চীনের সংখ্যালঘু প্রাচীন জাতিগুলোর মধ্যে সিপো অন্যতম। সিপো জাতির লোকসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার লিয়াও নিং প্রদেশে বাস করে এবং ৩৪ হাজার সিন চিয়াংয়ে বাস করে। হেই লং চিয়াং, চি লিন ও ইনার মঙ্গোলিয়ায় ৩ হাজার সিপো জাতির মানুষ আছে। বিংশ শতাব্দির আশির দশকে, উত্তর-পূর্ব চীনের তিনটি প্রদেশের সিপো জাতির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কারণ, আগে মান ও হান জাতি হিসেবে স্বীকৃত অনেক পরিবার আসলে ছিলো সিপো জাতির মানুষ ছিল। পরে তারা নিজেদের জাতিগত পরিচয় ঠিক করে নেয়।
সিপো জাতির নিজস্ব ভাষা আছে। তবে, উত্তর-পূর্ব চীন ও উত্তর-পশ্চিম চীনে বসবাসকারী সিপো জাতির ভাষা সময়ের সঙ্গে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়। বর্তমানে যারা উত্তর-পূর্ব চীনে বাস করে, তাদের ভাষা আর স্থানীয় হান ও মান জাতির ভাষা প্রায় একই। অন্যদিকে সিন চিয়াংয়ের সিপো জাতির মানুষেরা নিজেদের ভাষার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। এ জাতির লিখিত ভাষা ছিল। তবে, এখন তা হারিয়ে গেছে। সিন চিয়াংয়ের সিপো জাতির মানুষ উইঘুর, কাজাখ ভাষাও বলতে পারে। ১৯৪৭ সালে, সি পো জাতির মানুষ মান ভাষার ভিত্তিতে এক ধরনের অক্ষর সৃষ্টি করে এবং এ অক্ষর এখন স্বায়ত্তশাসিত এলাকার সরকারি পত্রে দেখা যায়।
সিপো উত্তর চীনে খুব আগে কৃষিকাজ শুরু করা একটি সংখ্যালঘু জাতি। ছিং রাজবংশ আমল থেকে সিপো জাতির মানুষ ধান চাষ শুরু করে এবং তখনকার চিঠিপত্রে এ ধানকে 'সিপো চাল' বলে উল্লেখ করা হতো। ১৭৬৬ সালে কিছু সিপো জাতির মানুষ উত্তর-পূর্ব চীন থেকে সিন চিয়াংয়ের ছাবুছার জেলায় স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে পশ্চিম ও পূর্ব চীনে সিপো জাতির মানুষ আলাদাভাবে বাস করে।
সিপো জাতির মানুষ কৃষিকাজ ছাড়া পশুপালন, মত্সচাষ, শিকারসহ নানা পেশায় জড়িত আছে। ছিং রাজবংশ থেকে যেখানে সিপো জাতির মানুষ আছে সেখানেই গড়ে ওঠে গ্রাম। সিনচিয়াংয়ের সি পো জাতিঅধুষ্যিত গ্রামকে ডাকা হয় 'নিউ লু'। নিউ লু যেমন অর্থনৈতিক ইউনিট তেমন যুদ্ধের ইউনিট। প্রায় দু'শ পরিবার নিয়ে একটি 'নিউ লু' গঠিত হয় এবং প্রতিটি নিউ লুর চারদিকে স্থাপন করা হয় বড় ও উঁচু দেওয়াল।
উত্তর-পূর্ব চীনের সিপো জাতির মানুষ চাল খায় এবং সিন চিয়াংয়ের সিপো জাতির মানুষ গম খায়।
সি পো জাতির মানুষ হান জাতির উত্সব পালন করে; যেমন, নববর্ষ, বসন্ত উত্সব ইত্যাদি। চান্দ্রপঞ্জিকার তৃতীয় ও সপ্তম মাসে তারা যথাক্রমে পালন করে 'মাছ পূজা' ও 'ফল পূজা' দিবস। নাম থেকে বোঝা যায় ওই দিন যথাক্রমে মাছ ও ফল দিয়ে পূজা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
সি পো জাতির খেলাধুলা নানা রকমের। তীরন্দাজি, ঘোড়দৌড়, স্কেটিং ও শিকার তাদের প্রিয়। এর মধ্যে তীরন্দাজি ও ঘোড়দৌড় সবচেয়ে বিখ্যাত। এ জাতির মানুষ ভাল ঘোড়া চালাতে ও তীর নিক্ষেপ করতে পারে বলে সুনাম আছে।
সিন চিয়াংয়ের সি পো জাতিঅধুষ্যিত এলাকা ছাবুছার জেলা তীরন্দাজির জন্য বিখ্যাত। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের স্কুলে অপেশাদার তীরন্দাজ দল গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে ছাবুছার জেলার তীরন্দাজ দল গঠিত হয়। পরবর্তী এক বছরে সিন চিয়াং তীরন্দাজ দল গঠিত হয়। এর সব কোচ ও ক্রীড়াবিদ সিপো জাতির মানুষ। গেল ২০ বছরে সিপো জাতির মানুষ দেশবিদেশে তীরন্দাজিতে বিভিন্ন প্রতিযোগিয়ায় জয়লাভ করে। (শিশির/আলিম/রুবি)