সংবাদ পর্যালোচনা: জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত
  2019-09-28 16:06:35  cri

গত সোমবার, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে যোগ দেন বিশ্বনেতারা। এদিনের শীর্ষসম্মেলনে আবেগভরা ভাষণ দেন সুইডিশ তরুণী গ্রেটা থুনবার্গ। তার বক্তব্য আলোড়িত করে গোটা সম্মেলনকে। এদিকে, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

প্রিয় শ্রোতা বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

গত সোমবার, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের শীর্ষসম্মেলন যোগ দেন প্রায় ৬০জন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। আলোচ্যসূচীতে ছিল কয়লা থেকে সরে গিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা, বিপর্যয় প্রতিরোধ করা এবং তা মোকাবিলা করা, জলবায়ু সংক্রান্ত আর্থনীতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও শীর্ষসম্মেলনে যোগ দেন। যদিও তার এতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল না; কিন্তু তিনি হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হন।

সুইডেনের কিশোরী জলবায়ু সক্রিয়কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ জলবায়ু সংক্রান্ত শীর্ষসম্মেলনে আবেগভরা ভাষণ দেন। বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ''আমরা বিশাল মাত্রায় বিলুপ্তির পথে চলতে শুরু করেছি৷ আর আপনারা শুধু টাকা পয়সা আর অনন্তকাল ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রূপকথার কাহিনী শুনিয়ে যাচ্ছেন। কী সাহস আপনাদের!'' রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার অভিযোগ করে গ্রেটা আরও বলেন, ''আমাদের কাছে আপনারা ব্যর্থ হচ্ছেন৷ কিন্তু, তরুণ প্রজন্ম আপনাদের বিশ্বাসঘাতকতা বুঝতে পারছে৷'' গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন রোধে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে তার প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করে গ্রেটা। সুইডিশ কিশোরী বলে, এটা সম্পূর্ণ ভুল হচ্ছে। আমার এখানে থাকার কথা নয়। আমার এখন সমুদ্রের ওপারে স্কুলে থাকার কথা। অথচ আমাদের ছোটদের কাছে আশা নিতে এসেছেন আপনারা সবাই। কী সাহস আপনাদের? বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে ওই কিশোরী বলে, আপনাদের ফাঁকা বুলি দিয়ে আমার শৈশব, স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছেন, তারপরেও আমি একজন ভাগ্যবান। মানুষ ভুগছে, মৃত্যু হয়েছে, পুরো বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়েছে। আমরা একটা ব্যাপক ধংসের মুখে, আর আপনারা অর্থ, এবং আর্থিক বৃদ্ধির কথা বলছেন। এরপর ওই কিশোরী জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলে, আমরা আপনাদের ওপর নজর রাখবো। গ্রেটা থুনবার্গ এর নেতৃত্বে প্রতি শুক্রবার স্কুল ধর্মঘট দিয়ে পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী যুব আন্দোলন শুরু হয়েছে।

মূলত, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ধংসের পথে। অথচ বিশ্বনেতারা একের পর এক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন প্রজন্মকে ঠকিয়ে চলেছেন। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বনেতাদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন সুইডিশ পরিবেশবাদী। সোমবার নিউইয়র্কে একদিনব্যাপী জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে প্রায় ৬০ জন বিশ্ব নেতার উপস্থিতিতে আবেগময় উত্তেজিত কণ্ঠে নিজের বক্তব্য পেশ করেন ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরী।

প্রকৃতপক্ষে, জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব নিয়ে প্রায় সবার মনে সংশয় কেটে গেলেও সরকারি পর্যায়ে তার মোকাবিলা করার যথেষ্ট উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ চুক্তি, ঘোষণাপত্র, সদিচ্ছার মতো আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই গোটা প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে৷ অনেক রাজনৈতিক নেতা অর্থনৈতিক স্বার্থের দোহাই দিয়েও পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব কমিয়ে দেখাচ্ছেন৷ মোট ১৫ জন তরুণ জলবায়ু অ্যাকটিভিস্ট এ সম্মেলনে তাদের বক্তব্য রাখেন৷

এদিকে, বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বড়দের জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি নিয়ে একটি মিছিলে অংশ নিয়েছে। সুইডিশ কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গের ডাকে সংহতি জানিয়ে গত শুক্রবার বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ শিশু 'ক্লাইমেট স্ট্রাইক' বা 'জলবায়ু ধর্মঘট' নামের এই আয়োজনে অংশ নেয়। শিশুরা একদিন স্কুলে না গিয়ে বরং রাস্তায় জড়ো হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে।

সম্মেলনের শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস সম্মেলনের ফলাফল সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ তিনি আগেই বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে 'সুন্দর ভাষণের বদলে স্পষ্ট পদক্ষেপ' ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ গুতেরেস বলেন, শিল্পোন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশসহ মোট ৭৭টি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে স্পষ্ট উদ্যোগের অঙ্গীকার করেছে৷ এ অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040