চীনের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, চীনের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং ১৯ থেকে ২২ অগাস্ট পর্যায়ক্রমে কানসু প্রদেশের চিও ছুয়ান, চিয়া ইউয়ু কুয়ান, ছাং ইয়ে, উ ওয়ে, লান চৌসহ নানা জায়গায় পরিদর্শন করেন।
১৯ অগাস্ট সকালে সি চিন পিং বিশেষ বিমানযোগে বেইজিং থেকে ছিও ছুয়ান শহরের তুন হুয়াং এলাকায় পৌঁছান। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই তিনি সর্বপ্রথম তুন হুয়াং মুকাও গুহায় পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও গবেষণাকাজ পর্যবেক্ষণ করেন। উপস্থিত জনতা প্রেসিডেন্টকে দেখে এগিয়ে আসেন এবং তাকে শুভেচ্ছা জানান। প্রেসিডেন্টও হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং কয়েকজনের সঙ্গে করমর্দন করেন, কথা বলেন।
তুন হুয়াং মুকাও গুহা পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মূল্যবান ঐতিহ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মুকাও গুহার স্থাপত্য, পেইন্টিং এবং দেত্তয়াল-চিত্রের সংরক্ষণকাজ জোরদার করতে হবে। আর এ কাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তু হুয়াং গবেষণালয়ে প্রেসিডেন্ট বিশেষজ্ঞ, পন্ডিত ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন,
"তুন হুয়াং সংস্কৃতি চীনা জাতির সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতীক। কেবল আত্মবিশ্বাসী সভ্যতা নিজের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার পাশাপাশি অন্যান্য শ্রেষ্ঠ সভ্যতা থেকে গ্রহণ করতে পারে। চীনের উত্কৃষ্ট ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণে সম্ভাব্য সবধরনের সহায়তা দিতে হবে। চীনের ঐতিহ্যকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন; বিশেষ করে, অপেরা, লোকজ শিল্পকলা, অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ইত্যাদি সংরক্ষণে অধিক মনোযোগ দিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, নিজেদের সভ্যতার পাশাপাশি, অন্য সভ্যতা থেকেও আলো নিতে হবে। চীনের সংস্কৃতির নয়া জাগরণের জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ানো জরুরি। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে তু হুয়াং গবেষণাসেবা দিতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনগণের সমঝোতা জোরদার করতে পারে।
২০ অগাস্ট চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কানসু প্রদেশে তাঁর পরিদর্শন-কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এ দিন তিনি চিয়াইয়ুকুয়ান ভবনে উঠে হ্য সি করিডোর পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখান। তারপর তিনি কানসু প্রদেশের চাং ইয়ে শহরে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
চিয়াইয়ুকুয়ান পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং এখানকার মহাপ্রাচীর সংরক্ষণ ও ঐতিহাসিক সংস্কৃতি সম্প্রসারণে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের কাজের খোঁজ-খবর নেন। তিনি বলেন,
"আমাদের উচিত চীনের ঐতিহাসিক সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা। গোটা বিশ্বে চীনের কথা উঠলেই মহাপ্রাচীরের কথাও ওঠে। মহাপ্রাচীর, ইয়াংচি নদী ও ইয়েলো রিভার চীন ও চীনা জাতির প্রতীক। আমাদের ভালোভাবে এসব সংরক্ষণ করতে হবে।"
শহীদ মিনারে তিনি বলেন, শহীদদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। তাদের বিপ্লবী ও পরিশ্রমী চেতনা থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। তিনি বলেন,
"রেড আর্মির ইতিহাস এবং যারা এর জন্য প্রাণ দান করেন তাদের কথা সবসময় আমার মনে পড়ে। তারা সিপিসি, লাং মার্চ ও রেড আর্মির চেতনার প্রতীক। আমরা তাদের গল্প ভালোভাবে বলব এবং তাদের চেতনা ও লং মার্চের চেতনা ধারণ করব।"
ওই দিন বিকেলে সি চিন পিং চাং ইয়ে শহরের শান তান পেই লি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। বিদ্যালয়টি নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত সমাজকর্মী রিউই অ্যালে ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিক্ষাকেন্দ্র থেকে অনেক গুণী মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করেন। সেখানে স্থানীয়দের পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সি চিন পিং খোঁজ-খবর নেন।
২১ অগাস্ট প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্য সি করিডোরের পূর্বাঞ্চলীয় উ ওয়েই শহর পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে অন্য জায়গা থেকে স্থানান্তরিত অধিবাসীদের দেখতে যান। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় প্রকৃতি সংরক্ষণকাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এদিন সকালে সি চিন পিং সর্বপ্রথমে ফু মিন গ্রাম পরিদর্শন করেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও খেলাধুলা দেখে তিনি খুব আনন্দিত হন। তিনি বলেন, 'ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা করা উচিত। এসব অঞ্চলের শিশুরা যদি সবসময় ফুটবল খেলে, তাহলে চীনের ফুটবল এশিয়া, এমনকি বিশ্বমানে পৌঁছাবে।'
গ্রামের বাসিন্দা লি'র পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতে সি চিন পিং বলেন, 'আপনারা আনন্দিত হলে আমরাও আনন্দিত। সিপিসির মূলনীতি জনসাধারণের স্বার্থে কাজ করা। আপনাদের সুখী জীবন নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।'
ফু মিন গ্রাম ছেড়ে সি চিন পিং কু লাং জেলার পা পু শা বণাঞ্চল পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে নিয়োজিত কর্মীদের কাজের খোঁজ-খবর নেন। তাদের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন,
"চীন সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার পর, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণকাজের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। আপনারা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সবাইকে আপনাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। চীনদেশে আরও সুন্দর দৃশ্য সৃষ্টি করতে আপনারা অব্যাহতভাবে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমি আশা করি।"
এরপর প্রেসিডেন্ট লান চৌ শহরের হুয়াং হ্য নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থানপার খোঁজ-খবর নেন। তিনি বলেন, কানসু প্রদেশ হুয়াং হ্য নদী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ অঞ্চল এবং হুয়াং হ্য নদীর উচ্চ অববাহিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার, পানি ও ভূমি সংরক্ষণ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বহন করতে হবে। হুয়াং হ্য নদীর পানির মান বজায় রাখতে কানসুর স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
২২ অগাস্ট বিকেলে তিনি কানসুর সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটি ও প্রাদেশিক সরকারের কর্ম-প্রতিবেদন শোনেন। এসময় তিনি বলেন, চীনের নতুন যুগে বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও সিপিসি'র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের চেতনার আলোকে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। সবার উচিত দারিদ্র্যবিমোচন, গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা, ও গণজীবিকা উন্নয়নের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা চালানো। (শিশির/আলিম/রুবি)