চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে শহরাঞ্চলে নতুন সৃষ্টি হয় ৯৮ লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান, যা গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮৯.৫ শতাংশ। এর মধ্যে নতুন পেশায় কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের।
নতুন পেশায় পদের নামগুলোও নতুন ধরনের। যেমন, ডিজিটাল পরিচালক, ই-স্পোর্টস প্লেয়ার ইত্যাদি।
উপাত্তের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে এবং এ-সম্পর্কিত পেশাও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন চীনে ডিজিটাল পরিচালকের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি এবং এর মধ্যে ৮৭.২৩ শতাংশের আয় স্থানীয় সাধারণ মানুষের তুলনায় ১-৩ গুণ বেশি এবং এ চাকরির চাহিদা বর্তমানে কোটির উপরে। যারা মুখ স্ক্যান যন্ত্র স্থাপন করে তাদের বার্ষিক আয় ১.৫-২ লক্ষ ইউয়ান। মুখ স্ক্যানবিষয়ক কর্মীর সংখ্যা ৫ লাখ। এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
আগে পিতা-মাতারা নিজেদের শিশুদের কম্পিউটার গেমস খেলতে দিতে পছন্দ করতেন না। তবে এখন ই-স্পোর্টস প্লেয়ার খুব জনপ্রিয় একটি পেশা। এখন চীনে ই-স্পোর্টস ক্লাব ৫ হাজারের বেশি এবং পেশাদার প্লেয়ারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। পাশাপাশি, অনেকে আজকাল আধা-পেশাদার বা অপেশাদার প্লেয়ার হিসেবে নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।
সুন ই একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-প্রশিক্ষক। তার কাজ হল প্রতিদিন এআই-কে বিভিন্ন উপাত্ত ইনপুট দেওয়া। তিনি বলেন, এআই একজন শিশুর মতো এবং প্রতিদিন সে হাজার হাজার প্রশ্ন করতে পারে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ আরও বুদ্ধিমান হতে পারে।
প্রতিদিন এআই ছবির মাধ্যমে সুন ই-কে হাজার হাজার প্রশ্ন করে এবং এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া সুন ই'র কাজ। সুন ই বলেন, এআই'র মাধ্যমে বাজারের প্রবণতা ও ভোক্তার চাহিদা জানা যায় এবং পোশাক শিল্পের গুণগত মান উন্নত করা যায়।
প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন পেশার সৃষ্টি করে এবং উন্নত ভোগ্যপণ্যও নতুন পেশার সৃষ্টি করে। যেমন, সেবাশিল্পে নানা রকমের নতুন পেশা সৃষ্টি হয়েছে। আজকাল 'রুম এস্কেপ' খুব জনপ্রিয় একটি খেলা এবং এ গেমসের জন্য যারা স্ক্রিপ্ট রচনা করেন, তারা নতুন পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষ। তা ছাড়া, পোষ্য ফটোগ্রাফারের মতো নতুন পেশাও আছে। কেউ কেউ নিজের শখ পেশায় পরিণত করেন। কেউ হয়তো একটি কাজ খুব ভাল করতে পারেন। তিনি অন্যদের এ খাতে সেবা দিতে শুরু করে নিজে পেশাদারে পরিণত হন।
এআইসহ নতুন প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট চাকরির বেতনও ভাল। একজন অ্যালগরিদম প্রকৌশলীর মাসিক বেতন ১০ হাজারের বেশি এবং ৮৬ শতাংশ ই-স্পোর্টস প্লেয়ারের আয় স্থানীয়দের গড় বেতনের চেয়ে ১-৩ গুণ বেশি।
এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্ধেক নতুন পেশার কর্মীর মাসিক আয় ৫ হাজারের বেশি এবং ২৪.৬ শতাংশের মাসিক আয় ১০ হাজারের বেশি। পোষা প্রাণী, বিবাহ, বিনোদন, মেডিকেল সৌন্দর্যসহ নানা খাতের কর্মীরাও তুলনামূলকভাবে বেশি আয় করছেন।
ওয়াং চিয়া নান একটি ফটো শ্যুটিং ট্যুরবিষয়ক কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি মনে করেন, ২০১২ সাল থেকে এ ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ভ্রমণের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এবং তাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে নতুন একটি পেশার সৃষ্টি হয়েছে।
ইউয়ান ছুন নান একজন পেশাদার কোলেশান ডিভিশন কর্মী। তার কাজ হল অন্যের বাড়ির সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে দেওয়া। তিনি ১০ হাজারের বেশি পরিবারের ঘর গুছিয়ে দেওয়ার কাজ করেছেন বা তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন এ পর্যন্ত। তার ক্লায়েন্টদের অধিকাংশই বড় শহরের ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী।
তরুণ-তরুণীরা নতুন পেশার প্রতি ঝুঁকছেন। এর একটা বড় কারণ চাহিদা। পাশাপাশি আছে এসব পেশার বিভিন্ন সুবিধা। যেমন, গেস্ট হাউসের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, তারা অনেকটা ফ্রিল্যান্সারের মতো। তারা চাইলে বাইরে অন্য কাজও করতে পারেন। তাই এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা এখানে পার্টটাইম কাজ করে।
আলিবাবা কোম্পানির প্রকাশিত কর্মসংস্থান-প্রবণতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের অর্থনৈতিক ও শিল্পের কাঠামো পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন শিল্প ও নতুন পদ্ধতি আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। যারা নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ পাশাপাশি অন্য একটি কাজ বা খণ্ডকালীন কাজ করেন।
নতুন পেশা চীনের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তাদের জন্যও সামাজিক নিশ্চয়তা থাকা দরকার; প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা জরুরি একটি ব্যাপার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। (শিশির/আলিম)