স্বাস্থ্যকর চীন গড়ে তোলায় চীনের বিভিন্ন মহলের সক্রিয় অংশগ্রহণ
  2019-09-06 14:34:11  cri
স্বাস্থ্যকর চীন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি চীন 'রাষ্ট্রীয় পরিষদের স্বাস্থ্যকর চীন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্পর্কিত মতামত' এবং 'স্বাস্থ্যকর চীন কার্যক্রম ২০১৯-২০৩০'সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্য জনজীবনের সঙ্গে জড়িত, স্বাস্থ্য দেশের উন্নয়নের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। চীনের অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের স্বাস্থ্যকে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। স্বাস্থ্যকর চীন কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্যকর চীন নির্মাণকে ত্বরান্বিত করা ইতোমধ্যে চীনা জনগণের অভিন্ন সমঝোতায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যকর চীন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় চীনের সমাজের বিভিন্ন মহলও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের দুই শতাধিক বিখ্যাত চিকিত্সক চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুইলিন শহরের সিংআন জেলায় এসে চার দিনব্যাপী বড় আকারের দাতব্য অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। যাতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর ভালো গ্রামের নির্মাণ ত্বরান্বিত, স্থানীয় লোকজনকে চিকিত্সা সেবা দেওয়া যায়।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ দাতব্য অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারী চিকিত্সকের কাছে যাবো, তাদের অভিজ্ঞাত এবং তাদের অনুভূতি থেকে চীনের গণস্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানাবো।

এবার সিং আন দাতব্য কার্যক্রম চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের অনুমোদনে এবং 'চীনা হৃদয়' দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে আয়োজন করা হয়।

প্রথমে আপনাদের সিং আন জেলার ইতিহাস জানিয়ে দিচ্ছি। এতে করে আপনারা বুঝতে পারবেন, কেন এ কার্যক্রম এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিং আন জেলা চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, জেলাটি আঞ্চলিক রাজধানী কুইলিন শহরের উত্তর দিকে।

সিং আন জেলায় ৬টি থানা ও ৪টি গ্রাম আছে। জেলায় হান জাতি, চুয়াং জাতি, ইয়াও জাতি, মিয়াও জাতিসহ ১৭টি জাতির মানুষের বসবাস। জেলার মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ।

সিং আন জেলাটি খুব সুন্দর। জেলাটির ২২০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস রয়েছে। সিং আন কুয়াং সি'র সবচেয়ে প্রাচীন জেলাগুলোর অন্যতম।

এখানে চীনের ইয়াংসি নদী এবং চুজিয়াং নদী মিলিত হয়েছে। আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জেলাটি চীনের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯৩৪ সালে চীনের লাল ফৌজের লং মার্চের সময় এখানে সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ হয়েছিল। চীনে এই যুদ্ধ 'সিয়াংজিয়াং যুদ্ধ' নামে পরিচিত। বলা যায়, সিং আন জেলা চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

চীনাদের কাছে, লং মার্চের চেতনা হচ্ছে- পরিশ্রম করা ও নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিরলস চেষ্টা করা। লংমার্চ প্রত্যেক প্রজন্মের চীনাদের উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে।

এবার বেইজিং থেকে আসা চিকিত্সকরা তাদের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি ও সেবা স্থানীয়দের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছেন, যা লংমার্চের চেতনার একটি অংশ। তারা জেলার ১২টি গ্রামে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে চিকিত্সা সেবা দেন। জানা গেছে, কুয়াংসিতে চলতি বছর 'চীনা হৃদয়' সংস্থাটি চতুর্থ বারের মতো এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

চীনের চোখ হাসপাতালের হাড় রোগ বিভাগের পরিচালক চু ইয়ু ছি বেশ কয়েকবার এমন দাতব্য কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এ কার্যক্রম খুব তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন,

এ অনুষ্ঠান খুব প্রয়োজনীয়। আয়োজক সংস্থাও খুব অভিজ্ঞ। তারা অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে প্রথমে স্থানীয় চিকিত্সা চাহিদা সম্পর্কে জেনে নেন। এভাবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞ সেখানে পাঠানো হয়। যে স্থানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে, যে স্থান সবচেয়ে দূরে অবস্থিত, যে স্থান চিকিত্সার সবচেয়ে অভাব, আমরা সেখানে যাই। সত্যি, এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের জরুরি চিকিত্সা চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। যখন একজনের স্বাস্থ্য চেতনা বৃদ্ধি পায়, তখন তার পরিবারও এ থেকে লাভবান হয়।

বেইজিংয়ের চিকিত্সা বিশেষজ্ঞদের সিং আনে যাওয়ার সুখবর অনেক আগেই স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ৬৩ বছর বয়সী মিস ইন সিং আন জেলার অধিবাসী। সেদিন অনেক ভোরে তিনি জেলার কেন্দ্রীয় হাসপাতালে আসেন।

