চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভ বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক
  2019-09-15 19:20:49  cri
চীনের উদ্যোগে বিশ্ববাণিজ্য অবকাঠামো নির্মাণ বা বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভ-বিআরআইয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত ওই সেমিনারে অংশ নেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারের মন্ত্রী, সচিব, কূটনীতিকসহ ভারত ও চীনের বিশ্লেষকরা।

দিনব্যাপী সেমিনারে চীন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব বাণিজ্যের নতুন ধারণা বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভে বাংলাদেশ যুক্ত হলে কী কী সুবিধা পেতে পারে এবং বাংলাদেশকে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে তা নিয়ে বিশদ আলোচনরা করেন অংশগ্রহণকারীরা। সেমিনারে অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী ও পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার পক্ষে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, এতে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে।

চীনের এই বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভকে আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করে সিপিডি। সংস্থাটির পক্ষে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খানম, সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান। তারা বলেন, বিআরআইয়ে যুক্ত হলে বাংলাদেশের লাভ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ বিষয়ে কতগুলো চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে।

যথাযথভাবে প্রকল্প বিশ্লেষণ না করে এ উদ্যোগে যুক্ত হলে বাংলাদেশ ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সেইসঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে পারে বাংলাদেশ।

একটা বিষয় স্পষ্ট, চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভে যোগদান যে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে সে বিষয়ে সরকার ও বেসরকারি মহল একমত। তাই বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভে বাংলদেশ কতটুকু লাভবান হবে, কীভাবে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করবে সে বিষয়ে সরকার যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা দেশের মানুষের।

এদিকে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ আলোচ্য হয়ে এসেছে আরেকটি খবর সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় স্থান পাওয়া। তবে একই সঙ্গে বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও না থাকায় অনেকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর হয়েছেন।

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন এ তালিকাটি প্রকাশ করেছে। ২০২০ সালের এ তালিকায় স্থান পেয়েছে বিশ্বের ৯২টি দেশের ১ হাজার ৪০০টি বিশ্ববিদ্যালয়। এ তালিকায় এবারো প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় ১ হাজার ১ নম্বরে রয়েছে। যেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারতের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ৩০০ থেকে ১ হাজারের মধ্যে। এমনকি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানের অবস্থাও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।

অথচ ২০১৬ সালেও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮০০'র মধ্যে। তাহলে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন এই অবনতি?

টাইমস সাময়িকীর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণা সংখ্যা ও সুনাম, আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতাসহ যে পাঁচটি মানদণ্ডে এ র‌্যাংকিং করা হয় তার কোনোটাতেই ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশের ক্ষেত্রে ২১ দশমিক ৭ স্কোর করলেও বর্তমানে এ স্কোর কমে দাঁড়িয়েছে ১৬তে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর শূণ্য। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে টাইমস সাময়িকী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও স্বীকার করেছেন, যে সব সূচকের ভিত্তিতে এ র‌্যাংকিং করা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের ঘাটতি রয়েছে। এ সব সূচকে ভালো করতে না পারলে র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামসহ অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, স্বজনপ্রীতির কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মান পড়ে যাওয়া, গবেষণা না করা এবং তহবিল বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দৈন্য দশা বলে মনে করেন তারা। বিশ্বের এক হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না থাকাকে অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে দ্রুত এর প্রতিকার করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান বিশ্লেষকরা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040