চীনের প্রতিটি শহরে এমন একটি তাত্পর্যপূর্ণ রাস্তা দেখা যায়। তার অস্তিত্বের কারণে এ শহর আরও বৈশিষ্ট্যময় হয়ে ওঠে। চীনের উত্তরাঞ্চলের শানসি প্রদেশের লিন ফেনে এমন একটি 'চিয়ে ফাং লু' আছে। উল্লেখ্য যে, লি ফেন শ্রীলংকার অনুরাদ্ধাপুরারের সিস্টার সিটি।
লিন ফেনের 'চিয়ে ফাং লু' বা মুক্তি রাস্তার কথা উল্লেখ করলে ১৯৪৮ সালের ১৭ মে'র কথা স্মরণ করতে হয়। এদিন চীনের গণমুক্তি ফৌজ লিন ফেন মুক্তির যুদ্ধ চালিয়েছে। তাদের প্রচেষ্টায় লিন ফেন মুক্তি পায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর লিন ফেন মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে এ শহরে 'চিয়ে ফাং' নামের রাস্তা তৈরি হয়। লিন ফেনের নগরায়ন দলিল জাদুঘরের মহাপরিচালক ওয়াং চাও ইউয়ান বলেন,
'১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে আমরা একটি রাস্তা নির্মাণ করেছি এবং লিন ফেন মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে রাস্তাটি 'চিয়ে ফাং লু' নামকরণ করা হয়। এ রাস্তা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর লিন ফেনে নির্মিত প্রথম প্রধান রাস্তা।
চিয়ে ফাং লু'র গল্প বলার সময় ওয়াং চাও ইউয়ান খুব আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তিনি বলেন, চিয়ে ফাং লু বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। এ রাস্তায় লিন ফেন শহরের উন্নয়ন প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৬৫ সালে চিয়ে ফাং লু'তে লিন ফেন শহরের প্রথম ইট দিয়ে নকশা তৈরি করা হয়। ১৯৯৬ সালে চিয়ে ফাং লু'তে শহরটির প্রথম অ্যাসফল্টের রাস্তা তৈরি হয়। ১৯৮০ সালে চিয়ে ফাং লু লিন ফেংয়ের প্রথম উইলো স্ট্রিটে পরিণত হয়। শহরের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চিয়ে ফাং লু প্রথম দিকের ১২ মিটার চওড়া রাস্তা থেকে বর্তমানে বেশ কয়েটি গলি প্রধান রাস্তায় পরিণত হয়। গত এক যুগে চিয়ে ফাং লু'র কারণে সংশ্লিষ্ট রাস্তার মোড়ে বাণিজ্যিক ও রিয়াল এস্টেটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। লিন ফাং শহরবাসীর পরিশ্রম ও স্বপ্ন চিয়ে ফাং লু'র উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
চিয়ে ফাং লু প্রাথমিক স্কুল চিয়ে ফাং লুতে অবস্থিত। এ স্কুলের মাধ্যমে লিন ফেন শহরের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রতিফলিত হয়েছে। চিয়ে ফাং লু প্রাথমিক স্কুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছেন লিন লিং বলেন,
আমাদের 'চিয়ে ফাং লু প্রাথমিক স্কুলের' আগেকার নাম ছিল প্রাদেশিক ষষ্ঠ নর্মাল প্রাথমিক স্কুল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর আজকের নাম দেওয়া হয়েছে। এ স্কুলের শতাধিক বছরের ইতিহাস রয়েছে। স্কুলটিতে আগেকার পুরানো কক্ষ বর্তমান সুন্দর শিক্ষাভবনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে স্কুলে এরকম ৭টি শিক্ষাভবন রয়েছে।
ছেন লিন লিং আরও বলেন, মৌলিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থাও অনেক উন্নত হয়েছে। এ স্কুল প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম লিন ফেনের মানুষকে শিক্ষা দিয়ে আসছে। স্কুলটি তাদের শৈশবের সুন্দর সময়ের পাশাপাশি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
চিয়ে ফাং লু'র দিনের বেলা ও রাতের বেলা ভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করে। রাতের বেলায় চিয়ে ফাং লু'র পিং ইয়াং চত্বরে মানুষ জমে। প্রতি রাতে এ চত্বরে শহরবাসীরা গান গায়। তারা পিং ইয়াং গান ব্যান্ড গড়ে তোলেন এবং প্রতিরাতে চত্বরে বিনাপয়সায় গান পরিবেশন করেন। ব্যান্ডের একজন সদস্য চাং বলেন,
'আমাদের এ ব্যান্ডের মূল লক্ষ্য সবাইকে আনন্দ দেওয়া। আমরা পেশাগত শিল্পী না। তবে সবাই মিলে আনন্দ করতে চাই। তাই এমন একটি নাম রাখা হয়েছে। প্রথমদিকে বেশ কয়েকজন ছিল, যারা গান গাইতে পছন্দ করত, তারা এখানে এসে গান গাইতো। এভাবে এখন চার-পাঁচশ'র মতো মানুষ এখানে সমবেত হয়ে গান গাওয়া শুরু করে।
পিং ইয়াং আনন্দময় গান ব্যান্ড চত্বরে নয় বছর ধরে গান পরিবেশ করছে। এ চত্বরে বিভিন্ন মহলের মানুষের সুখী অনুভূতি প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
গত অর্ধ শত বছরে চিয়ে ফাং লু'র উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অধিক থেকে অধিকতর সুখী জীবন উপভোগ করেছেন। ১৯৪৭ সালে জন্মানো তু লিয়াং ছি লিন ফেংয়ের অধিবাসী। তিনি বলেন, 'আমার নাম তু লিয়াং ছি। আমার বয়স ৭৩ বছর। লিন ফেং শহরে চিয়ে ফাং লু একটি প্রধান সড়ক। এটি শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র। লিন ফেং'র উন্নয়ন খুব দ্রুত, আমাদের দেশের মতো। ৭০ বছর উন্নয়নের ফলে চীন অত্যন্ত গরীব অবস্থা থেকে ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে। লিন ফেং থেকে শানসি প্রদেশ এবং শানসি প্রদেশ থেকে সারা চীনের পরিবর্তন দেখা যায়।
(রুবি/তৌহিদ)