১১ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভারত ও নেপাল সফর করেন। ভারতে তিনি চীন-ভারত দ্বিতীয় অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেন এবং পরে নেপালে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। সফরের তিন দিন দুই রাত প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে রাষ্ট্রীয় ইভেন্টের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও ছিল। দেশে-বিদেশে এ সফর গভীর আগ্রহেরও জন্ম দেয়। অনেকেই একে 'গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সফর' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সফর শেষের আগে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ওয়াং ই সাংবাদিকদের বলেন, সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। এ সফর ভারত ও নেপালের সাথে চীনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সু-প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বের জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, এবং আঞ্চলিক কার্যকর সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছে।
ওয়াং ই বলেন, চীন-ভারত সম্পর্কের সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য উচ্চ-স্তরের কৌশলগত নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিবর্তনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তা। এবার সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি'র মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতবিনিময় হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেছেন, দু'দেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী কৌশলগত তাত্পর্য রয়েছে।
চীন-ভারত বন্ধুত্বই উভয় পক্ষের জন্য একমাত্র সঠিক পছন্দ, যা দুই দেশের স্বার্থের সঙ্গে এবং বিশ্বের স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দু'পক্ষের উচিত সময়মতো বড় ইস্যুতে যোগাযোগ করা, একে অপরের মূল স্বার্থকে সম্মান করা, ধীরে ধীরে বোঝাপড়া বাড়ানো, এবং মতপার্থক্যগুলো দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। চীন আশা করে, নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি, ভারতও উন্নত হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে বলেন, দুই পক্ষকে একে অপরের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে, কার্যকরভাবে মতপার্থক্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে বিকাশ করতে হবে, এবং ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যবহারিক সহযোগিতার প্রসারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা একটি উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংলাপ-ব্যবস্থা স্থাপন, অর্থনৈতিক বিকাশের কৌশলকে শক্তিশালীকরণ, উত্পাদন-অংশীদারিত্ব অন্বেষণ, এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সুষম বিকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দু'নেতা জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক শৃঙ্খলা, বহুপক্ষবাদ, বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা রক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মহাবলীপুরমের প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেন। এসময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও ভারতের আছে হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা। চীন ও ভারতের উচিত মানবিক আদান-প্রদান আরও বাড়ানো, যৌথভাবে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সংলাপ ও মতবিনিময়কে সমর্থন করা, এবং এশীয় সভ্যতার নতুন গৌরব রচনা অব্যাহত রাখা। প্রধানমন্ত্রী মোদি এ ব্যাপারে সি'র সঙ্গে পুরোপুরি একমত হন।
দু'নেতা বৈঠকের ফলাফলকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেন এবং এই কৌশলগত যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সম্মত হন। প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং আবারও চীনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করার ব্যাপারে একমত হন।
নেপাল ছিল প্রেসিডেন্ট সি'র এবারের সফরের দ্বিতীয় ও শেষ গন্তব্য। ওয়াং ই বলেন, প্রেসিডেন্ট সি ও নেপালি নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়নের পরিকল্পনা করেন, জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকার বিভিন্ন খাতে ২০টি সহযোগিতা-দলিল স্বাক্ষর করেন এবং চীন-নেপাল বন্ধুত্বের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেন।
প্রেসিডেন্ট সি এবং নেপালি নেতারা বলেন যে, যৌথভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণ করা হবে এবং বন্দর, সড়ক, রেলপথ, বিমান যোগাযোগ ইত্যাদি খাতের যৌথ প্রকল্পগুলির মাধ্যমে এতদঞ্চলে ত্রি-মাত্রিক আন্তঃসংযোগ নেটওয়ার্কের নির্মাণকে ত্বরান্বিত করা হবে।
ওয়াং ই জানান, প্রেসিডেন্ট সি'র এবারের নেপাল সফর বড় দেশের সঙ্গে কূটনীতির চীনা কৌশলের আরেকটি সফল অনুশীলন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আন্তরিকতার সঙ্গে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন, মতপার্থক্য মোকাবিলার বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন, এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, চীন উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সাথে ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করবে এবং "দুটি শত বছরের লক্ষ্য" অর্জনের জন্য একটি ভাল আঞ্চলিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। (জিনিয়া/আলিম/শুয়েই)