চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ৬ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনে সরকারি সফর করেছেন। ১৩ বছরে চ্যান্সেলরের এটি দ্বাদশ চীন সফর। তিনি চীন সফরের ক্ষেত্রে পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এসময় চীন-জার্মান সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের কাঠামোর মধ্যে উচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে। আসুন, জার্মানিতে সিআরআইয়ের প্রতিবেদকের সঙ্গে আমরা হামবুর্গের চীন-জার্মান দ্বিভাষিক কিন্ডারগার্টেনের স্থানীয় চীন-জার্মান বেসরকারি এক্সচেঞ্জের গল্পটি শুনবো।
জার্মানির উত্তরের বন্দরশহর হামবুর্গ 'বিশ্বের প্রবেশদ্বার' হিসাবে পরিচিত। এটিও চীন ও ইউরোপের প্রবেশদ্বারও বটে। তা ছাড়া 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। শহরটিতে প্রথম চীন-জার্মান দ্বিভাষিক কিন্ডারগার্টেন হিসাবে, হামবুর্গ চীন-জার্মান কিন্ডারগার্টেন ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হয় এবং শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্ত শুরু করে। বর্তমানে এখানে ৬৫জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক তানয়া বলেন,
"বাচ্চাদের বাবা-মা'র মধ্যে চীন থেকে একজন এবং অন্যরা জার্মানি বা হামবুর্গে বসবাসকারী অন্যান্য দেশের মানুষ। রাশিয়া, স্পেন এবং অন্যান্য দেশের মানুষ আছে। আন্তর্জাতিক এই অবস্থা কিন্ডারগার্টেনের মিশনের জন্য বেশ উপযুক্ত; এটি বাচ্চাদের বহুসংস্কৃতির বসবাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।"
তানয়া বলছিলেন যে, বাচ্চাদের চাইনিজ ও জার্মান শেখানোর পাশাপাশি চীন ও জার্মান শিক্ষকরাও যথাসম্ভব অনেক কার্যক্রম চালিয়ে যান, যাতে তারা দুই দেশের জাতীয় পরিস্থিতি বুঝতে পারে এবং দুটি সংস্কৃতির প্রভাব অনুভব করতে পারে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে তাদের সমবয়সীদের সঙ্গে কীভাবে চলতে হয় তা শেখানো হয়।
"আমি মনে করি প্রতিটি সন্তানের এমন অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্ডারগার্টেন একটি ছোট্ট সমাজের মতো। প্রত্যেকে বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং চিন্তাভাবনা ও আচরণও বিভিন্ন রকম। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা একসঙ্গে শেখার ও খেলাধুলার কারণে তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগের দক্ষতা বিকাশ পায়। তাদের প্রশিক্ষণ হয় যা ভবিষ্যতে সমাজে যথাযথ অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে। শিশুরা যখন কিন্ডারগার্টেনে আসে, তারা নতুন বন্ধু তৈরি করতে, নতুন জিনিসের সংস্পর্শে আসতে, নতুন আবিষ্কার করতে, শৈশবের আনন্দ উপভোগ করতে এবং দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমস্যা সমাধানের পথ শিখতে চায়। আমরা আশা করি, শিশুরা বুঝতে পারবে যে বৈচিত্র্য তাদের দিগন্তকে উন্মুক্ত করে দেয়। এটি একটি সুযোগ। তাই ভয় পাওয়ার পরিবর্তে তাকে তারা আলিঙ্গন করতে পারবে।"
একজন মা সাংবাদিকদের জানান, আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে তিনি চীন-জার্মান দ্বিভাষিক কিন্ডারগার্টেনে পাঠিয়েছেন। তার কারণ হলো, শিশুর জন্ম হয়েছে সিঙ্গাপুরে। তিনি আশা করেন যে, তার মেয়ে এশিয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে এবং নিজের পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হবে।
"আমি আশা করি নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারব। আমার যখন ১৪ বছর বয়স, তখন আমি আমার শহর ছেড়ে চলে এসেছি। আমার শিকড় এখন জার্মানিতে হলেও আমি এই কিন্ডারগার্টেনে স্বদেশের অনুভূতিটি পেয়েছি। কেবল চীন ও জার্মানি থেকে আসা শিশুই নয়, তারা আন্তর্জাতিক মানের। আমি সত্যিই এই বহু সংস্কৃতির পরিবেশ পছন্দ করি। আমার সন্তান কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার পর থেকে এই জায়গা সম্পর্কে আমার অনুভূতি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষভাবে ভালো। আমার মেয়ে প্রতিদিন সকালে কিন্ডারগার্টেনে যাবার অপেক্ষায় থাকে। আমার মেয়ে যখন বাড়িতে আসে, সে তার বন্ধুদের সম্পর্কে কথা বলতে খুব আনন্দ পায়।"
চাইনিজ-জার্মান পরিবারের একজন মা আরও বিশ্বাস করেন যে, কিন্ডারগার্টেন কেবল চীনা ভাষা শেখার জন্যই নতুন সুযোগ দেয়া না, পাশাপাশি চীনা সংস্কৃতি অনুভবের জন্য একটি নতুন জানালা খুলে ধরেছে।
"আমি চীনের স্থানীয়। আমার বাচ্চারা জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করলেও, আমি আশা করি তারা তাদের মাতৃভাষা বলার পাশাপাশি সাবলীলভাবে চীনা ভাষায় কথা বলতে পারবে। চীনা ভাষা বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষাই নয়, ভাষাটি সংস্কৃতি বোঝার ভিত্তিও বটে। একজন চীনা হিসেবে, আমাদের সংস্কৃতি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীনের যে অর্জন, তাতে আমি গর্বিত। আমি চাই না যে, শিশুরা এ সম্পর্কে সব কিছু জানার সুযোগ মিস করুক।"
এটি বিশ্বাস করা হয় যে চীন-জার্মান দ্বিভাষিক কিন্ডারগার্টেনগুলো বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক বেশি বার্তাবাহক আসবে যারা চীন-জার্মান বন্ধুত্বের উত্তরাধিকারী হবেন এবং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের জন্য আরও দৃঢ় সেতু নির্মাণ করবে।