তিনি বলেন,

আমার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সমস্যা আছে। এবার বেইজিংয়ের চিকিত্সকের দেখাতে চাই। বড় হাসপাতালের চিকিত্সকের মান অনেক ভালো, তাদের সেবা পেয়ে আমি খুব খুশি। এখন আমার কোমর ব্যথার সমস্যা আছে। বেইজিংয়ের চিকিত্সক আমার কোমর ব্যথার কারণ সনাক্ত করেছেন। তাকে অনেক ধন্যবাদ। কারণ, এর আগে কোমর ব্যথার কারণ না জানায় অনেক ভুল ওষুধ খেয়েছি। এবার আমার মন স্থির হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনকে চিকিত্সা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় চিকিত্সা সংস্থাকে সাহায্য করা এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন জোরদার করাও চিকিত্সকদের অন্যতম দায়িত্ব। বেইজিংয়ের ইমার্জেন্সি জেনারেল হাসপাতালের চিকিত্সক ছিন হুয়াই হাই মনে করেন,

বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা দেওয়া এবং তৃণমূল পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর সঙ্গে বিনিময়ের পর, আমার মনে হয় 'প্রযুক্তি খাতের অভাবমোচন' খুবই জরুরি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের হাসপাতালগুলো উন্নয়নের অনেক সুযোগ আছে। তাই আমরা তাদেরকে খুব ভালো প্রস্তাব দিতে পারি, তা তাদের কাজে খুবই সহায়ক। তাই আমার মনে হয় এ অনুষ্ঠান আরও বেশি আয়োজন করা উচিত। বড় হাসপাতালের চিকিত্সক তৃণমূল পর্যায়ের হাসপাতালকে সাহায্য দিতে পারে, তৃণমূল পর্যায়ের চিকিত্সক বড় হাসপাতালে গিয়ে প্রশিক্ষণও নিতে পারে। এভাবে তাদের চিকিত্সার মান উন্নত করা যায়। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের হাসপাতালগুলো রোগীদের আরও ভালো সেবা দিতে পারবে।

সুস্বাস্থ্য জনগণের সুখী ও নিরাপদ অনুভূতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সমাজের উন্নয়ন স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ছাড়া সম্ভব নয়। সিং আন জেলার কমিউনিস্ট পার্টির উপ সম্পাদক হুয়াং সিয়াং কুই মনে করেন, এমন অনুষ্ঠান জেলায় সক্রিয় প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন,

'চীনা হৃদয়' দাতব্য কার্যক্রম সিং আন জেলায় এসেছে। তাদের বিনামূল্যের চিকিত্সা পাহাড়ি এলাকার জনগণের জন্য খুব ভালো সুযোগ। এতে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের চিকিত্সা সংস্থার মান উন্নয়ন, দারিদ্রমুক্তকরণ এবং জনগণের স্বাস্থ্য নিশ্চয়তায় সহযোগিতা করেছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় 'স্বাস্থ্যকর চীন' গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। সুস্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। সমাজ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে নাগরিকের সুস্বাস্থ্য। নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য সমৃদ্ধ দেশ ও জাতির প্রতীক। তাই 'স্বাস্থ্যকর চীন' চীনাদের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা। এই দাতব্য কার্যক্রম সেই আকাঙ্ক্ষারই বহিঃপ্রকাশ।

এবারের দাতব্য অনুষ্ঠান 'চীনা হৃদয়' নামের দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত হয়। এই সংস্থাটি চীনের রেডক্রস সোসাইটি ও বেইজিং রেড ক্রস তহবিলের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল। ২০০৮ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পর এই পর্যন্ত চীনের সীমান্ত ও সংখ্যালঘু জাতি-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বড় আকারের দাতব্য কার্যক্রমের আয়োজন করেছে। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি সংস্থাটি স্থানীয় হাসপাতালগুলোকে আধুনিক সরঞ্জাম ও আর্থিক সহযোগিতা দেয়, চিকিত্সাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয় এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনাসভার আয়োজন করে। তাদের উদ্দেশ্য, স্থানীয় চিকিত্সার মান উন্নত করা এবং স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করা। বিগত ১১ বছরে, ৩০ সহস্রাধিক চিকিত্সক তাদের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন; ৫ লাখেরও বেশি মানুষ এতে লাভবান হয়েছেন। এসব কার্যক্রমে প্রায় ৩০ কোটি ইউয়ান অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। স্থানীয় চিকিত্সকদের ৬ শতাধিক বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বাস্তবতা হলো, সামাজিক অগ্রগতি কখনওই একজনের শক্তিতে অর্জিত হয় না। এজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত শক্তি। এমন দাতব্য কার্যক্রম আয়োজন সম্ভব হয়েছে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। এই উদ্যোগ- ভালোবাসা ও সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। ভালোবাসা শুধুমাত্র বিলিয়ে দিলেই বাড়ে- তাইনা বন্ধুরা!

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040