প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাবনা
  2019-09-18 09:57:38  cri

সুন্দর পরিবেশ, সবুজ পাহাড়, ও নীল আকাশ কার না পছন্দ! প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও এর ব্যতিক্রম নন। তিনি দেশের নদী ও পাহাড়, ঘাস ও গাছ তথা প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে সবসময় চিন্তা-ভাবনা করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে তিনি তার নিজস্ব ভাবনাও সময় সময় তুলে ধরেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর, পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এসেছেন। তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে নিজস্ব নতুন ধারণা, চিন্তাভাবনা ও কৌশলও উত্থাপন করেছেন।

"আজকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই আমি বেইজিংয়ের বায়ুর মান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিই; আশা করি, 'আজ ধোঁয়াশার তীব্রতা কম হবে'। এমনটা হলে আমরা যেমন বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে পারব, তেমনি বিদেশ থেকে আসা অতিথিরাও সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন।"

৫ বছর আগে, এপেক শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে, একটি রাষ্ট্রীয় ভোজসভায়, প্রেসিডেন্ট সি আন্তরিকভাবে এ কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি আরও বলেন,

"কেউ কেউ বলে, বেইজিংয়ের আকাশ শুধু এপেক সম্মেলন চলাকালে নীল থাকে। আমি আশা করি, আমাদের প্রচেষ্টায় এপেক শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন এই নীল আকাশ ভবিষ্যতেও দেখা যাবে। আমরা এখন সার্বিকভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ করছি। আশা করা যায়, একসময় বেইজিং তথা সারা চীনে সর্বদা আকাশ নীল থাকবে; পানি হবে পরিষ্কার; এবং সবুজ থাকবে পাহাড়। তখন আমাদের শিশুরা ভাল একটি পরিবেশে বড় হতে পারবে। এটাও চীনা স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।"

দেশের সাধারণ মানুষ যেন তাজা বাতাসে শ্বাস নিতে পারে, পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে পারে, এবং ১৪০ কোটি লোকসংখ্যার এই উন্নয়নশীল বড় দেশে উচ্চমানের ও টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত থাকে—প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সার্বক্ষণিক উদ্বেগের বিষয় এগুলো।

২০০৫ সালে সি চিন পিং তখনকার চে চিয়াং প্রদেশের সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পদক ছিলেন। তখন তিনি হু চৌ পরিদর্শনকালে প্রথমবারের মতো 'পরিষ্কার পানি ও সবুজ পাহাড় স্বর্ণ ও রুপার মতো সম্পদ' শীর্ষক ধারণা উত্থাপন করেন। পরে এ ধারণা সিপিসি'র ঊনবিংশ কংগ্রেসের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সিপিসি প্রশাসনের একটি অন্যতম মূলনীতিতে পরিণত হয়।

২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট সি কাজাখস্তানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেয়ার সময় জোর দিয়ে বলেন, চীন কখনও অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হতে দেবে না।

২০১২ সালের নভেম্বর মাসে 'সমাজতান্ত্রিক প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণ' সিপিসি'র গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রাকৃতিক সভ্যতার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, 'সুন্দর চীন ও প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণ' শীর্ষক ভাবনা সংবিধানে যুক্ত হয়।

মানুষের সুখী জীবন ও চীনা জাতির টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি সবুজ বিপ্লব চীনে চলছে। এ বিপ্লবের প্রভাবে উন্নয়নের ধারণা ও পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রেসিডেন্ট সি অনেকবার জোর দিয়ে বলেছেন, জিডিপি সাফল্যের একমাত্র সূচক নয়।

চলতি বছরের (২০১৯) 'দুই অধিবেশন' চলাকালে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইনার মঙ্গোলিয়ার প্রতিনিধিদলের পর্যালোচনায় অংশগ্রহণকালে বলেন,

"অর্থনীতি উন্নয়ন-সমস্যার সম্মুখীণ হলেও, প্রাকৃতিক পরিবেশের বিনিময়ে সে সমস্যার সমাধান চাওয়া হবে না। চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন বর্তমানে দ্রুতগতির পর্যায় থেকে উচ্চমানের পর্যায়ে পড়েছে। এখন দূষণনিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ-সংরক্ষণকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যে-কোনো অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"

পশ্চিম চীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে ছি লিয়ান পাহাড় সংরক্ষণ-সমস্যা একসময় গুরুতর ছিল। কান সু প্রদেশের প্রাকৃতিক সংরক্ষণকাজ নিয়ে প্রেসিডেন্ট সি অনেকবার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। চলতি বছরের (২০১৯) অগাস্ট মাসে, প্রেসিডেন্ট সি কান সু প্রদেশের ছি লিয়ান পাহাড়ের তা মা ইং তৃণভূমি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীন উচ্চমানের উন্নয়ন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং এখন উত্পাদন, জীবনপ্রণালী ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

গেল সাত বছরের দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখি, যতবার প্রেসিডেন্ট সি দেশের একটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন, ততবার প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বার বার যে-কথাটি বলেছেন, সেটি হচ্ছে:

"সুখী জীবনের জন্য সুন্দর পরিবেশ, উন্নত জীবিকা, সবুজ পাহাড়, নীল আকাশ জরুরি। নিজের চোখ রক্ষার মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা করতে হবে এবং নিজের জীবনের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশকে মূল্য দিতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো আচরণ সহ্য করা উচিত নয়।"

বায়ু, পানি ও জমির দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে চীনে চালু হয়েছে তিনটি বড় প্রকল্প। চীন বিশ্বের প্রথম উন্নয়নশীল দেশ যে বাতাসের ক্ষতিকর কণা পিএম২.৫-এর বিরুদ্ধে বড় আকারের নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম দূষিত পানি শোধনাগারও চীনে অবস্থিত।

সিপিসি'র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর দেশব্যাপী নতুন বন সৃষ্টি করা হয়েছে ৫০ কোটি মু। এই সময়কালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বনসম্পদ বেড়েছে চীনে। ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে দেশের পানির মান অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি, বিশ্বের প্রাকৃতিক সভ্যতার সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে নিজের অবদান রেখেছে চীন। চীন সক্রিয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় শরিক হয়েছে। প্যারিস জলবায়ুচুক্তি স্বাক্ষর, কার্যকর ও বাস্তবায়নে বাস্তব অবদান রেখেছে চীন। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর দিক দিয়ে চীন এগিয়ে আছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এক্ষেত্রে যতটা কমিয়েছে, চীনের ভাগ সেখানে অর্ধেক। চীন ২ হাজার কোটি ইউয়ানের 'জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা তহবিল' স্থাপন করেছে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা দিয়ে আসছে।

২০১৯ সালে বেইজিং বিশ্ব উদ্যান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, প্রেসিডেন্ট সি সারা বিশ্বকে একসাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন,

"প্রাকৃতিক পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেবল সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সমুদ্রদূষণ রোধ, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারব এবং জাতিসংঘের 'এজেন্ডা ২০৩০' টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে পারব। একসাথে চললে সবুজ উন্নয়নের ধারণা সবার মনে গভীর ছাপ ফেলবে এবং বিশ্বের প্রাকৃতিক সভ্যতা স্থিতিশীলভাবে উন্নত হবে।"

(শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040