১. নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭০ বছরে চীন বিশ্বের বৃহত্তম তথ্যযোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। বর্তমানে চীনের ফাইভ-জি নেটওয়ার্কসংশ্লিষ্ট পেটেন্টের সংখ্যা বিশ্বের যে-কোনো দেশের চেয়ে বেশি। আগামী বছর চীন আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর পরিসরে স্বাধীন ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করবে। সম্প্রতি চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মিয়াও ওয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয়ে এক প্রেস প্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চীনের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। তবে চীনের ফোর-জি বেস-স্টেশনের সংখ্যা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি। চীনের অপটিকল কেবলের মোট দৈর্ঘ্য ৪ কোটি ৫০ লাখ কিলোমিটারেরও বেশি; ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭০ কোটি পার্সন-টাইমস্-এর বেশি; নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫.৪ কোটিরও বেশি।
মিয়াও ওয়ে আরও বলেন, চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে উন্নয়নের সুযোগ ভাগাভাগি করতে এবং টেলিযোগাযোগ খাতের উন্মুক্তকরণের মান বাড়াতে ইচ্ছুক। এ ছাড়া চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে তথ্যের বিনিময় ও যোগাযোগ জোরদার করতে চায়।
২. বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র আরও দ্রুত চীনের বাজার হারাচ্ছে। আর এতে চূড়ান্ত বিচারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন জনগণ। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।
মার্কিন-চীন বাণিজ্য কমিশনের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়, চীন এখনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সেবার প্রধান রফতানিস্থল। তবে বাণিজ্যযুদ্ধ মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সম্পর্কে কেং শুয়াং বলেন, চীন এই রিপোর্ট লক্ষ্য করেছে। রিপোর্ট থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও বাণিজ্যমহল চীন-মার্কিন বাণিজ্য-সংঘর্ষ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন; তারা আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান চায়।
মুখপাত্র আরও বলেন, রিপোর্টের সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান আবারও প্রমাণ করেছে যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের পরিপূরক এবং দু'দেশের কল্যাণ পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। বেইজিং আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান ও কল্যাণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরে সচেষ্ট হবে। তা হলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ শুধু নয়, বিশ্ববাসী উপকৃত হবে।
৩. চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক জাতীয় কমিশন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য জাতীয় কমিশন, ইউএস চেম্বার অব কমার্স, ও মার্কিন বৈদেশিক সম্পর্ক কমিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক ভোজসভায় বলেন, সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক আলোচনা চালিয়ে যাবে বেইজিং।
ওয়াং ই বলেন, দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক মতভেদ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আলোচনার জন্য চীনের দরজা সবসময় খোলা থাকবে। তবে, আলোচনা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পূর্বশর্তে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দু'দেশ শুল্কের বিষয়ে কিছু ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়েছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে দু'দেশের মধ্যে উপমন্ত্রী পর্যায়ের গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। চীন-মার্কিন দ্বাদশ আর্থ-বাণিজ্যিক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় সাফল্য অর্জিত হবে বলেও বেইজিং আশা করে।
ওয়াং ই বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরকে বর্জন করার প্রয়োজন নেই; বরং দু'দেশের উচিত পরস্পরের সাহায্যকারী ও সহযোগী হওয়া। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজ নিজ উন্নয়ন-লক্ষ্য আছে। দু'দেশ পরস্পরকে পরিত্যাগ না-করে বরং সাহায্য করতে পারে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্থিতিশীল ও টেকসই বাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণবন্ত বাজার চীনের উন্নয়নের জন্য ভালো বৈদেশিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এখন পারস্পরিক কল্যাণ হাসিলের জন্য সহনশীল মন নিয়ে একে অন্যের উন্নয়নের অধিকারকে সম্মান করতে হবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজেদের তথা বিশ্বের কল্যাণের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার উপায় অন্বেষণ করা।
৪. সম্প্রতি 'বিশ্ব উত্পাদন সম্মেলন, ২০১৯'-এর সফলতা কামনা করে শুভেচ্ছাবাণী পাঠান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চীনের আনহুই প্রদেশের হফেই শহরে এ সম্মেলন শুরু হয়।
