১. উদ্ভাবন চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি। দেশটির অর্থনীতি বর্তমানে 'নিউ নরমাল' বা 'নতুন স্বাভাবিক' পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক, চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্র, ও চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে।
'সৃজনশীল চীন: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি' শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীনের অর্থনীতি নতুনভাবে উন্নত হচ্ছে এবং দেশটির উদ্ভাবনের সামর্থ্যও দ্রুত বাড়ছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, বর্তমানে চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নয়নের পর্যায় থেকে উচ্চমানের উন্নয়নের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় নতুন চালিকাশক্তির সন্ধান ও প্রয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশার কথা, চীনের অর্থনীতিতে ক্রমাগত নতুন নতুন চালিকাশক্তি যোগ হচ্ছে।
২. গত অগাস্টে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে উন্নতিও ঘটেছে। আশা করা যায়, চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো অগাস্ট মাসে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নসম্পর্কিত প্রধান সূচকগুলো প্রকাশ করে। ব্যুরো জানায়, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ খাতে প্রবৃদ্ধির গতি ছিল দ্রুত এবং এসময় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও বেড়েছে।
ব্যুরো জানায়, চলতি বছর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশ খুব জটিল এবং বৈশ্বিক আর্থিক খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। আর চীন এখন আর্থিক খাতের কাঠামোগত বিন্যাসের পর্যায়ে রয়েছে। তাই অর্থনীতির ওপর খানিকটা চাপ আছে। তবে, চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় থাকার লক্ষণগুলো স্পষ্ট।
ব্যুরো আরও জানায়, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে ছিল। এসময় চীনের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা শিল্প এবং বাণিজ্য সেবা শিল্পের উন্নয়নের গতি ছিল দ্রুত।
৩. বিশ্বের ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চলে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে চীন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো, ও রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক মুদ্রা পরিচালনা ব্যুরো যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম সারিতে ছিল চীন। বৈশ্বিক বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদী প্রবণতা প্রবল হলেও, বিদেশে চীনের বিনিয়োগ স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে। অর্থনীতির বিশ্বায়নে চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিভিন্ন দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
৪. মার্কিন অর্থনীতিবিদ থমাস ফ্রিডম্যান সম্প্রতি 'নিউইয়র্ক টাইমস' পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলেছেন, চীনের হুয়াওয়েই কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গি উদার। ফলে এ কোম্পানির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সকল অভিযোগ ভবিষ্যতে যেমন ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবে, তেমনি আরও বেশি পশ্চিমা কোম্পানি হুয়াওয়েই'র অংশীদার হতে আগ্রহী হবে।
তিনি জানান, সম্প্রতি হুয়াওয়েইর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রেন চেনফেইয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। রেন চেন ফেই তাকে বলেছেন, হুয়াওয়েই মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সকল ইস্যুতে আলোচনা করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি, আগ্রহী মার্কিন কোম্পানিগুলোকে হুয়াওয়েই তার ফাইজ-জি প্লাটফর্মের পুরোটা ব্যবহার করতে দিতেও রাজি। সেক্ষেত্রে অনুমোদনপ্রাপ্ত মার্কিন কোম্পানি হুয়াওয়েইর সফ্টওয়ারের কোড পরিবর্তন করতে পারবে এবং এভাবে সেদেশের তথ্য-নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ফ্রিডম্যান হুয়াওয়েইর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে 'উদার' বলে আখ্যায়িত করেন।
৫. জাতিসংঘের জেনিভা কার্যালয় ও সুইজারল্যান্ডের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় নিযুক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ছেন সুই সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার নির্বাহী পরিষদের ৪২তম সম্মেলনে ১৩৯টি দেশের পক্ষে উন্নয়ন-অধিকার বাস্তবায়নে একটি প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রস্তাবে ছেন সুই বলেন, বিভিন্ন দেশের বাস্তবতা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের সফলতার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, উন্নয়ন মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও অর্জনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বে একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ ছড়িয়ে পড়ছে, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ক্ষতি করছে। বিশ্বে উন্নয়ন-অধিকার বাস্তবায়ন নির্ধারিত মানে হচ্ছে না। বিভিন্ন দেশের উচিত জাতিসংঘের 'উন্নয়ন-অধিকার ঘোষণা' অনুসরণ করে উন্নয়ন-অধিকার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেকের মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
ছেন সুই আরও বলেন, জনগণের সুখী জীবন হলো সর্বোচ্চ মানবাধিকার। মানবজাতিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দারিদ্র্যমুক্ত করতে ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বিভিন্ন দেশের উচিত 'জাতিসংঘ সনদ'-এ অবিচল থাকা, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো, অর্থনীতির সহনশীল ও টেকসই প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করা, জনগণকে উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করা, সকল মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা, এবং যৌথভাবে মানব জাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা।
