জাপানিদের চিন্তাধারা অনুযায়ী, সকালে প্রথমে মানুষের শরীর জাগিয়ে তোলা উচিত্। দেশটির অনেক কিন্ডারগার্টেনের খেলার মাঠ সমতল নয়, তা পর্বতের মতো। সেখানকার বনভূমিও কেউ ছাঁটেন না। কোনো কোনো জায়গায় খেলার মাঠে শাকসবজিও রোপণ করা হয়।
সারা জাপান তথা বিশ্বের খুব নামকরা একটি কিন্ডারগার্টেন হলো 'ফুজি কিন্ডারগার্টেন'। এর উদ্দেশ্য হলো: প্রকৃতি, শিশুদের প্রথম ক্লাস। এ খেলার মাঠের ডিজাইনারের লক্ষ্য হলো শিশুদেরকে কিছু প্রতিবন্ধকতায় ফেলে তাদের মধ্যে চিন্তার জায়গা যোগানো। কারণ অসুবিধার সম্মুখীন হলে জনগণ বিশেষ করে শিশুরা চিন্তা করতে শুরু করে। যদি খেলার মাঠ সমতল হয়, তাহলে তাদের চিন্তা করার কোনো দরকার হবে না। জাপানের কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষাদান নয়, বরং সব জায়গায় গাইড করা হয়ে থাকে।
তবে একজন জাপানি বাবা তার দেশের এমন শিক্ষাদানের পরিবেশ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আশেপাশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি বজায় রাখাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে শিশুদের ব্যক্তিত্বও প্রকাশিত হবে না।
দেখা যায়, উন্নত দেশ হিসেবে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জাপানের সমস্যাও আছে। সমষ্টিচেতনা হলো জাপান তথা গোটা পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির ভিত্তি। একদিকে যা সমাজের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে অন্যদিকে দুই দিকে ধারালো তলোয়ার হিসেবে যা জনগণের স্বাধীন চেতনার ক্ষেত্রে মতবিরোধ পাশে রেখে মতৈক্য অন্বেষণ করার দাবিও সৃষ্টি করে।
এক কথায় বলা যায়, জাপানের শিক্ষাদানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এমন এক ধরণের ভারসাম্য খুঁজে বের করা যায়; অর্থাত্, গ্রুপ ও ব্যক্তির ভারসাম্য, গাইড ও শিক্ষাদানের ভারসাম্য এবং নিয়ম ও প্রকৃতির ভারসাম্য ইত্যাদি।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে দেখা যায়, লাঞ্চের সময় প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক চৌ ই চুন প্রিন্সিপালের সঙ্গে ক্যান্টিনে আসেন। প্রিন্সিপাল বারবার শিশুদের প্লেটের দিকে হাত দেন, তবে বারবার শিশুরা তাকে খাবার দিতে অস্বীকার করেন। এই দৃশ্য দেখে দর্শকেরা হয়তো আশ্চর্য বোধ করেন। এসব শিশুরা কেন খাবার শেয়ার করছে না?
তারপর প্রিন্সিপাল চৌ ই চুনকে ব্যাখ্যা করেন যে, নিজের জিনিস সুরক্ষা করা হলো এক ধরনের শিক্ষা। শুধু খাবার নয়, কোনো ব্যক্তিগত জিনিস তারা ভাগ করে না। কিন্ডারগার্টেনে প্রত্যেক শিশুর নিজের একসেট জিনিস আছে, যেমন, তোয়ালে, ক্যাপ, স্কুল ব্যাগ, জুতাসহ আরো অনেক কিছু। তাদের প্রত্যেক জিনিসে ট্যাগ দিয়ে নিজের নাম লাগানো। একদিকে শেয়ার করতে শিক্ষাদান করা হয়, অন্যদিকে নিজের জিনিস সুরক্ষা করা হয়, এটি হলো জাপানের স্কুলে শিশুদের শিক্ষাদানের একটি বিষয়।
(লিলি/টুটুল)