চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র 'ইয়াং চিং ইউ'-র প্রিমিয়ার অনুষ্ঠান
  2019-09-26 14:45:45  cri

চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হলো বিশ্বের '১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনা'র ৮৮তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বেইজিংয়ে চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘরে 'ইয়াং চিং ইউ' নামে একটি চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। প্রিমিয়ারে অংশগ্রহণকারী দর্শক ও চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধের শহীদদের বংশধরগণ পৃথক পৃথকভাবে জানান, তারা ইতিহাসকে ভুলে না গিয়ে, শান্তির মূল্য দিয়ে বিপ্লবী শহীদদের চেতনা ও গল্প বাঁচিয়ে রাখবেন এবং অব্যাহতভাবে মহান যুদ্ধবিরোধী চেতনা সম্প্রসারণ করবেন। কোনো কোনো লোক চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক মহান শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।

৮৮ বছর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্বকে হতবাক করার '১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনা' ঘটে। তখন থেকে চীনের বিরুদ্ধে জাপান ১৪ বছরব্যাপী আগ্রাসনযুদ্ধে লিপ্ত হয়। '১৮ই সেপ্টেম্বর' ঘটনার দ্বিতীয় দিন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র মানচৌ প্রাদেশিক কমিটি অবিলম্বে জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ ঘোষণা করে এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে ইয়াং চিং ইউ ও চাও শাংচিকে পাঠায়। ১৪ বছরব্যাপী জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জাতির সকল জনগণ নিজের রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে পুরোপুরিভাবে জাপানি সেনাদের পরাজিত করেন।

১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে '১৮ই সেপ্টেম্বর ঘটনা'র ৮৮তম বার্ষিকী এবং 'ইয়াং চিং ইউ' নামে চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের অনুষ্ঠান সম্পর্কে জাদুঘরের উপ-প্রধান তোং লি সিন বলেন, 'চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘর হলো জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধের শহীদ এবং তাদের চেতনা প্রচার করার জায়গা। আমরা এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধের শহীদদের গল্প ছড়িয়ে দিতে চাই এবং তাদের মহান দেশপ্রেমের চেতনা সম্প্রচার করতে চাই। ১৮ই সেপ্টেম্বর আমাদের জাতীয় লজ্জা দিবস ও জাতীয় দুর্ঘটনা দিবস ছাড়াও, আমাদের জেগে ওঠার দিবস ও সতর্কতা দিবস। শান্তি সহজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে প্রতি বছরের ১৮ই সেপ্টেম্বর বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই ইতিহাস সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া এবং শান্তিতে বসবাসের সঙ্গে সঙ্গে বিপদকেও বিবেচনায় রাখা। ফলে আমাদের দেশ আরো ভালোভাবে গড়ে তোলা যাবে।'

'ইয়াং চিং ইউ' চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে চলচ্চিত্র পরিচালক লুই সিও লোং বলেন, এতে প্রধানত ইয়াং চিং ইউকে প্রতিনিধি হিসেবে চীনের উত্তর পূর্বাঞ্চলে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনাদের যুদ্ধ করার বীরত্বপূর্ণ গল্প তুলে ধরা হয়। এতে সত্যিকারভাবে ইয়াং চিং ইউ'র মতো চীনা সেনাদের সাহসী চেতনা ফুটিয়ে তোলা হয়।

'ইয়াং চিং ইউ' চলচ্চিত্র রচনার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে পরিচালক লুই সিও লোং বলেন, 'এ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আমাদের বংশধরগণকে আমাদের বীর ও শহীদের গল্প জানিয়ে দেওয়া। কখনও তাদেরকে ভুলে যাবে না।'

বেইজিংয়ের বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ চলচ্চিত্র উপভোগ করেন। বেইজিং ছেনচিংলুন হাই স্কুলের শিক্ষার্থী ফান শি ইয়ু বলেন, 'চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য আমার মনে গভীর দাগ কাটে। তা হলো জাপানি সৈন্যরা অবশেষে ইয়াং চিং ইউ'র লাশ কেটে ফেলার পর তার পেটে মাত্র ঘাসের মূল এবং সুতির পশম আবিষ্কার করে। শূন্যের নীচে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তিনি কোনো খাবার না খেয়ে জাপানি বাহিনীর সঙ্গে ‌একটানা যুদ্ধ করেন। তার অদম্য চেতনা আমাকে ব্যাপক সাহসী করে।'

একইদিনের অনুষ্ঠানে চীনের উত্তর পূর্বাঞ্চলে জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধের দু'জন সেনার সন্তানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে তারা তাদের বাবার গল্প স্মরণ করেন। তাদের মধ্যে ওয়াং মিন নামে একজন বলেন, 'চীনের উত্তর পূর্বের ওই প্রতিরোধযুদ্ধের সেনাদের সংগ্রামী চেতনা হলো মৃত্যুকে ভয় না করে দৃঢ়ভাবে নিজের জন্মস্থান ও মাতৃভূমিকে সুরক্ষা করা।'

চলচ্চিত্রের প্রধান কর্মকর্তারা এবং দর্শকেরা অনুষ্ঠানে বলেন, ইতিহাসের নতুন সূচনায় দাঁড়িয়ে '১৮ই সেপ্টেম্বর ঘটনা'র দিকে তাকিয়ে আমাদের ইতিহাস থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা এবং আমাদের চীনা স্বপ্নের জন্য সকল জাতির শক্তি সংগ্রহ করা উচিত্।

(লিলি/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040