শেখ হাসিনার দিল্লি সফর : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ
  2019-10-06 19:28:09  cri

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে ১ অক্টোবর দেশে ফিরে মাত্র দু'দিনের মাথায় ৩ অক্টোবর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সফরে ভারত যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবার পর এটাই তার প্রথম ভারত সফর। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, তিস্তার পানি বন্টন, রোহিঙ্গা ইস্যু, ভারতের এনআরসির মতো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে। ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক। ভারতে আরো একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে ফলপ্রসু বলছেন বিশ্লেষকরা।

ভারত সফরে ৩ অক্টোবর নয়াদিল্লি পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা অভ্যর্ত্থনা জানানো হয়। প্রথম দিনই শেখ হাসিনা ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ফোরামে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। তার ভারত সফরের মূল বিষয় ছিল এবার এ সম্মেলনে যোগ দান। সম্মেলনে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় উদ্যোক্তাদের গতানুগতিক খাতের বাইরে বাংলাদেশের শিক্ষা, হালাক শিল্প, ইলেকট্রনিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নের প্রশংসা করেন।

একই দিন বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়ী ফোরামে যোগ দেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভারতের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীদের প্রতি। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের একটি অত্যন্ত জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

৫ অক্টোবর নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক সাক্ষরিত হয়। সমঝোতাস্মারকের আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সুযোগ পাবে ভারত। এই পানি ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য পরিবহন, উপকূলীয় নজরদারিতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও যুব উন্নয়নে হয়েছে চুক্তি ও সমঝোমাস্মারকগুলো। এ ছাড়াও ত্রিপুরায় এলপিজি সরবরাহসহ তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রী একমত হন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বিশ্বে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তস্বরূপ। বহুমাত্রিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পরে দুই দেশ ৫৩ দফা সম্বলিত একটি যৌথবিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব তিস্তার পানি বন্টনসহ অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা সমাধানে চুক্তি স্বাক্ষরে কাজ করছে নয়াদিল্লি। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বাংলাদেশের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশের মতোই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন চায় ভারত। যৌথ বিবৃতিতে বহুল আলোচিত এনআরসি প্রসঙ্গের উল্লেখ না থাকলেও একান্ত বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান যে আদালতের নির্দেশে তাদের নাগরিকপঞ্জি করতে হচ্ছে।

এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিবেশি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বলে এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানান জয়শঙ্কর। একই দিন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। একই দিন সন্ত্রাস দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অনন্য ভূমিকার জন্য এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা শেখ হাসিনাকে ঠাকুর শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহীদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফর মূলত ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ফোরামকে ঘিরে ছিল। তারপরও তার সফরটি রাষ্ট্রীয় সফর হয়েছে এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক হয়েছে। দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক। সব মিলিয়ে তাই প্রধানমন্ত্রীর সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসু মনে করছেন তিনি।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040