২০১৮ সালে চীনে শিল্প-রোবট উত্পন্ন হয়েছে প্রায় দেড় লাখ (অর্থ-কড়ি; ২৪ অগাস্ট ২০১৯)
  2019-08-24 15:10:09  cri

১. ২০১৮ সালে চীনের শিল্প-রোবট বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট উত্পাদন হয় ১৪৮,০০০টি, যা একই সময়ে গোটা বিশ্বের উত্পাদিত মোট শিল্প-রোবটের ৩৮ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি 'বিশ্ব রোবট সম্মেলন, ২০১৯'-এ এই তথ্য জানান চীনের একজন সরকারি কর্মকর্তা।

৭ দিনব্যাপী সম্মেলনটি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ৭ শতাংধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের সর্বশেষ রোবট-প্রযুক্তিসহ অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে বিশ্বে শিল্প-রোবটের বাজার ছিল মন্দা এবং এর কারণ হচ্ছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। তবে, ভবিষ্যতে এই বাজার আবার চাঙ্গা হবে বলেও সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন শিল্প-রোবটের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সাল নাগাদ চীনে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ১৩০টি রোবট থাকবে।

২. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সম্প্রতি হেই লুং চিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরে এক কর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন। কর্মসভায় তিনি বিভিন্ন প্রদেশে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় দিক্‌-নির্দেশনা দেন।

লি খ্য ছিয়াং কর্মসভায় হেই লুং চিয়াং, হ্য পেই, শান তোং, হু নান ও শ্যানসিসহ বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কর্মসংস্থানসংশ্লিষ্ট রিপোর্ট শোনেন। এসময় তিনি বলেন, চলতি বছর চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৭ মাসে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ৮৬ লাখ ৭০ হাজার। তবে, প্রতিবছর চাকরি-বাজারে প্রবেশ করে এর চেয়ে বেশি মানুষ। তাই, অতিরিক্ত জনশক্তির কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

লি খ্য ছিয়াং আরও বলেন, কর্মসংস্থানের ভিত্তি সুসংবদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি করহ্রাস-ব্যবস্থার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৩. চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬৪.১৪ বিলিয়ন ইউয়ানে (প্রায় ৩৭.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩.৮ শতাংশ বেশি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

বছরের প্রথম ৭ মাসে কুয়াংসি প্রদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল আসিয়ান। এসময় আসিয়ানের সঙ্গে প্রদেশটির বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৮.৫১ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রদেশটির বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৮.৫৪ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০০ শতাংশ বেশি।

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কুয়াংসির মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪১.০২ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১৬.২ শতাংশ বেশি।

৪.যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশান ফর বিজনেস ইকোনোমিক্স-এর সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে, আগামী দু'বছরে মার্কিন অর্থনীতি মন্দাবস্থার কবলে পড়বে।

প্রতিবেদনটি রচিত হয়েছে ২২৬ জন অর্থনীতিবিদের মতামতের ভিত্তিতে। এই অর্থনীতিবিদদের ৯৮ শতাংশই মনে করেন, ২০১৯ সালের পর থেকে মার্কিন অর্থনীতির গতি মন্থর হতে শুরু করবে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫১ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মার্কিন চলমান আর্থিকনীতি অতিরিক্ত উত্তেজক। ৮৪ শতাংশ মনে করেন, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০১৮ সালের তুলনায় কম হবে।

৫. সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন জাতীয় সম্প্রচার কোম্পানি (এনপিসি) ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সর্বশেষ জনমত জরিপের ফল অনুসারে, তিন ভাগের দু'ভাগ মার্কিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ বাণিজ্যের সমর্থক।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতারা মনে করেন, অবাধ বাণিজ্য নতুন বাজারের দরজা খুলে দিতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনুকূল। তাদের মতে, অর্থনীতির বিশ্বায়ন অনিবার্য একটি প্রবণতা।

এবার অবাধ বাণিজ্যকে সমর্থনকারীর সংখ্যা ২০১৭ ও ২০১৫ সালের জরিপের তুলনায় যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ১২ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ জনমত জরিপটি চালানো হয় ১০ থেকে ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত। ১০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনি জরিপের অংশগ্রহণ করেন।

