ছংছিং হলো চীনের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর এবং ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই শহরের 'মৈত্রী শহর'। ছংছিংয়ের জিয়েফাং সড়ক শহরের কেন্দ্রস্থলের ইউচং এলাকায় অবস্থিত। সড়কের একদিকে ছাইইউয়ানবা রেল স্টেশন এবং অন্য একদিকে অবস্থিত ছাওথিয়ানমেন বন্দর। সড়কে অনেক দোকান। সড়কে এক ধরণের মানুষ দেখা যায়, যারা হলেন 'হিউম্যান পোর্টার'। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ধরণের মানুষকে 'বাংবাং' বলে ডাকে।
"আমার নাম লিউ স্যিয়াও স্যিয়াও। আমি ১৯৯২ সালে জন্মস্থান জিগং থেকে ছংছিংয়ে আসি। ছংছিংয়ে আসার পর শুরুর দিকে আমি সবজি বিক্রী করতাম। কিন্তু সবচেয়ে দীর্ঘ সময় আমি বাংবাংয়ের কাজ করেছি।"
লিউ স্যিয়াও স্যিয়াও বর্তমানে একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের মালিক। আগে তিনি বাংবাংয়ের কাজ করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "চীনের সংস্কার ও উন্মুকরণ কার্যকর হওয়ার প্রথম দিকে তথা গত শতাব্দীর ৮০র দশকে গ্রামের উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি ব্যাপকভাবে শহরে এসেছিল। ছংছিং হলো একটি পাহাড়ি শহর। তখন অধিকাংশ ভবনে এলিভেটর ছিল না। বাংবাংরা তখন মালামাল উপরে ওঠানোর কাজ করতো। তখন বাংবাং শ্রমিক অনেক বেশি ছিল।"
সংস্কার ও উন্মুক্তকারণ কার্যকর হওয়ার শুরুতে ছংছিংয়ে পরিবহন-ব্যবস্থা খারাপ ছিল। খারাপ পরিবহন-ব্যবস্থা শহরায়ন-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছিল। এসময় বহু কৃষক শহরে আসে জীবিকার সন্ধানে। তাঁরা বেশি শিক্ষিত নন। তাঁদের কোন বিশেষ যোগ্যতাও নেই। সেজন্য তারা বাংবাংয়ের কাজ করতেন।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যকর হওয়ার পরের ৪১ বছরে ছংছিংয়ে চীনের অধিকাংশ শহরের মতো বিরাট পরিবর্তন ঘটে। গত সেপ্টেম্বরে যখন লিউ স্যিয়াও স্যিয়াও জিয়েফাং সড়কে হাঁটছিলেন, তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "আগে সড়কের পাশে এসব ভবন ছিল না। তখন খুবই ছোট বাড়িঘর ছিল। সড়কে অনেক বাংবাং ঘোরাফেরা করতেন; সেখানে অনেক ছোট দোকান ছিল। এখন সড়কের দৃশ্য খুবই আধুনিক ও সুন্দর।"
জিয়েফাং সড়ক ছিলো ছংছিংয়ের বাংবাংদের মূল বিচরণস্থল। বর্তমানে পুরাতন বাড়িঘর নেই। বাংবাংও খুবই কম দেখা যায়। এ সম্পর্কে লিউ স্যিয়াও স্যিয়াও বলেন, "কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা এ ধরণের কাজ করতে চায় না। শহরের উন্নয়ন-কাঠামোর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেমন, ছাওথিয়ানমেন বন্দরের বিখ্যাত বাজারগুলো স্থানান্তরিত হয়েছে। সেজন্য বাংবাংয়ের সংখ্যা অনেক কমেছে।"
সাত থেকে আট বছর বাংবাংয়ের কাজ করার পর লিউ স্যিয়াও স্যিয়াও ১৯৯৮ সালে বন্ধুদের নিয়ে 'ছংছিং বাংবাং পরিষেবা কোম্পানি' প্রতিষ্ঠা করেন। ২১ বছর পর তাঁর কোম্পানিতে এখন ২০ জনেরও বেশি কর্মী ও অনেকগুলো পণ্যপরিবহন যান রয়েছে। বর্তমানে তাঁর কোম্পানি একটি পেশাদার মাল-পরিবহণ কোম্পানিতে উন্নীত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "বাংবাং কোম্পানি গড়ে তোলার লক্ষ্য ছিল নিজের বন্ধুদেরকে নিয়ে সমৃদ্ধ জীবন গড়ে তোলা। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করাও ছিল আমার লক্ষ্য।"
বাংবাং কোম্পানি ছাড়াও লি স্যিয়াও স্যিয়াও রিয়াল এস্টেট ও রেস্তোরাঁ খাতে বিনিয়োগ করেন। ছংছিংয়ের বিরাট পরিবর্তন দেখে তিনি খুশী।