চীন ও পাকিস্তান পরস্পরের সুপ্রতিবেশী, বন্ধু, ও অংশীদার। ২০১৫ সালে চীনের পূর্ব উপকূলের একটি শহর পাকিস্তানের ঐতিহাসিক নগর লাহোরের সঙ্গে মৈত্রী-শহর সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ শহরটিই ইয়ানথাই।
ইয়ানথাই শহরের চিবি এলাকায় জিয়েফাং সড়কে অবস্থিত ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুল শতাধিক বছরের প্রাচীন। স্কুলটি ছিলো ইয়ানথাই'র কমিউনিস্ট চিন্তাভাবনা প্রচার করার ঘাঁটি। বর্তমান ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুলের প্রধান মাদাম লিয়াং লান চিয়ে সাংবাদিককে জানান, নয়াচীন প্রতিষ্ঠার আগে ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র পক্ষে অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ সম্পর্কে লি লান চিয়ে আরও বলেন, "চীনের যুদ্ধের সময়ে সিপিসি'র অনেক সদস্য ইয়াংচেং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মার্কসবাদ-লেনিনবাদ এবং রাষ্ট্র ও জনগণকে উদ্ধারের ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে এখানে ইয়ানথাই'র প্রথম দিকের সিপিসি ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা গুও শৌ এবং ইয়ানথাই শহরের প্রথম সিপিসি'র কমিটির সম্পাদক সাহেব স্যু দুয়ান ইউয়ানের নাম উল্লেখ করা যায়।"
নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুল স্বদেশপ্রেম শিক্ষা দেওয়া অব্যাহত রাখে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আরো সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে থাকে। এ সম্পর্কে লিয়াং লান চিয়ে বলেন, "নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুল দ্রুত উন্নত হয়। আমাদের স্কুলের অবকাঠামোগত বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৮৭ সালে স্থানীয় সরকার পুরাতন ভবন রূপান্তর করে। একটি চার তলা ও ৩৬০০ বর্গমিটারের নতুন ভবন নির্মিত হয়। এতে ২০টি ক্লাসরুম রয়েছে। বর্তমান স্কুলে ওয়াইফাই আছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে বসে বিশ্বের যে-কোনো স্থানের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।"
একসময় ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা ইয়ানথাই-এর মানুষকে প্রগতিশীল হবার মন্ত্র শেখাতেন। এখনও সেই ধারা অব্যাহত আছে। ভিন্ন ধরনের এই শিক্ষা হলো ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুলের সংস্কার ও উন্নয়নের ভিত্তি। এখানে শিক্ষার্থীরা হলো স্কুলের মালিক। ক্লাস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিজেদের তুলে ধরার কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুলে ৩৩ বছর কাজ করেছেন শিক্ষিকা সুও স্যিয়াং হুয়া। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র শিক্ষার কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা বহুমূখী সামর্থ্য অর্জনে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, "যুগ পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার ধারণাও উন্নত হচ্ছে। যেমন, প্রথম দিকে আমরা মাত্র জ্ঞান প্রচার করতাম। কিন্তু বর্তমানে আমরা শিক্ষার্থীদের সামর্থ্যের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেই। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বেশি ও নব্যতাপ্রবর্তনের সামর্থ্য উচ্চ। আমাদের শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সুন্দর জীবন হবে।"
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছেন ইউয়ে ইয়াও স্কুলের একজন মালিক হিসেবে গর্ব করে। স্কুলের মালিক হিসেবে সে স্কুলের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে। সে ভবিষ্যতে একজন উপস্থাপিকা হতে চায়। বর্তমানে সে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এ সম্পর্কে সে বলে, "ক্লাস না-থাকলে আমি টিভি নিউজ ও কবিতা পড়ার অনুষ্ঠান দেখি। আমি পরিশ্রম করবো। আমি একজন বিশিষ্ট টিভি হোস্ট হওয়ার চেষ্টা করছি।"
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইউ ফান থং স্কুলের স্বতন্ত্র ক্লাসে প্রথম বারের মতো শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বর্তমানে সে স্কুল বেতার স্টেশনের একজন ছোট উপস্থাপিকা। এ সম্পর্কে সে বলে, "আমি হলাম স্বতন্ত্র ক্লাসে শিক্ষিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিই। আমাদের সহকর্মীরা আমাকে পছন্দ করে এবং আমাকে অনেক উত্সাহ দেয়। এর মাধ্যমে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।"
যুগের পরিবর্তনের প্রয়োজন পুরণ করার জন্য স্কুলটি নব্যতাপ্রবর্তন ধারণা ছাড়াও, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ক্লাস খুলেছে। শিক্ষক সুন জি হান বলেন, ইয়াংচেং প্রাথমিক স্কুলের বৈশিষ্ট্যময় ক্লাব আছে, হস্তলিপি, বেইজিং অপেরা, নাচ, ফুটবল, নাটক ও কম্পিউটার ক্লাস আছে। এসব ক্লাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এ সম্পর্কে সুন জি হান বলেন, "আমাদের স্কুলে এসব বৈশিষ্ট্যময় ক্লাস খোলার কারণ হলো শিক্ষার্থীদের বহুমুখী সামর্থ্য উন্নত করা। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বাধীন উন্নয়নের সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ধারণা ও চিন্তাভাবনা বৈশিষ্ট্যময় ক্লাসে প্রদর্শন করতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এসব ক্লাস পছন্দ করে।"
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী চেং ছিং ইউন'র বাবা-মা হলেন বেইজিং অপেরাপ্রেমী। ছিং ইউন ছোটবেলা থেকে বেইজিং অপেরা শিখতে শুরু করে। এ সম্পর্কে চেং ছিং ইউন বলে, "আমি বেইজিং অপেরা অনেক পছন্দ করি। কারণ বেইজিং অপেরা হলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। অপেরার অ্যাকশন ও পোষাক খুবই সুন্দর। আমাদের বেইজিং অপেরা ক্লাসরুম খুবই সুন্দর ও ভালো।"
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী লি ওয়েন হাও বিজ্ঞানপ্রেমী। স্কুলের বিজ্ঞান ক্লাস তাঁর আশা পুরণ করেছে। এ সম্পর্কে সে বলে, "আমাদের কম্পিউটার ক্লাসরুমে আমি কম্পিউটারসম্পর্কিত আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারি। আমি কম্পিউটারে ছবি আঁকা ও রোবোটিক প্রোগ্রাম করতে শিখেছি।"
লিয়াং লান চিয়ে বলেন, বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। তাদের স্কুল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "ভবিষ্যতে আমাদের স্কুল কৃত্রিম বুদ্ধির শিক্ষা উন্নয়ন করবে। আমরা আশা করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে উন্নয়নের প্রয়োজন পূরণ করবে এবং স্বদেশ ও জাতির সমৃদ্ধি বাস্তবায়নে নিজেদের অবদান রাখতে পারবে।"