২০১৯ সালের ১ অক্টোবর হলো গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। সম্প্রতি সিআরআইয়ের সাংবাদিকরা বিদেশে কর্মরত এবং চীন-বিদেশের বন্ধুত্বের মৈত্রীর মতো ভূমিকা পালনকারী 'চিয়ানকুও'কে খুঁজে পেয়েছেন। আশা করা যায়, এমন নামধারী চীনা নাগরিকদের গল্প থেকে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের উন্নয়ন ও পরিবর্তন প্রতিফলিত হবে।
১৯৮০ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করা চিয়ানকুও হলেন, চীনের উত্তর-পশ্চিম বেসামরিক বিমানবন্দর নির্মাণ গ্রুপের তৈরি নেপালের গৌতমবুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আপগ্রেড প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি এই প্রকল্পের কমিউনিস্ট পার্টির শাখা সম্পাদক। তিনি সেনাবাহিনীতে সেবা দিতেন এবং আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলায় এক বছর ধরে কাজ করতেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি নেপালে পৌঁছান। তিনি নেপালে চার বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি খুব লম্বা মানুষ, তবে একটু লাজুক। নিজের নাম সম্পর্কে তিনি বলেন,
আমি চীনের ইয়ান আন শহরের জিছাং জেলার আন তিং থানার দূরবর্তী এলাকায় জন্মগ্রহণ করি। তখন পরিবার খুব গরীব ছিল, সন্তানও বেশি, পরিবারের অবস্থা ভালো না। বাবা মা আশা করতেন আমরা পাহাড়ি এলাকা থেকে বাইরে বের হয়ে যাব ও বাইরের বিশ্ব দেখবো। আমার নাম হলো 'চিয়ানকুও' অর্থাত্ দেশ প্রতিষ্ঠা। তাহলে দেশ ও বাসা সুন্দরভাবে তৈরি হলে, দেশ শক্তিশালী হলে, আমাদের জীবনও সুন্দর হবে।
পরিবারের আকাঙ্ক্ষার মতো, নি চিয়ানকুও শুধু ছোট গ্রাম থেকেই বের হননি, তিনি দেশের বাইরে যেতেও সক্ষম হয়েছেন। তিনি শুধু বাইরের বিশ্ব দেখাই নয়, বরং বিদেশিদের বাসা নির্মাণে সাহায্যও করেছেন। নেপালের গৌতমবুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র ব্যক্তি শাক্যমুনির জন্মস্থান-লুমবিনিতে যাওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি বিমানবন্দর। বর্তমানে তা খুব জরাজীর্ণ ছোট একটি বিমানবন্দর। এটি শুধু নেপালের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোকে সেবা দেয়। নি চিয়ানকুও এবং তাঁর সহকর্মীরা এখানে নতুন আন্তর্জাতিক পার্কিন অ্যাপ্রোন (parking apron), পিচ কংক্রিট রানওয়েসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। এর সঙ্গে তাঁরা পুরানো রানওয়ে পুনর্নির্মাণ করেছেন। তাদের চেষ্টায় নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল, কার্যালয়, পরিচালনা টাওয়ার, ট্রান্সফর্মার সাবস্টেশন, পার্কিং স্টেশনসহ বিভিন্ন গণব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে নেপালে শুধু একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, যা রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত। গৌতমবুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আপগ্রেড প্রকল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে স্থানীয় নিরাপত্তা পুলিশ গোকার্না চাউহান বলেন,
নির্মাণাধীন গৌতমবুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো নেপালের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তা শাক্যমুনির জন্মস্থান লুমবিনিতে আসা বৌদ্ধ ধর্ম অনুরাগী এবং পর্যটকের জন্য খুব তাত্পর্যপূর্ণ। আমি এখানে চীনা কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, তারা আমার বন্ধু। তাদের এখানে যাওয়া-আসায় আমরা সাহায্য করি। তারা আমাদের বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য এখানে এসেছেন, আমরা এসব চীনা বন্ধুকে খুব সম্মান করি, তারাও খুব বন্ধুত্বপূর্ণ।
