চীনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব : রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন আশার আলো
  2019-09-01 19:12:06  cri
২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে এ বিষয়ে হতাশা নেমে আসে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে না চাওয়ার জন্য বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারকেই দায়ী করে। এমনই এক পরিস্থিতিতে ঢাকায় আসেন চীনের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লি চিমিং। ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন চীনা দূত। ওই সময় রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা সমস্যায় চীনের সহায়তা কামনা করেন।

পরদিন ২৯ আগস্ট চীনা রাষ্ট্রদূত মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। ওই সাক্ষাতে লি চিমিং জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রদূত জানান, চীন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ রাজি থাকলে চীন এ বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করতেও প্রস্তুত বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

চীনের রাষ্ট্রদূতের এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। একই দিন বিদেশি কূটনৈতিকদের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। চীনের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকেও বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের এ ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরাও। তবে জটজলদি এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাবকে কাজে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের পরামর্শ তার। বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার যত পেছাবে বাংলাদেশকে ততই এগুতে হবে। আর নিশ্চিতভাবে এ সংকট সমাধানে চীন একটা বড় প্রভাবক হবে।

এদিকে, ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন প্রতিবেশি দেশ ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। ৩১ আগস্ট আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। এতে ঠাঁই হয়েছে রাজ্যের ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষের। আর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ। এদের বেশির ভাগই বাংলা ভাষী। বাদ পড়া এই নাগরিকরা এখন কোথায় যাবে? ভারত সরকারকি বিদেশি গণ্য করে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখবে না বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাইবে-এমন একটা জল্পনা-কল্পন দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।

তবে, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বরাবর বলে আসছে আসামে এনআরসি'র বিষয়টি সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। গত মাসে ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরের সময় সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্পষ্ট করেন। কিন্তু তারপরেও সংশয় কাটছে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা ১৯৭১ সালের আগে যারা সেখানে গেছে তাদেরই শুধু নাগরিকপঞ্জিতে রাখা হয়েছে। তবে, তার অনেক আগে থেকেই সেখানে বসবাস করা বহু মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোদ বিজেপি সরকারই এ তালিকার পুনঃযাচাইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার কথা ভাবছে।

বাংলাদেশের জন্য আশঙ্কার কথা আসামের এই নাগরিকত্ব নির্ধারণ হিন্দু-মুসলামানের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প উস্কে দিতে পারে। যার প্রভাব সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশেও পড়তে পারে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, আসামে এনআরসি থেকে বাদ পড়া মানুষদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করেন। সাম্প্রতিক সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে ঢাকাকে আশ্বস্ত করার কথাও জানান তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সবশেষ ১ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, আসামে এনআরসির বিষয়টি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। এখনই এ বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি বলে জানান তিনি।

বিশ্লেষকরাও বলছেন, আসামের এনআরসি নিয়ে এখনি বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। তবে, এ মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হবার কারণ না থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য এখনি বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040