শতাংশ বেশি। এসময় শহরটি পর্যটন খাত থেকে মোট ১১৪৮.৮ কোটি ইউয়ান আয় করে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৭.৫ শতাংশ বেশি। সিনচিয়াংয়ের খর্গোস শহরের সংস্কার ও পর্যটন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন-কাজাখস্তান সীমান্তে অবস্থিত খর্গোস আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহযোগিতাকেন্দ্রের ভিতর দিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটক যাতায়াত করেছে মোট ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ২০০। এ সময় এ কেন্দ্রের ভিতর দিয়ে দেশি-বিদেশি গাড়ি যাতায়াত করেছে মোট ৬৬ হাজার ২০০টি।
খর্গোস আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহযোগিতাকেন্দ্র হলো যে-কোনো দেশের সঙ্গে চীনের স্থাপিত প্রথম আন্তঃদেশীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতাকেন্দ্র। এটি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় স্থাপিত একটি কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে প্রায় ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালু হয়েছে। এখানে বিনিয়োগ ৩০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করছেন। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য পাওয়া যায়।
৭. ২০১৮ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল ৯৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার, যা একটি নতুন রেকর্ড। এ ছাড়া, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে ওঠে। তা ছাড়া, ভারত হলো বিদেশে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের গন্তব্যস্থান ও সহযোগিতার বাজার। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ভারতে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছিল। আর চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত চীনে ভারতের পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ ৯২ কোটি মার্কিন ডলার ছিল।
এদিকে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাজারবিষয়ক বিভাগের উপপ্রধান পাই মিং বলেন, চীন ও ভারতের অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। যেমন, চীনের সেলফোন ভারতে অতি জনপ্রিয়; আবার চীনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান ভারত থেকে আমদানি করতে হয়।
৮. রাশিয়ায় একটি প্রাকৃতিক গ্যাস পক্রিয়াকরণ ও রাসায়নিক প্লান্ট স্থাপন করবে চীনের একটি কোম্পানি। এই কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (গ্রুপ) কোম্পানি লিমিটেড (সিএনসিইসি)-এর একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত ১২০০ কোটি ইউরোর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি পাঁচ বছরে বাস্তবায়িত হবে।
৯. চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মঙ্গোলিয়া রফতানি করেছে ৫৯০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.৬ শতাংশ বেশি। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান দফতার (এনএসও) সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
এনএসও জানায়, দেশটির মোট রফতানি আয়ের ৯৫.৮ শতাংই এসেছে খনিজ ও টেক্সটাইল খাত থেকে। এসময় মঙ্গোলিয়ার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
১০. ইউনাইটেড ন্যাশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন ( ইউএনডাব্লিউটিও)-র ভাষ্যমতে ২০১৮ সালে বিশ্বের মোট কর্মসংস্থানের ১০ শতাংশ সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন খাতে। আগামী বছরগুলোতে সেই হার আরও বেশ কয়েক শতাংশ বাড়বে। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিষদের (ডাব্লিউইএফ) ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক সূচক অনুসারে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এ হার ১.৯ শতাংশ। সংস্থাটির হিসাবে, বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ১.৯ শতাংশ বা ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ জন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৭ সালে যা ছিল ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯০ জন। পর্যটন কর্মসংস্থানে পিছিয়ে থাকার জন্য অনেক কারণকে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ অভিজ্ঞ জনবলের অভাব, পর্যটনকে আলাদাভাবে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার পরও যথাযথ গুরুত্ব না-পাওয়া, পর্যটননীতিকে আইনে পরিণত না-করা, পর্যটনসংশ্লিষ্ট পেশায় আগ্রহী ব্যক্তিদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসহ প্রভৃতি কারণ।
(আলিমুল হক)