বন্ধুরা, ১৩ সেপ্টেম্বর হলো চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী দিবস। দিবসটির নাম 'মধ্য শরত দিবস'। প্রাচীনকাল থেকেই এদিবসটিতে চীনা পরিবারের সবাই একত্রে মিলিত হয়ে চাঁদ উপভোগ করেন এবং একটি বিশেষ খাবার খান। এ খাবারটির নাম 'মুন কেক'।
টুটুল ভাই, তুমি মুন কেক খেয়েছো?
টুটুল: হ্যাঁ। অবশ্যই খেয়েছি। অনেক ভালো লাগে আমার। মুন কেক আসলে বাংলাদেশের এক ধরনের মিষ্টির মত, অনেক সুস্বাদু।...
আকাশ: এদিন রাতে, চাঁদ অনেক গোলাকার থাকে। এজন্য দিনটিতে পরিবারের সবার একত্রিত হবার একটি বিশেষ অর্থ আছে। আমরা এ দিবস উপলক্ষে আমাদের সকল শ্রোতাবন্ধুদের সুস্থ, সুন্দর ও সুখী জীবন কামনা করি। সবাই ভালো থাকবেন সবসময়, আনন্দে থাকবেন।
টুটুল: বন্ধুরা, আসলে মধ্য শরত দিবস এখন বিশ্বের অনেক জায়গায় উদযাপন করা হয়। চলুন, শোনা যাক, অস্ট্রেলিয়ায় এ উত্সব এবার কিভাবে উদযাপন করা হয়, কেমন?
বন্ধুরা, মধ্য শরত দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন, অ্যাডিলেডসহ বিভিন্ন জায়গায় চীনা কমিউনিটি বিভিন্ন ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান পালন করে। এভাবে তারা চীনের ঐতিহ্যবাহী এ দিবসটি উদযাপন করে। স্থানীয় সময় ৮ সেপ্টেম্বর, চীনা সাংবাদিক অ্যাডিলেডের 'দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া মধ্য শরত দিবস সাংস্কৃতিক ও শিল্প উত্সব'-এ দেখেন যে, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জাতি চীনের দিবসগুলোকে অনেক বেশি পছন্দ করেন। বসন্ত উত্সব ছাড়াও মধ্য শরত দিবসটিও তারা ভীষণ পছন্দ করেন।
অ্যাডিলেডে অনেকে এ দিবসের অর্থ ও রীতিনীতি জানান। তারা বলেন, এ দিবসটিতে মুন কেক খেতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এই দিবসটিকে 'মুন কেক দিবস'ও বলে থাকেন। ৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় একটি মধ্য শরত দিবস উদযাপনী অনুষ্ঠানে দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় বহুসংস্কৃতি কমিটির চেয়ারম্যান নরম্যান আচুয়েলর জানান, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় মধ্য শরত দিবস সব জনগণের অভিন্ন উত্সবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,
আকাশ: বিশ্বের সব চীনারা হচ্ছেন একটি পরিবার। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার চীনারা মধ্য শরত দিবস উদযাপনের মাধ্যমে পরিবারের পুনর্মিলন ও পরিবারের সবার সুখ কামনা করেন। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার অনেক জাতি একমত পোষণ করেন। লোকজন মধ্য শরত দিবসের মাধ্যমে চীনকে আরো জানতে পারেন।
টুটুল: অ্যাডিলেডের বাসিন্দা ম্যাডাম মেরি ফুলহাম চীনের গান ও নাচ অনেক পছন্দ করেন। তিনি মনে করেন, বসন্ত উত্সবের পর মধ্য শরত দিবসটিও অস্ট্রেলিয়ার সব জাতির পছন্দের চীনা উত্সবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,
আকাশ: মধ্য শরত দিবস শুধু চীনারাই পছন্দ করেন না, অন্য কমিউনিটিতেও এর প্রভাব রয়েছে। তা আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে। আমরা একসাথে শরত এবং ফসলকে স্বাগত জানাই, এবং সবাই একত্রিত হয়ে সুন্দর সময় কাটাই। তাতে চীনা সংস্কৃতির উন্মুক্ততা ও সহনশীলতা দেখা যায়।
দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা লি ওয়েন সিও জানান, চীনের সংস্কৃতি দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় বহুসংস্কৃতি কমিউনিটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চীনা ভাষার প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, চীনা উত্সবও অস্ট্রেলীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বলেন,
আকাশ: গত ৪০ বছরে, চীনা কমিউনিটি হচ্ছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় কমিউনিটি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। আমি অনেকবার এতে অংশ নিয়েছি। আমি ভাবছি তার একটি কারণ চীন হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এ ছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে চীনা সংস্কৃতি আমাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে।
মধ্য শরত দিবসটি স্থানীয়ভাবে সম্প্রচার করার জন্য দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় সরকারের বহুসংস্কৃতি বিভাগ প্রথমবারের মত ২০১৯ সালে চীনা মধ্য শরত দিবস শিল্প উত্সবের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে। তা স্থানীয়ভাবে একটি বিরল ঘটনা।
অ্যাডিলেডের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ওয়াং সু হচ্ছে একজন পুরনো প্রবাসী চীনা। তিনি গর্বের সাথে বলেন,
আকাশ: আমি বিদেশে দীর্ঘ সময় থাকলেও, চীনের সম্পর্ক, রক্তের সংযোগ কখনো আলাদা হবে না। আমরা প্রবাসী চীনারা বিদেশে একত্রিত হয়ে মধ্য শরত দিবসটি উদযাপন করি, এবং একসাথে জন্মস্থানকে মিস করি। আমাদের এ অনুভূতি অন্যান্য জাতির কমিউনিটিতেও প্রভাব ফেলছে।
টুটুল ভাই, এ গল্প শুনে আমি আমার জন্মস্থানকেও মিস করা শুরু করেছি।
আমার খুবই সৌভাগ্য যে, এ বছরের মধ্য শরত দিবস আমি আমার মা বাবার সাথে একত্রে উদযাপন করতে পারি। ভাই, এ উত্সব নিয়ে তোমার অনুভূতি কি?
টুটুল:…আবার আমরা আমাদের সব শ্রোতাবন্ধুদের ও সবার পরিবারের সুস্থ, সুন্দর ও সুখী জীবন কামনা করছি।