আরও উন্মুক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এগিয়ে নেবে চীন: সিআরআইয়ের সম্পাদকীয়
  2019-10-03 15:04:28  cri
অক্টোবর ৩: বো সফিয়া কম্বোডিয়ার একজন সাধারণ নারী। ৭ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে তিনি বাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেলও কিনেছেন। দুটি সন্তানকে স্কুল ভর্তিও করেছেন তিনি। তার জীবন-যাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। কারণ তিনি শিহানৌক বন্দর অর্থনৈতিক অঞ্চলের এক চীনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শিহানৌক বন্দর অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে চীন-কম্বোডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ প্রতিষ্ঠিত অঞ্চল এবং চীনের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল। তা চীনের উন্মুক্তকরণে বিশ্বের সঙ্গে সুযোগ ভাগাভাগির একটি প্রতিফলন। আজ (বৃহস্পতিবার) চীন আন্তর্জাতিক বেতারের এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়।

৭০ বছর আগে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় চীনের মানুষ অতি গরীব এবং শিল্প ও কৃষি খুব দুর্বল ছিল। নিজের কঠোর পরিশ্রম, বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি প্রবর্তনের পর গত ৭০ বছরে চীনা মানুষ মানবজাতির ইতিহাসে অপূর্ব বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। শেন জেনসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা থেকে উপকূলীয় অঞ্চল ও দূরবর্তী অঞ্চলের কেন্দ্রীয় শহরে উন্মুক্তকরণ প্রবর্তন এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থায় অংশগ্রহণ করাসহ চীন বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারপর চীন আবার যৌথভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রতিষ্ঠা, অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক অঞ্চল, বিশ্বের একমাত্র আমদানি ভিত্তিক চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার আয়োজনসহ চীন ধীরে ধীরে উন্মুক্ত বাড়িয়েছে এবং বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করেছে। বাস্তবতা প্রমাণ করে যে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ বর্তমান চীনের ভাগ্যের চাবিকাঠি। এ নীতির কারণে চীনের অর্থনীতির উল্লম্ফন পরিবর্তন ঘটানোর পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও সহায়ক হয়েছে।

গত ৭০ বছরে চীন ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্ত্বায় পরিণত হয়েছে। একদিকে চীন বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ আমদানিসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে গত ৭০ বছরে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির হার ৪হাজার গুণ বৃদ্ধি করেছে, বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অন্য দিকে, চীন উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সংস্কার সাধন, বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশগ্রহণের পর থেকে চীন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক নামতালিকা কমানোসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে চীনের অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য বৃদ্ধি করেছে।

চীনের উন্মুক্তকরণে বিশ্ব উপকৃত হয়েছে। ২০০৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান প্রথম অবস্থান দখল করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দ বলেন, চীনের উন্মুক্তকরণ বাড়ানোয় বিশ্বব্যাপী সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চীন বিশ্বের বাজারের পাশাপাশি বিশ্বের কারখানা। দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্য বাজারের পাশাপাশি তাতে রয়েছে বিশ্বের একমাত্র সর্বাত্মক ধরনের শিল্প। চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যগুলোর গুণ অনেক ভালো, যা আন্তর্জাতিক বাজারের নানা চাহিদা মেটাতে সক্ষম এবং তার ফলে স্থানীয় লোকজনের ব্যয় অনেক কমেছে।

উল্লেখ্য যে, বিদেশে চীনের বিনিয়োগ বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত ৭০ বছরে বিদেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ শূন্য থেকে বেড়ে দশাধিক হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা স্থানীয় দেশগুলোর জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ ও কর বাড়িয়েছে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া-আফ্রিকা একাডেমি বা এসওএইএস'র এক জরিপে বলা হয়েছে, ইথিওপিয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানায় স্থানীয়দের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি। চীনা প্রতিষ্ঠান আফ্রিকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, গত ৭০ বছরের কঠোর অনুসন্ধানের পর, বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পরে অর্জিত ব্যাপক অগ্রগতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর আধুনিকায়নের জন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে। চীনস্থ পেরুর রাষ্ট্রদূত হুয়ান কার্লোস কাপুনাই ছাভেজ বলেন, চীন দেশটির জনসাধারণের পেট ভরে খাওয়ার সমস্যা সমাধান করেছে। এখন দেশটি সার্বিকভাবে সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে। (রুবি/টুটুল/শিশির)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040