ক্য লাও জাতির লোকসংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশের বেশি কুই চৌ প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের উ ছুয়ান ও তাও চেন নামের দুটি জেলায় বাস করে। বাকিরা কুই চৌ প্রদেশের বিশটি জেলা বা শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
ক্য লাও জাতির নানা শাখা ছিল এবং একেকটি শাখার নামও ভিন্ন ছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর, ক্য লাও জাতির নানা শাখার প্রতিনিধিরা আলোচনার মাধ্যমে ক্য লাও নাম নির্ধারণ করে। ১৯৮৩ সালে, জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আড়াই লাখ মানুষ ক্য লাও জাতির মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ক্য লাও জাতির নিজস্ব ভাষা আছে। উচ্চারণ ও ব্যাকরণের দিক থেকে দেখলে ক্য লাও ভাষার সঙ্গে চুয়াং ও তং জাতির ভাষার মিল আছে। ক্য লাও ভাষার আবার ৪টি আঞ্চলিক ভাষা আছে: কাও, হাহা, তুও লুও ও আও। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে রয়েছে বেশ পার্থক্য। এমনকি একটি জেলার ক্য লাও জাতির মানুষ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা বলে। এখন মাত্র ৬ হাজার ক্য লাও মানুষ ক্য লাও ভাষা মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন। বাকিরা হান ভাষা ব্যবহার করে। ক্য লাও জাতির লিখিত ভাষা নেই।
ক্য লাও জাতির মানুষ যারা পাহাড়ে বাস করে তারা ভুট্টা বেশ খায় এবং যারা উপত্যকা অঞ্চলে বাস করে তারা চাল খায়। তারা ঝাল ও টক স্বাদের খাবার এবং আঠালো ভাত খেতে পছন্দ করে। আঠালো ভাত বিশেষ ও মূল্যবান খাবার। উত্সবের সময় তারা আঠালো চালের পিঠা দিয়ে পূজা করে এবং অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করে।
তেল-চা তাদের প্রিয় একটি পানীয়। তেল দিয়ে চা পাতা ভেজে তারা পানি দিয়ে ফুটায়। তার পর এতে মেশানো হয় লবন, তিল, সয়া, চিনাবাদাম গুঁড়ো, গোলমরিচ ইত্যাদি। তারা ডিম, নুডলসসহ অন্যান্য জিনিসও এতে মেশায়।
গত শতাব্দীর ৮০-র দশক থেকে তাও চেন জেলার এক অঞ্চলে শুরু হয় অতিথি আপ্যায়নের বিশেষ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানকে ডাকা হয় 'সান ইয়াও থাই'। ইয়াও থাই মানে শেষ এবং সান মানে তিন। তার মানে অতিথিদেরকে তিন দফায় খাওয়াতে হয়। প্রথম দফায় চা ও নয় ধরনের মিষ্টি দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ৯টি খাবার ও মদ দেয়া হয়। তৃতীয় দফায় ৯ ধরনের মাংস দিয়ে তৈরি খাবার সরবরাহ করা হয়।
ক্য লাও জাতির মানুষ বসন্ত উত্সব পালন করে এবং এটা তাদের বৃহত্তম উত্সব। আঠালো চালের পিঠা দিয়ে পূজা করা এ সময় বিশেষ ঐতিহ্য। তবে পূজার অনুষ্ঠান কতোদিন চলবে এবং কতো আঠালো চালের পিঠা দিয়ে পূজা হবে তা জায়গাভেদে ভিন্ন হয়।
ছি সিন উত্সব তাদের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। ছি সিন মানে নতুন খাদ্য খাওয়া। তারা ফসল তোলার পর নতুন খাদ্য দিয়ে পূর্বপুরুষকে পূজা করে এবং পশুপাখি মুক্তি দেয়া এ উত্সবের একটি মূল অনুষ্ঠান। উত্সব পালন না করলে নতুন চাল খাওয়া নিষিদ্ধ ।
ছিং রাজবংশ আমল থেকে, ক্য লাও জাতির মানুষ পেশাদার কামার। ক্য লাও জাতির মানুষ শটগান তৈরি করতে পারে, যার পাল্লা ৭০ মিটার। কোন কোন ইতিহাস বইতে ক্য লাও জাতিকে সরাসরি 'কামার ক্য লাও' ডাকা হয়েছে। এখনও কুই চৌর কোন কোন জায়গায় ক্য লাও জাতির মানুষ কামার হিসেবে কাজ করে। (শিশির/আলিম/রুবি)