নয়াচীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশে চীনা প্রবাসীদের ভাবনা
  2019-10-01 14:55:36  cri

আজ, পয়লা অক্টোবর, বেইজিং থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বড় আকারের উদযাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল অংশ ছিল সামরিক কুচকাওয়াজ। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রবাসী চীনাবিষয়ক কার্যালয়ের আমন্ত্রণে বিদেশে বসবাসকারী চীনাদের প্রতিনিধিদল বেইজিংয়ে এসে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশে প্রবাসী চীনা। সম্প্রতি বেইজিংয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন সিআরআই-এর সাংবাদিক।

গোল্ডটেক্স লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ান চিয়া হেং বাংলাদেশ থেকে আসা প্রবাসী চীনা প্রতিনিধিদলের সবচেয়ে তরুণ একজন। তার পরিবার বাংলাদেশে ২০ বছর আগে বিনিয়োগ করতে আসে। তিনি মনে করেন, চীনা মানুষের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগের উপযুক্ত একটি জায়গা এবং প্রতিবেশী দেশগুলো চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। তিনি বলেন

"আমি মনে করি, 'এক অঞ্চল, এক পথ' খুব ভাল একটি উদ্যোগ। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো নিজেদের চোখের সামনে চীনের দ্রুত উন্নয়ন দেখেছে। বিশেষ করে গেল ৩০ বছরে চীনে যে পরিবর্তন হয়, তা উল্লেখযোগ্য। তাই চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো, যেমন বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে শিখতে আগ্রহী।"

গেল ৭০ বছরে দেশের বিশাল পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, "১৯৮৬ সালে আমি প্রথমবার বেইজিংয়ে আসি। তখনকার তুলনায় বেইজিংয়ের চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যে কোনো দিক দিয়ে আগের চেয়ে উন্নত বেইজিং। এখন পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত দেশগুলোর বড় শহরের তুনলায় বেইজিং নিকৃষ্ট নয়। আমি খুব খুশি যে এবার ৭০তম জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ ও উযপাদনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরেছি। আমি সম্মানিত বোধ করছি।"

বাংলাদেশে চীনা প্রবাসীদের সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জুয়াং লি ফেং গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে বাংলাদেশে যান এবং সেখানে বিগত ২০ বছর ধরে বাস করছেন। তিনি জানান, গেল ২০ বছরে বিদেশে চীনা নাগরিকদের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, "বিদেশীরা এখন চীনা মানুষ দেখলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের নাগরিক হিসেবে সম্মান করে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা অনুসারে, বিদেশে যখন আমরা বিনিয়োগ করি বা কাজ করি তখন আমাদের আত্নবিশ্বাস আরও বাড়ে। আমাদের পেছনে আছে শক্তিশালী একটি মাতৃভূমি।"

এখন বাংলাদেশে চীনা মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তারা কেউ কেউ ওখানে বিনিয়োগ করতে গেছেন, কেউ কেউ ওখানে কাজ করতে গেছেন। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উত্থাপন করেন 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব এবং তখন থেকেই চীনা কোম্পানি ও মানুষ বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে নেয়।

জুয়াং লি ফেং বলেন, "আমার মতো দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশে যারা আছেন, তারা ভাবলেন, নতুন বাংলাদেশে আসা চীনা মানুষকে সহায়তা দেয়ার জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। তাই দু'বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ওভারসিস চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশান ইন বাংলাদেশ বা বাংলাদেশে প্রবাসী চীনাদের সংস্থা।"

সংস্থার সদস্য ৪০০ জনের বেশি এবং কোম্পানি ২০০টির বেশি। কোম্পানিগুলো দেড় লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে সংস্থার সদস্যদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

সংস্থাটি নিয়মিতভাবে আয়োজন করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বা লেকচারের। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সদস্যদেরকে জানানো হয় কীভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হবে, কীভাবে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় আইন ও নিয়মও জানানো হয়।

তিনি বলেন, "আমি ও অন্য ৫ জন এবার গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি। এবারই প্রথম বাংলাদেশে চীনা প্রবাসীরা এ সুযোগ পেলেন। আমাদের জন্য এটা অভূতপূর্ব সম্মান। আমাদের মাতৃভূমি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর দিন দিন সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছে এবং অল্প সময়ে বড় সাফলতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশের ব্যবস্থা ভালো এবং মানুষগুলো পরিশ্রমী। ভবিষ্যতে আমাদের এ দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস করি।" (শিশির/আলিম/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040