ফার্সি ও উর্দু গজলের কথা বললেই যে নামটি উচ্চারিত হয়- তিনি হলেন মির্জা গালিব। আর বাংলার গালিব হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ছোট বেলায় কাকা বজলে করিম সাহেবের কাছে উর্দু ভাষার হাতেখড়ি হয় তাঁর। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেনাদলে নাম লিখিয়ে করাচি যান নজরুল। সেখানে এক পাঞ্জাবি মৌলভির কাছে ফার্সি কবিতা পড়তে যেতেন। গজলের প্রতি ভালোবাসা তাঁর ছিল। উপরন্তু এই ভাষাজ্ঞান অর্জন তাঁকে বাংলা গজল রচনায় দারুণ উদ্বুদ্ধ করেছিল। চলুন গান শুনি; গান গেয়েছেন অঞ্জলি মুখার্যী, শঙ্কর ঘোষাল ও মানবেন্দ্র মুখার্যী।
কতরকম গান-যে নজরুল লিখেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এখন পর্যন্ত তাঁর ৩০০০-এর বেশি গান পাওয়া গেছে। তাঁর গানগুলো নজরুল-গীতিকা ও নজরুল স্বরলিপি নামে দুটি গ্রন্থে ১৯৩০ ও ১৯৩১ সালে গ্রন্হবদ্ধ হয়। নজরুল-গীতিকায় কবি নিজে তাঁর সংগীতকে ভাগ করেছিলেন ১১টি শিরোনামে। তার পরে আরো ১২ বছর তিনি গান লিখেন তিনি। তার মধ্যে দু-ধরনের গানে তিনি শীর্ষে আরোহণ করেন — ইসলামি গানে ও শ্যামাসংগীতে। বাংলা গানে অভিনব তাঁর প্রথম গীতিগ্রন্থ বুলবুল। সে সময় বুলবুল-এর অনেক গজল-গানই ফিরত লোকের মুখে মুখে— 'বাগিচায় বুলবুলি তুই', 'বসিয়া বিজনে কেন একা মনে', 'এত জল ও কাজল চোখে', 'নিশি ভোর হলো জাগিয়া', 'ভুলি কেমনে আজো যে মনে' ইত্যাদি।
চলুন গান শুনি এবারের গানগুলো গেয়েছেন,
নজরুল গজলগানের প্রবর্তক, শুধু প্রবর্তকই নন, শ্রেষ্ঠ। তাঁর আগে কি বাংলা গজলগান লেখা হয়েছে। লিখেছেন মুনশি মেহেরুল্লা, অতুলপ্রসাদ যেন, শেখ হবিবর রহমান (সাহিত্যরত্ন) প্রমুখ। কিন্তু বাংলা গানকে এমন-একটি সম্পূর্ণতা দিয়েছেন নজরুল, শিখরে নিয়ে গেছেন, যা একমাত্র নজরুলের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। তাঁর প্রভাবে সেকালে গজলগানও রচিত হয়েছে। এস. ওয়াজেদ আলির মতো অসামান্য প্রাবন্ধিকও লিখেছেন, আরো কেউ কেউ। তবে গজলগানের একচ্ছত্র সাম্রাজ্যটি ছিল নজরুলের আয়ত্ত।