চীনে সালার জাতির লোকসংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজারের বেশি। তারা মূলত ছিংহাই প্রদেশের সুন হুয়া সালার স্বায়ত্তশাসিত এলাকা, হুয়া লং হুই স্বায়ত্তশাসিত এলাকা, কানসু প্রদেশের চি সি শান পাও আন, তুং সিয়াং, ও সালার স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় বাস করে। ছিংহাই প্রদেশের সিনিং শহর, কয়েকটি জেলা, কানসু প্রদেশের সিয়াও হ্য জেলা, সিনচিয়াংয়ের ইনিং জেলা, ও উরুমুছি শহরে সালার জাতির মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ৯৪.৫ শতাংশ সালার জাতির মানুষ ছিংহাই ও কানসু—এই দুটি প্রদেশে বাস করে।
সালাররা অনেক আগে থেকে নিজেদের 'সালার' বলে ডাকে। 'সালার' অর্থ 'তরবারি ও বর্শাধারী মানুষ'। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে এ নাম ব্যবহার করা শুরু হয়।
সালার জাতির মৌখিক ভাষা আছে, লিখিত ভাষা নেই। উইগুর, উজবেক, তুর্কি ও কাজাখসহ বিভিন্ন জাতির ভাষার ব্যাকরণ সালার জাতির ব্যাকরণের মতোই। ইসলাম ধর্মের প্রভাবে, সালার ভাষায় রয়েছে কিছু আরবি ও ফার্সি শব্দ। দীর্ঘকাল ধরে তিব্বতি, হান ও হুই জাতির সঙ্গে দেওয়া-নেওয়ার ফলে, সালার ভাষায় এ তিনটি জাতির ভাষা থেকেও কিছু শব্দ গ্রহণ করা হয়েছে।
সালার জাতিঅধ্যুষিত ছিংহাই প্রদেশের সুন হুয়া জেলার মোট লোকসংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশ সংখ্যালঘু জাতির মানুষ। এখানে বাস করে সালার, তিব্বতি, হুই, থুসহ ১৪টি সংখ্যালঘু জাতির মানুষ। এর মধ্যে ৬২.৪ শতাংশ আবার সালার জাতির মানুষ।
সালার জাতিঅধ্যুষিত এলাকার আবহাওয়া মধ্যপন্থী এবং জলবায়ু বৃষ্টিময়। উর্বর জমি প্রচুর এবং এখানে চাষ করা হয় নানান ধরনের খাদ্যশস্য। এ অঞ্চলের অন্য একটি নাম হল 'ফলের ভূমি'। এখানে নাশপাতি, এপ্রিকট, আখরোট, আঙ্গুর, তরমুজ, খরমুজ, আপেলসহ নানা ফল পাওয়া যায়। সালাররা ভাল মরিচ চাষ করতে পারে।
চীনের যে ১০টি সংখ্যালঘু জাতি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, সালার সেগুলোর একটি। সালার জাতিঅধ্যুষিত প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি মসজিদ থাকে।
সালাররা বাড়িকে ডাকে 'জুয়াং কুও'। বাড়িতে প্রতিটি পরিবারের নিজ নিজ আঙিনা আছে। দুটি ঈদ ও পবিত্র দিবস তাদের বৃহত্তম তিনটি দিবস।
রমজান মাসের আগের মাসের ১৫তম দিনের রাতে, তারা বায়রাত দিবস পালন করে। রমজান মাসের দ্বাদশ দিন, ফাতিমা দিবস পালন করা হয়। শুধু নারীরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
দুধ চা এবং গমের চা সালারদের প্রিয় পানীয়। প্রতিটি পরিবারে এ চা তৈরি করা হয়। ভাজা গম গুড়া করে তাতে লবণ ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে গমের চা তৈরি করা হয়। এই চা থেকে কফির মতো। তারা ফল গাছের পাতা দিয়েও চা তৈরি করে।
সালার জাতির কিছু প্রথা: সালার পরিবারে গেলে মালিককে প্রথমে শুভেচ্ছা জানাতে হয়। মালিকের কাছ থেকে চা গ্রহণ করলে চায়ের কাপ হাতের মাঝখানে রাখতে হয়। রুটি খাওয়ার আগে ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করে নিতে হয়। খাওয়ার সময়, নারীরা প্রথমে খাবার পরিবারের প্রবীণ পুরুষকে দেয়, তারপর সবাই খেতে পারে। অতিথিদের পানি চেয়ে খেতে হয়; নিজে থেকে পানি তুলে নেওয়া অভদ্রতা।
সন্তানের জন্ম সালারদের কাছে বড় একটি ব্যাপার। বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর দ্বিতীয় দিন মসজিদের ইমাম তার নাম রাখেন। নাম অবশ্যই আরবি হতে হবে। তৃতীয় দিন, সন্তানের মায়ের বাবা-মা শিশুকে দেখতে আসেন। তাদেরকে মেয়ের স্বামী ও শিশুর জন্য নতুন পোশাক এবং শিশুর দাদা-দাদির জন্য জুতা ও মোজা কিনতে হয়। সঙ্গে তারা একটি মেষও নিয়ে আসেন। এটা দস্তুর। (শিশির/আলিম/রুবি)