ছিয়াং জাতির লোকসংখ্যা ৩ লাখের চেয়ে একটু বেশি। তারা মূলত সিছুয়ান প্রদেশের আবা তিব্বত ও ছিয়াং স্বায়ত্তশাসিত এলাকা এবং পেইছুয়ান ছিয়া স্বায়ত্তশাসিত জেলায় বাস করে। সিছুয়ান প্রদেশের অন্য জায়গায় ছিয়াং জাতির মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
ছিয়াং জাতির ভাষা দক্ষিণ ও উত্তরে আলাদা। মানে দু'টি আঞ্চলিক ভাষা আছে তাদের। হান জাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় তারা হান ভাষা ও অক্ষর ব্যবহার করতে পারে। ছিয়াং জাতির লিখিত ভাষা ছিল না। ১৯৮৯ সালে, ২৬টি ল্যাটিন বর্ণ ব্যবহার করে, তৈরি করা হয় ছিয়াং ভাষার পিনইন। ১৯৯৩ সাল থেকে এ পিনইন ছিয়াং জাতিঅধ্যুষিত এলাকায় জনপ্রিয় করে তোলার কাজ শুরু হয়।
ছিয়াং জাতিঅধ্যুষিত এলাকার অধিকাংশই উপত্যকা। এখানকার বেশ কয়েকটি পাহাড়ের উচ্চতা ৫ হাজার মিটারের বেশি এবং এসব পাহাড়ের শৃঙ্গ সবসময় তুষারে ঢাকা থাকে।
মিন চিয়াং নদী ও ছিয়ান ছিয়াং নদী ছিয়াং জাতির মাতৃনদী। মিন চিয়াং উপত্যকা অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ৫০০ মিলিমিটার। এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে মূলত খরা-কে বোঝায়।
ছিয়াং জাতিঅধ্যুষিত এলাকার পশুসম্পদ ও উদ্ভিদসম্পদ প্রচুর। ওয়েন ছুয়ান জেলায় অবস্থিত উও লং প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা বিখ্যাত এবং জাতিসংঘ একে আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ এলাকা পান্ডার একটি আবাসস্থল। জায়গাটা যেন একটি প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর মোট আয়তন ৭ লাখ হেক্টর এবং এখানে পাওয়া যায় ৪ সহস্রাধিক ধরনের গাছ, দুই শতাধিক ধরনের পাখি এবং নানা ধরনের বিরল স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং গাছপালা।
ছিয়াং জাতির ঐতিহাসিক খাবার ভূট্টা। পর্বত থেকে আহরিত সয়াবিন তাদের বৈশিষ্টসম্পন্ন খাদ্য।
লোকসাহিত্য ছিয়াং জাতির সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মুখে মুখে এই সাহিত্য সংরক্ষিত হয়েছে। তাদের লোকসাহিত্যে ছিয়াং জাতির ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। একসময় এই জাতি ছিল যাযাবর জাতি।
ছিয়াং জাতির মানুষ বিভিন্ন ধরনের নাচ নাচে। এর মধ্যে বিনোদনমূলক ও পূজার নাচ উল্লেখযোগ্য। তাদের দলীয় নৃত্য দেখার মতো।
পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে বলে ছিয়াং জাতির মানুষের জন্য যাতায়াত সবসময়ই কঠিন এক ব্যাপার ছিল। তারা দুই পাহাড়ের মধ্যে এবং নদীর উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সেতু তৈরি করার কৌশল আয়ত্ব করেছিলে অনেক আগেই।
ছিয়াং জাতির মানুষ বসন্ত উত্সব, ড্রাগন নৌকা উত্সব, মধ্যশরত্ উত্সবসহ হান জাতির উত্সব পালন করে। তাদের নিজস্ব উত্সবও আছে। তারা 'ছিয়াং নববর্ষ' পালন করে। ছিয়াং ভাষায় বলা হয় 'রিমেইচি'। এর অর্থ শুভ ও আনন্দের দিন। চান্দ্রপঞ্জিকার দশম মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হয় এই উত্সব। চলে ৩ থেকে ৫ দিনব্যাপি।
তাদের আরেক উত্সবের নাম লিং ক্য উত্সব। এ উত্সব মূলত মাও জেলায় জনপ্রিয়। চান্দ্রপঞ্জিকার পঞ্চম মাসের পঞ্চম দিন এ উত্সব উদযাপন করা হয়। নাচ ও গানের দেবতার স্মরণে এ উত্সব হয়। তাই এ উত্সব চলাকালে নারীরা ইচ্ছামতো গান ও নাচ করতে পারে এবং এ সময়ে সব গৃহকাজ ও কৃষিকাজ পুরুষরা করেন।
ছিয়াং জাতির কিছু নিষেধাজ্ঞা: ছিয়াং জাতির কাছে অগ্নিকুণ্ড পবিত্র। কোনো অগ্নিকুণ্ডের ওপর দিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। অগ্নিকুণ্ডের সামনে ঝগড়া করাও নিষিদ্ধ।
বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা করা নিষিদ্ধ। বাড়িতে রোগী থাকলে ঘরের সামনে একটি বেঞ্চ রাখা হয়। এটি একটি প্রতীকের মতো। এটা দেখলে অতিথি বুঝতে পারে যে বাড়িতে প্রবেশ করা যাবে না।
বিয়ের সময় নতুন বউ পেছন ফিরে তাকায় না। একে অশুভ মনে করা হয়। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরবর্তী এক মাস সংশ্লিষ্ট নারী রান্নাঘরে প্রবেশ করতে পারে না। কারণ, এতে রান্নঘর ও বাড়ির দেবতা অসন্তুষ্ট হন বলে বিশ্বাস করা হয়। (শিশির/আলিম/রুবি)