ভারতের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাক্ষী চিয়াং চিয়েনকুও
  2019-10-05 13:09:51  cri

যে কবি চীনা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় আবৃত্তি করতে পারেন তাকে চিয়াং চিয়েনকুও বলা হয়। তিনি হুনান প্রদেশের লংহুই কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। বয়স ৩৮ বছর। তিনি ভারতে ১২ বছর ধরে কাজ করছেন। কবিতায় যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, গত ১২ বছরে ভারতে তার কাজের অভিজ্ঞতা। চিয়াং চিয়েনকুও এখন কাহন আন্তর্জাতিক লজিস্টিক সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা ও বিপণন বিভাগের পরিচালক। কল্পনা করুন, এই সফল ব্যক্তিটি ৩০ বছর আগে ছিলেন হুনানের একটি গ্রামের শিশু!

গ্রামের ধান ক্ষেতের সামনে দাঁড়িয়ে চিয়াং চিয়েনকুও মায়ের হাত ধরে "চিয়েনকুও" নামটি নিয়ে কথা বলছে; যা গত শতাব্দীর প্রচলিত একটি নাম।

"আমি আশা করি আমার সন্তানরা ভবিষ্যতে সফলতা অর্জন করবে। তারা যখন বড় হবে, তারা দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারবে।"

"আমার ভাই চিয়াং চিয়েনহুয়া, আমার নাম চিয়াং চিয়েনকুও, এবং আমরা চীন তৈরি করছি। একত্রিত হওয়ার অর্থ দেশ গড়ে তোলা।"

চিয়াং চিয়েনকুও গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তবে সবচেয়ে গর্বের বিষয় তার পড়াশোনা নয়, তার সাহস!

"আমি যদি পরীক্ষা দেই, তবে ইংরেজিতে শীর্ষ নম্বর পাবো না। তবে, আমার সাহস কিন্তু অনেক বেশি। আমি যখন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলাম, তখন আমি একাই ইংরেজিতে কথা বলতাম।"

লংহুই গ্রাম সোনা উত্পাদন করে এবং এটি এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সোনা খননকারীদের উত্সাহ দিয়েছে।

চিয়াং বলেন

"আমি প্রতিবেশী দেশগুলিতে সোনার সন্ধান করেছিলাম। আমি যা পেয়েছি তা হলো, উন্নত পরিচালনার ধারণা, উন্নত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক প্রতিভা। তা আসল স্বর্ণ ও রূপা নয়, তবে, আসল স্বর্ণ ও রৌপ্যের চেয়ে ভালো।"

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে, চিয়াং চিয়েনকুও শেনচেনে কাজ করতে যান। তার, ব্যবসা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই চিয়াং চিয়েনকুও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হন।

১২ বছরে চিয়াং চিয়েনকুও'র পদচিহ্নগুলি পুরো ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি প্রচুর ভারতীয় বন্ধু বানিয়েছিলেন এবং কয়েক ডজন বিয়েতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের দুর্দান্ত উন্নয়নের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন,

"বিগত ১২ বছরে অবকাঠামোগুলোতে খুব পরিবর্তন হয়েছে। আমি যখন প্রথম সেখানে যাই, তখন খুব কমই কংক্রিটের রাস্তা ছিল। নয়া দিল্লিতে বেশ কয়েকটি রাস্তা ছিল। অন্যান্য শহরেও খুব কম রাস্তা ছিল। তারপরে, মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং মজুরি ক্ষেত্রে দুর্দান্ত পরিবর্তন আসে। গাড়ির সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়ে যায়।"

চিয়াং চিয়েনকুও বিশ্বাস করেন যে ভারতের দুর্দান্ত উন্নয়ন চীন সম্পর্কে অধ্যয়ন থেকে এসেছে।

চিয়াং বলেন,

"ভারতে বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং দেশে প্রচুর কাজও রয়েছে। ভারতে এখন ৭০ কোটিরও বেশি যুবক রয়েছেন। তাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রয়শক্তি বৃদ্ধির বিস্ফোরণ ঘটছে। অতএব, এখানে সীমাহীন ব্যবসায়ের সুযোগ রয়েছে।"

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনে ভারতের দূতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত "চীন-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রতিবেদন" অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং আমদানির বৃহত্তম উত্স হিসাবে প্রতিস্থাপন করে চীন। এই সুযোগটির দিকে তাকিয়ে, চিয়াং চিয়েনকুও এবং তার অংশীদার 'কাহান আন্তর্জাতিক লজিস্টিক পরিষেবা সংস্থা' প্রতিষ্ঠা করেছিল।

তিনি বলেন,

"আমি ভারতে ১২ বছর ধরে আছি এবং এই দেশের সব দিক নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করেছি। সুতরাং, আপনি যদি আমাদের পরিষেবা সেবা নেন, তাহলে অনেক সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।"

চিয়াং চিয়েনকুও কবিতা লিখতেও দারুণ পছন্দ করেন। ১২ বছরের অভিজ্ঞতাকে তিনি কবিতার ছন্দ দিয়ে রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো ভারতের দিওয়ালি সম্পর্কে।

তিনি বলেন,

"মাঝে মাঝে আমি কয়েকটা কবিতা লেখি। কেন জানি না, আমি অনুপ্রেরণা বোধ করি। তবে, এখন আমি এই অনুভূতিটি মোটেও লিখতে পারি না। আমি শুধু একটি পরিবেশ এবং আবেগের কারণেই লিখতে পারি।"

সারা বছর বিদেশে কাজ করে, এমন প্রত্যেকেই তার পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু বলতে পারে। চিয়াংয়ের স্ত্রী বলেন,

"তার চুল এখন অনেক কম। আমি জানি যে তার কাজ অনেক কঠিন। বাড়িতে আমি পরিবারের যত্ন নেওয়ার কাজ করি। যাতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন।"

তিনি ভারতে আরও তিন থেকে পাঁচ বছর কাজ করবেন এবং তারপরে একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি আশা করেন যে, চীনে উন্মুক্ত সংস্থাগুলি সফল হবে। যাতে আরও তরুণের কর্মসংস্থান হয়।

তিনি বলেন,

"প্রত্যেকের নিজের শহর নিয়ে গভীর অনুভূতি কাজ করে। সুতরাং আপনার যতক্ষণ ক্ষমতা রয়েছে, ততক্ষণ আপনি নিজের শহরে কিছু পরিবর্তন করার জন্য কাজ করতে পারেন।"

নিজের শহরে এক সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়ার পর চিয়াং চিয়েনকুও তাঁর কাজে ভারতে ফিরে যান। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চিয়াং চিয়েনকুও গভীরভাবে গর্বিত। তিনি বলেন,

"আমি আশা করি মাতৃভূমি আরও উন্নত হবে এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও উন্নত হবে। চীন ও ভারত প্রাচীনকাল থেকেই উভয়ের ভাই এবং দুই ভাইয়ের একে অপরকে সাহায্য করা উচিত। আমরা সর্বদা বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দুটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ। তাই দু'দেশের মধ্যে অনেক ভালো সহযোগিতা রয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য মজবুত ভিত্তি গড়তে চাই।"

(তৌহিদ/জিনিয়া)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040