৬. মার্কিন অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়তে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। মার্কিন হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা অবশ্য 'মার্কিন অর্থনীতির মন্দাবস্থা'র খবর প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিদেশি রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ মার্কিন অর্থনীতিতে অধিকতর মন্দাবস্থা সৃষ্টি করেছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ হার কমে ২.১ শতাংশে দাঁড়ায় এবং তৃতীয় প্রান্তিকে আরও কমে দাঁড়ায় ১.৫ শতাংশে। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র চীনের আরও ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এর ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমে যাবে; আমদানিসংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৭. মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্প্রতি এক সাক্ষাতে অ্যাপল কোম্পানির সিইও থিম কুক বলেন, চীনা রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে তাঁর কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বিতা-শক্তি কমে যাবে। সেক্ষেত্রে স্যামসাং কোম্পানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে পড়বে অ্যাপল।

অ্যাপল-এর পণ্যের একটা বড় অংশ চীনে উত্পাদিত হয়। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামে স্যামসাংয়ের কারখানা আছে। তা ছাড়া, গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার অবাধ বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে, চীনা রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলে, অ্যাপল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্যামসাংয়ের সেক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিনারের সময় কুক নিজের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেন।

৮. ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তাঁর দেশ আগামী পাঁচ বছরে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে গড়ে উঠবে। ভারতের ৭৩তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সম্প্রতি রাজধানী নয়াদিল্লির লাল কেল্লাতে এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতের অর্থনীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। মাত্র পাঁচ বছরে ভারতের অর্থনীতি এক ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এখন ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার কাজ চলছে।

মোদী প্রতিশ্রুতি দেন, রাস্তাঘাট, রেলপথ, সেতু ও হাসপাতালসহ অবকাঠামো নির্মাণে ১০০ ট্রিলিয়ন রুপি বিনিয়োগ করা হবে এবং ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যখন প্রতিজন ভারতীয় ধনী হবে, তখনই দেশের আসল বিকাশ ঘটবে।

৯. ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গত অগাস্টের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ১৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। এ রেমিট্যান্সের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে।

প্রতিবারের মতো এবারও রেমিট্যান্স গ্রহণের শীর্ষে ছিল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি ৯ অগাস্ট পর্যন্ত রেমিট্যান্স পেয়েছে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া, ১০ অগাস্ট পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ কোটি মার্কিন ডলার। ডাচ-বাংলা ব্যাংক পেয়েছে ৬ কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।

ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল আজহার সময় কোরবানি পশু ও অন্যান্য কেনাকাটায় নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়া, ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণায় প্রবাসীরা বেশি করে অর্থ প্রেরণ করছেন।

এর আগে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো রেমিট্যান্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।

১১. বার্ষিক নিট মুনাফা থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছে ইউনিলিভার ও বিএসআরএম। সম্প্রতি ঢাকার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের হাতে লভ্যাংশের টাকা তুলে দেন দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনিলিভার গত অর্থবছরের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ হিসাবে ৬ কোটি ১৯ লাখ ২৫ হাজার ৪৮৪ টাকা এবং বিএসআরএম ৩ কোটি ২৬ লাখ এক হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেছে।

শ্রম-আইন অনুযায়ী, কোম্পানির নিট লাভের শতকরা পাঁচ ভাগ বিভিন্ন উপায়ে শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করতে হয়। শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত এই অঙ্কের ১০ ভাগের এক ভাগ জমা দিতে হয় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে; এক ভাগ কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ (নিজস্ব) শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে জমা রাখতে হয়; এবং বাকি আট ভাগ নগদ লভ্যাংশ হিসাবে শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করতে হয়।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশী ও বহুজাতিক কোম্পানি মিলে মোট ১৪০টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। অন্যদিকে এ তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ৯ হাজার শ্রমিককে প্রায় ৩০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040