২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি; প্রকল্প চালু হওয়ার পর নি চিয়ানকুও এবং তাঁর সহকর্মী নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, নির্মাণ উপকরণের অভাব, বিদ্যুত্ সরবরাহের অভাবসহ বিভিন্ন কঠিনতার মুখোমুখি হন। এমনকি চীন এবং নেপালের প্রযুক্তিগত মানদণ্ড ভিন্ন হওয়ায় দু'পক্ষের মতভেদও ছিল। অবশেষে, শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি ও দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে চীনা কোম্পানি নেপালি বন্ধুদের শ্রদ্ধা অর্জন করে। এই প্রকল্পের ম্যানেজার সুই বো ইং বলেন,
এই প্রকল্প নির্মাণের সময় আমার কিছু অনুভূতি হয়। প্রথমত, তা নেপালের বিমানবন্দর নির্মাণের প্রযুক্তিগত মানদণ্ড সৃষ্টি করেছে। আমরা প্রথমবারের মতো নেপালে চীনা কোম্পানি স্থাপন করেছি। আমার মনে হয়, এটি হলো সবচেয়ে বড় সফলতা। আরেকটি অনুভূতি হলো, এখানে কিছু অবদান রেখেছি। পাঁচ বছরের প্রতিটি বছর অন্তত তিন শতাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যা এখানকার জন্য অর্থনৈতিক স্বার্থ সৃষ্টি করেছে এবং নেপালের কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিও পাওয়া গেছে।
নেপালে প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে, চীনা কোম্পানি শুধু তাদের জন্য বিমানবন্দরই নির্মাণ করেননি, বরং স্থানীয় মানুষকে প্রযুক্তি প্রশিক্ষণও দিয়েছে। এতে অনেক প্রকৌশলী সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পের বিদ্যুত্ ও গ্যাসবিষয়ক প্রকৌশলী সুং চুন জানান,
প্রকল্পের মাপ দেওয়া, যন্ত্র পরিচালনা করা এবং ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয় আমরা স্থানীয় কর্মীদের শেখাই। তাদের মধ্যে অনেকেই স্বাধীনভাবে চীনের যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। নেপাল সরকার এ বিষয়ে খুব সন্তুষ্ট।
বিমানবন্দর আপগ্রেড প্রকল্পে কমিউনিস্ট পার্টি শাখার সম্পাদক হিসেবে, কাজের ক্ষেত্রে চীন এবং নেপালি কর্মীদের প্রতি কঠোর মানদণ্ড চাপিয়ে দেননি চিয়ানকুও। নি চিয়ানকুও নেপালি কর্মীদের খুব যত্ন নেন। নি চিয়ানকুও'র সঙ্গে চার বছর ধরে কাজ করা এই প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার হু এন বিং বলেন,
ম্যানেজার নি খুব ভালো একজন মানুষ। কর্মক্ষেত্রে তাঁর প্রশংসার কথা আমি অনেকবার শুনেছি। নেপালি কর্মীরা বলেন, ম্যানেজার নি স্থানীয় গরীব মানুষদের অনেক সাহায্য করেন। তাদেরকে চাল ও খাবার দেন। খুব ভালো একজন মানুষ তিনি।
জন্মস্থানের সেই গরীব গ্রাম থেকে নি চিয়ানকুও অনেক বছর আগে বেরিয়ে এসেছেন। তবে তিনি সবসময় জন্মস্থানের উন্নয়নের ওপর নজর রাখেন। যেখানে তিনি যান, সেখানে তিনি সবাইকে নিজের জন্মস্থানের কথা বলেন। প্রতিবার বিভিন্ন প্রতিনিধিদল তাদের এই প্রকল্প পরিদর্শন করে, তখন তিনি সবাইকে তার জন্মস্থান আনতিং থানার ভিডিও দেখান।
তিনি বলেন,
আমি এমন ভালো সময়ে বেশ কয়েকটি দেশে যেতে পেরেছি। আমিও আমার জন্মের সেই পাহাড় থেকে বাইরের বিশ্বে যাওয়া প্রথম মানুষ। কিছুদিন ধরে আমি অনেক চিন্তা করছি। আমার এখানে অনেক বেশি সুবিধা আছে, আমরা অনেক বন্ধু আছে! আমাদের নেতা আমাদেরকে অনেক সমর্থন দেন। আমি তাদের সঙ্গে চিন্তাভাবনা এবং মতবিনিময় করেছি। আমি আমার জেলার সংস্কৃতি ও পর্যটন উন্নয়নের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে চাই এবং কিছু অবদান রাখতে চাই। তা সফল হবে কি না, তা আমি জানি না, কিন্তু আমি নিশ্চয়ই এজন্য চেষ্টা করবো।
(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)