কোস্টারিকা জাতীয় স্টেডিয়ামের মোট আয়তন এক লাখ বর্গমিটার এবং এর দশর্ক-ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজারেরও বেশি। চীনের আনহুই প্রদেশের বৈশেদিক আর্থ-বাণিজ্যিক নির্মাণ গোষ্ঠী স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছে। ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের মার্চ মাসে স্টেডিয়ামটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রত্যাশার চেয়ে চার মাস আগেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আলবা কুইসাদা রদ্রিগেজ এ ঘটনার সাক্ষী। কোস্টারিকা'র এ জাতীয় সম্পদ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি কোস্টারিকার ক্রীড়ামহলে কাজ করছি ৩১ বছর ধরে। জাতীয় স্টেডিয়াম নির্মাণ কর্মগ্রুপের একজন সদস্য হিসেবে আমি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছি। আমি তখন প্রতিদিন নির্মাণস্থলে যেতাম। আমার চোখের সামনে স্টেডিয়ামটি আস্তে আস্তে নির্মিত হয়েছে। স্টেডিয়ামটি খুবই সুন্দর ও চমত্কার। আপনি যখন নিজের চোখে অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করবেন, তার মূল্য সম্পর্কেও উপলব্ধি করতে পারবেন।"
চীনের উহান শহরের চংনান স্থাপত্য নকশা একাডেমি স্টেডিয়ামটির নকশা করেছে। চমত্কার নকশা, পরিষ্কার ও সহজ-সরল আকৃতি, ২৯৯ মিটারের ইস্পাতের খিলান—সবই অবাক করার মতো। স্টেডিয়ামের ভিতরে সাদা পালতোলা মূর্তি আছে, যেটির নাম 'সমুদ্রে পালতোলা'। আলবা বলেন, "আমার মনে হয়, স্টেডিয়ামটি হলো একটি সম্পদ। এটি খুবই সুন্দর ও চমত্কার। আবার আমার মনে হয়, স্টেডিয়ামটি একটি শিল্প। স্টেডিয়ামের কাঠামো খুবই সুদৃঢ় ও সুন্দর। যখন বিদেশিরা স্টেডিয়ামটি দেখেন, তখন তাঁরা অবাক হন এই ভেবে যে, মধ্য-আমেরিকা এতো উচ্চমানের স্থাপত্য তৈরি করতে পারে।"
কোস্টারিকার আগের জাতীয় স্টেডিয়ামের ধারণ-ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার। আগের স্টেডিয়ামটি ফুটবল অনুরাগীদের প্রয়োজন পূরণে অক্ষম ছিল। বর্তমান স্টেডিয়ামটি নির্মিত হবার পর সে চাহিদার অনেকটা পূরণ হয়েছে। দেশটির ফুটবলের উন্নয়নেও এই স্টেডিয়াম ভূমিকা রাখছে। আলবা বলেন, "এ স্টেডিয়াম আমাদের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ। স্টেডিয়াম শুধু যে কোস্টারিকা ও চীনা জনগণের মৈত্রীর প্রতীক, তা নয়; বরং এটি আমাদের দেশের বৃহত্তম স্থাপত্য। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এর তাত্পর্য অনস্বীকার্য। স্টেডিয়ামটি এখন দু'দেশের মৈত্রীর নিদর্শন। এ ছাড়াও, আমাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রের অনেক বাস্তব সমস্যা সমাধান করেছে এটি। আমাদের আগের জাতীয় স্টেডিয়াম খুবই ছোট ছিল, যা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারত না। বর্তমান স্টেডিয়ামের ধারণ-ক্ষমতা অনেক বেশি। বিশেষ করে ফুটবল অনুরাগীদের জন্য এই ক্ষমতা বৃদ্ধি ছিল একটি যথার্থ সুসংবাদ। যখন আমাদের জাতীয় ফুটবল দল জাতীয় স্টেডিয়ামে কোনো খেলায় অংশ নেয়, তখন গোটা স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।"
চীনের সহায়তায় নির্মিত কোস্টারিকা জাতীয় স্টেডিয়াম দেশটির রাজধানী সান হোসের ল্যান্ডমার্ক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। স্টেডিয়ামটি মধ্য-আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের পর্যটকদের কাছেও একটি আকর্ষণীয় স্থান। এ সম্পর্কে আলবা বলেন, "জাতীয় স্টেডিয়াম শুধু যে সবচেয়ে আধুনিক, তা নয়; বরং সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্যও বটে। যে-কোনো দিক থেকে দেখলে স্টেডিয়ামটি খুবই সন্দর। আমাদের জন্মস্থান আলাজুয়েলা প্রদেশের গ্রামে যখন উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তখন আমরা পাহাড়ে উঠে স্টেডিয়াম দেখি। বিশেষ রাতে আলোতে স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য অসাধারণ।"
কোস্টারিকার তিন জন সরকারি কর্মকর্তা ও চার জন বেসরকারি ব্যক্তি নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছিল শুরুর দিকেই। এই কমিটির কাজ ছিল স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজ করা। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি জায়গায় ক্রীড়া ব্যুরোসহ সরকারি বিভাগ ও বিভিন্ন সমিতির কার্যালয় নির্মিত হয়েছে। ফুটবল, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, তীরন্দাজি ও দাবা ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় স্টেডিয়ামে। টিকিট ও ভাড়ার আয় স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। আলবা হলেন পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য। এ সম্পর্কে বলেন, "আমরা গেমস ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখি। কোস্টারিকার অধিকাংশ বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা বিখ্যাত কন্ঠশিল্পীর কনসার্ট এখানে আয়োজন করা হয়। আমরা এসব অনুষ্ঠান বা কনসার্টে বিক্রিত টিকেটের আয় দিয়ে স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করি।"
গত মে মাসে চীনের চিয়াংসি প্রদেশের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও প্রযুক্তি সহযোগিতা কোম্পানি কোস্টারিকার জাতীয় স্টেডিয়াম আপগ্রেডেশানের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। আপগ্রেডেশানের মধ্যে থাকবে নির্মাণ কাঠামো উন্নয়ন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন। ভবিষ্যতে কোস্টারিকা জাতীয় স্টেডিয়াম স্থানীয় ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা পালন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করেন । (মুক্তা/আলিম/রুবী)