পুলাং জাতির লোকসংখ্যা এক লাখের চেয়ে একটু কম। এ জাতির মানুষ মূলত ইয়ুননান প্রদেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে বাস করে। এর মধ্যে ৩০ হাজার মানুষ সিসুয়াংবাননা তাই স্বায়ত্তশাসিত এলাকার মেং হাই জেলায় বাস করে এবং ৫০ হাজার মানুষ ইয়ুননান প্রদেশের অন্য কয়েকটি জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। পুলাং পাহাড়ের পুলাং উপজেলা চীনে বৃহত্তম পুলাংঅধ্যুষিত এলাকা। পুলাং এলাকায় হানি, লাহু, ওয়াসহ নানা জাতির মানুষও বাস করে। পুলাং জাতির যারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তারাও হান, তাই, হানি, লাহু জাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে চলে।
একসময় পুলাং জাতির মানুষ নিজেদের নানান নামে ডাকতো। সিসুয়াংবাননার পুলাং জাতির মানুষ নিজেদের ডাকতো পুলাং বা পালাং বলে। অন্যান্য জায়গায় এ জাতির মানুষ নিজেদের ডাকতো উ, আওয়া, ওয়া, ওয়েং হংসহ নানা নামে। বিভিন্ন জাতিও ভিন্ন নামে পুলাং জাতির মানুষকে ডাকতো, যেমন: তাই জাতি তাদেরকে লা বলে ডাকতো, লাহু জাতি তাদেরকে খাপা বা খাপু বলে ডাকতো ইত্যাদি। বর্তমানে সরকারিভাবে 'পুলাং' নামটি স্বীকৃত।
পুলাং ভাষার দুটি শাখা আছে। এগুলো হচ্ছে পুলাং ও আওয়া। পুলাং জাতির কোনো লিখিত ভাষা নেই। নিজেদের ভাষা ছাড়া তাদের কেউ কেউ হান, তাই, ও ওয়া জাতির ভাষা বলতে পারে।
পুলাং জাতিঅধ্যুষিত এলাকা কর্কটক্রান্তির কাছাকাছি পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। তাদের এলাকায় উচ্চতা অনুযায়ী আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। শীতকালের তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হয়।
প্রচুর বৃষ্টিপাত ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এখানে নানা ধরনের ফল পাওয়া যায়, যেমন: আম, কাঠাল, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যদি। প্রাচীনকাল থেকেই পুলাং জাতির মানুষ চা চাষ করে আসছে। পুলাংঅধ্যুষিত এলাকা তাই ইয়ুননানের প্রধান চা উত্পাদনকেন্দ্রগুলোর অন্যতম। পু'র চা ও মেং খু চা'র মূল উত্পাদন-এলাকা এখানে।
অন্য পাহাড়ি জাতির মতো পুলাং জাতির উন্নয়ন পাহাড়ের ওপর নির্ভর করে। তারা মূলত শিকার করে ও পাহাড়ে জুম পদ্ধতিতে ফসল চাষ করে।
পুলাংরা গ্রামের ভূমি কয়েক ভাগে ভাগ করে এবং পালাক্রমে এ ভূমিতে চাষ করে। এভাবে তারা অনিয়ন্ত্রিত গাছ-কাটা এড়ায়।
পুলাং জাতির টেক্সটাইল প্রযুক্তি উন্নতমানের। তারা নিজেদের তৈরি কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে। তাদের কাপড় মূলত কালো ও নীল রঙয়ের হয়। এখনও কোনো কোনো পুলাং গ্রামে নারীরা কার্পাস চাষ করে ও কাপড় বুনে।
পুলাং জাতির মানুষ টক খাবার খেতে পছন্দ করে। টক মাছ, শাকসবজি ও বাশঁ খায় তারা। তারা এমনকি টক স্বদের চা-ও খায়। তাজা চা-পাতা তিন-চার মাস ম্যারিনেটেড করে খায় তারা।
চা পুলাং জাতির মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। তারা চা খাবার ও ওষুধে ব্যবহার করে। অতিথি আপ্যায়নে চা অত্যাবশ্যক। প্রতিবছরের বসন্তকালে পুলাংরা চা-দেবতার পূজা করে।
পুলাং জাতি মানুষের পারিবারিক নাম নেই। তারা মায়ের নামের পর একটি নাম যোগ করে সন্তানের নাম রাখে। সব ছেলের নামের শুরুতে 'ইয়ান' এবং মেয়ের নামের শুরুতে 'ই' শব্দটি যোগ করা হয়।
পুলাং জাতির উত্সব মূলত ধর্মীয় উত্সব। সিসুয়াংবাননা, লাং ছাং ও সুয়াং চিয়াং এলাকার পুলাং জাতির মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করে। পানি বিচ্ছুরণ উত্সব তাদের নববর্ষের উত্সব।
পুলাং জাতির গ্রামের কাছাকাছি বনের কিছু অংশ আলাদাভাবে চিহ্নিত করা থাকে। বনের এই অংশ পবিত্র। এখানে পূজার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পূজার সময় ছাড়া বাকি সময় এখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। (শিশির/আলিম/রুবি)