৬. চীনের প্রায় সব অঞ্চল ডাক-সেবার আওতায় এসেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭০ বছরে দেশে ডাক-সেবার পরিমাণ ৭৭০০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। প্রায় সকল গ্রাম ডাক-সেবার আওতায় এসেছে। চীনের ভিতরের ডাক-যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং চীনের সঙ্গে বিদেশের ডাক-যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ করার কাজও প্রায় শেষের পথে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের জাতীয় ডাক ব্যুরো এ তথ্য জানায়।
ব্যুরো জানায়, ডাক-সেবার ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর একটি দেশ ও বাজার। চীনে যত পার্সেল বিতরণ করা হয়, তা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের মোট পার্সেলের চেয়েও বেশি।
৭. চীনে উত্পাদনক্ষেত্রের দুর্ঘটনা ও এ ধরনের দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা টানা ১৬ বছর ধরে কমেছে। এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে গুরুতর দুর্ঘটনা টানা ১৪ বছর এবং ভয়াবহ গুরুতর দুর্ঘটনা টানা ৮ বছর ধরে কমেছে। চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সুন হুয়াশান বেইজিংয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দেশজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার কারণে নিহত ও নিখোঁজ হওয়া লোকের সংখ্যা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে বছরপ্রতি ৭২০০ জনেরও বেশি ছিল। এ সংখ্যা ২০১৮ সালে এক হাজারের নীচে নেমে আসে। এখন পর্যন্ত 'আকস্মিক ঘটনা মোকাবিলা আইন' ও 'নিরাপদ উত্পাদন-আইন'সহ ৭০টিরও বেশি সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি জারি করা হয়েছে।
৮. চীনের ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের পঞ্চম প্রশাসক হ্য ই ছেং সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র 'রেডিও দা গ্রেট বে'-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেন, ম্যাকাও অব্যাহতভাবে 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থা' নীতি বাস্তবায়ন করবে এবং কুয়াংতুং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগর অঞ্চল সৃষ্টির সুযোগ কাজে লাগাবে।
হ্য ই ছেং জোর দিয়ে বলেন, 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থা' বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হলো সংবিধান ও মৌলিক আইন মেনে চলা। কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে দৃঢ়ভাবে এই নীতি বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, মূল ভূভাগের অধীনে ফিরে আসার আগে একসময় ম্যাকাও-এ অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বর্তমানে ম্যাকাও-এর অর্থনীতি উন্নত হয়েছে, জনগণের জীবনমান উন্নত হয়েছে, এবং জনগণের রাজনৈতিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়েছে।
হ্য ই ছেং আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ও মূল ভূভাগের জনগণের সমর্থন ছাড়া ম্যাকাও-এর উন্নয়ন সম্ভব না। ভবিষ্যতে ম্যাকাও মূল ভূভাগের সঙ্গে বিনিময় আরও জোরদার করবে।
৯. চীনের পারমাণবিক শক্তি শিল্প দ্রুত বিকাশের ধারা বজায় রেখেছে। বর্তমানে দেশটিতে মোট ৪৭টি পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র চালু রয়েছে এবং আরও ১১টি নির্মাণাধীন আছে। সম্প্রতি ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ৬৩তম অধিবেশনে এ সব তথ্য জানান চীনের জাতীয় পরমাণু শক্তি সংস্থার উপ-পরিচালক চিয়াং চিয়েন হুয়া।
১০. গেল অগাস্ট মাসে হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ, যা গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১২.৪ শতাংশ কম। অগাস্টে বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা করেছে ৩৫,৬৫৫ বার, যা গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ৩.৫ শতাংশ কম। তা ছাড়া, অগাস্টে বিমানবন্দর দিয়ে মালের পরিবহনও কমেছে গত বছরের চেয়ে ১১.৫ শতাংশ। সম্প্রতি হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা ব্যুরোর প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
১১. শ্রীলঙ্কায় লোটাস টিভি টাওয়ারের নির্মাণকাজ শেষ করেছে চীনা কোম্পানি। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে লঙ্কান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও কলম্বোয় চীনা রাষ্ট্রদূত ছেং ইউয়ানসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
লোটাস টিভি টাওয়ার হলো 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পে চীন আমদানি-রফতানি ব্যাংক বেশিরভাগ পুঁজি সরবরাহ করেছে। টাওয়ারটি ৩৫০ মিটার উঁচু এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ টিভি টাওয়ার।
১২. আগামী ৬ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান বাণিজ্যিক নীতিমালা সেদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬৫ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কনসুমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেল (সিএনবিসি)-র এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপটি চালানো হয় বড় আকারের তালিকাভুক্ত সংস্থা ও ব্যক্তি-মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের মধ্যে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬৫ শতাংশ কর্মকর্তা মনে করেন, আগামী ৬ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক নীতিমালা মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে; প্রায় ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বাণিজ্যিক নীতির কারণে তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বেড়ে যাবে; ২৫ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা বলেন, উত্পাদান-ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই তাদের পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়েছে।
এ ছাড়া, বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে উত্তরদাতারা মনে করেন।
(আলিমুল হক)