শুভেচ্ছাবাণীতে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বৈশ্বিক উত্পাদন-শিল্পে পরিবর্তন ঘটছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, একে অপরের কাছ থেকে শিখতে হবে, প্রযুক্তিগত ও শিল্প সংস্কারের জন্য নতুন রাউন্ডের সুযোগগুলি যৌথভাবে উপলব্ধি করতে হবে, উত্পাদন-শিল্পের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, এবং উত্পাদন-শিল্পের গুণগত পরিবর্তনের পক্ষে সোচ্চার হতে হবে।
প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, চীন উত্পাদন-শিল্পের বিকাশের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে উত্পাদন-শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চীন নতুন উত্পাদন-প্রযুক্তি বিকাশের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক এবং বৈশ্বিক উত্পাদন খাতে উচ্চমানের বিকাশের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখতে চায়।
৫. সম্প্রতি চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানি জার্মানির মিউনিখে এক অনুষ্ঠানে নিজের সর্বশেষ ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস 'মেট ৩০' মোবাইল ফোন উন্মোচন করে। এটি হুয়াওয়ে'র প্রথম দ্বিতীয় প্রজন্মের ফাইভ-জি মোবাইল ফোন।
হুয়াওয়ে'র ভোক্তাবিষয়ক সিইও ইয়ু ছেং তুং অনুষ্ঠানে জানান, 'মেট ৩০' ডিভাইসের প্রসেসর থাকছে 'কিরিন ৯৯০ ফাইভ-জি'। এ ছাড়াও, ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ সংস্করণ 'অ্যান্ড্রয়েড ১০' অপারেটিং সিস্টেমে। ডিভাইসটি ছয়টি রঙ-এ পাওয়া যাবে। ফোনে থাকবে তিনটি ক্যামেরা। এতে রয়েছে ৬.৮ ইঞ্চি ওয়াটারফল ডিসপ্লে।
৬. বেইজিং তাসিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এটি রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি বিমানযাত্রীদের সেবা দেবে। নতুন এই বিমানবন্দর বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই যৌথ উন্নয়ন-কার্যক্রমের নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
তাসিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেইজিংয়ের তাসিং বিভাগ ও হ্যপেই প্রদেশের লাংফাং শহরের সীমান্তে অবস্থিত। বিমানবন্দরটি তৈরিতে মোট বিনিয়োগ করা হয় ৪৫,০০০ কোটি ইউয়ান। বিশ্বের ১১২টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে এই বিমানবন্দরের সংযোগ স্থাপিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানবন্দর দিয়ে বার্ষিক গড়ে ১০ কোটি যাত্রী যাতায়াত করবে এবং ফ্লাইটের সংখ্যা হবে বার্ষিক গড়ে ৮ লাখ। ৭টি চীনা বিমান কোম্পানি ও ৮টি বিদেশি বিমান কোম্পানি এখন পর্যন্ত তাসিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
৭. নবম চীন-ভারত আর্থিক সংলাপ সম্প্রতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন চীনা উপ-অর্থমন্ত্রী চৌ চিয়া ই এবং ভারতের উপ-অর্থমন্ত্রী অতনু চক্রবর্তী। চীন ও ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আর্থিক তত্ত্বাবধান বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সংলাপে অংশ নেন।
সংলাপে দু'পক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও নীতি, বহুপক্ষীয় কাঠামোগত সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক পুঁজি ও আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময় করেছে। এতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যও অর্জিত হয়েছে।
সংলাপে চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী চৌ বলেন, ২০১৮ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উহান বৈঠক দু'দেশের সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নয়নের দিক্-নির্দেশনা দিয়েছিল। এবারের সংলাপ আর্থিক খাতে দু'দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মতৈক্য বাস্তবায়নের পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, এবারের সংলাপের লক্ষ্য মূলত তিনটি: এক. সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগত যোগাযোগ জোরদার করা, যা যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়ক; দুই. জি-২০ ও ব্রিক্স গ্রুপের সহযোগিতা জোরদার করা, যা বহুপক্ষবাদ, নতুন উন্নয়ন ব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সংস্থার উন্নয়নে কল্যাণকর হবে; তিন. দ্বিপাক্ষিক আর্থিক বাস্তব সহযোগিতা গভীরতর করা।
৮. ভারত সার্বিকভাবে ইলেক্ট্রনিক সিগারেটের উত্পাদন, আমদানি, রফতানি, বিক্রি ও বিজ্ঞাপনসহ এই পণ্যসংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি দেশটির মন্ত্রিসভা এই নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করে।
নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে প্রথমবার প্রায় ১৪০০ মার্কিন ডলার জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ড হবে। আর একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারীর সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৭ হাজার মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ জরিমানা হতে পারে।
৯. চলতি বছর ক্যাম্বোডিয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। তবে, ২০২০ সালে সেটা কমে দাঁড়াবে ৬.৮ শতাংশে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ পূর্বাভাস দিয়েছে।
(আলিমুল হক)