ভারতীয় চলচ্চিত্র 'সুই ধাগা: মেইড ইন ইন্ডিয়া'
  2019-08-22 14:53:39  cri

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের চলচ্চিত্র চীনের চলচ্চিত্র বাজারে দিন দিন ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং খুব ভালো বক্সঅফিসও অর্জন করছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রে নারীর অধিকার, শিক্ষা এবং শ্রেণীর ধারণাসহ বিভিন্ন বিষয় দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত হয়।

চলতি বছরের শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের 'এক অঞ্চল, এক পথ' বিষয়ক চলচ্চিত্র সপ্তাহে 'সুই ধাগা: মেইড ইন ইন্ডিয়া' নামে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনের পর এ চলচ্চিত্র চীনা দর্শকদের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

দর্শক ম্যাডাম ওয়াং বলেন, 'আমি মনে করি, চীনে প্রদর্শিত ভারতীয় চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতের চলচ্চিত্রের স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে। তাদের চলচ্চিত্রের থিম কখনও অনুপ্রেরণাদায়ক, কখনও বাস্তবতাভিত্তিক। এসব চলচ্চিত্র দেখার পর ভারত সম্পর্কে আমার জানাশোনা বেশ বেড়েছে। চলচ্চিত্রের প্রতি ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের অন্বেষণ ও প্রতিজ্ঞা আমি অনুভব করতে পারি।'

'সুই ধাগা: মেইড ইন ইন্ডিয়া' চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র মাউজি শর্মা দর্জির দোকানে কাজ করেন। তিনি অনেক প্রাণবন্ত এবং আশাবাদী। তিনি সবসময়ই আশেপাশের লোককে খুশি রাখার চেষ্টা করেন, তবে তিনি তাদের উপহাস পান।

তার স্ত্রী তাকে বলেন, অন্যদের খুশি রাখার চেষ্টা না করে তিনি কাপড় প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে নিজের এই দক্ষতার ওপর নির্ভর করে টাকা উপার্জন করতে পারেন। স্ত্রীর উত্সাহে মাউজি আর দ্বিধা না করে একটি দর্জির দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে তিনি একবার কাপড় ডিজাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।

ভারতের চলচ্চিত্রের পুঁজি বিনিয়োগ বাজারে সাধারণ লোকের পরিশ্রমের গল্প প্রকৃতপক্ষে কম নয়। তবে অধিকাংশ চলচ্চিত্রের কোনো বাণিজ্যিক মূল্য নেই। পুঁজি বিনিয়োগকারীরা এমন ধরনের থিমকে ভালো চোখে দেখেন না। এ চলচ্চিত্রটির পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার শরত্ ক্যাটারিয়া মনে করেন, চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্র আশেপাশের লোকদের বৈষম্য ও ভুল বোঝাবোঝির সম্মুখীন হলেও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবন কাটান। এটাই মানবজাতির অভিন্ন গল্প, তাই এই গল্প অনেক মুগ্ধকর।

তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, 'সুই ধাগা: মেইড ইন ইন্ডিয়া' নামে চলচ্চিত্রের মতো ভারতের এমন ধরনের চলচ্চিত্রে সত্যিকারভাবে মানবতা তুলে ধরা হয়। যা সবার মধ্যে একই আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। শুধু ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে নয়, বরং বিশ্বের দর্শকদের মধ্যে একই আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। কারণ এ চলচ্চিত্রে সত্যিকারভাবে সাধারণ মানুষের বড় শহরে পরিশ্রমের গল্প তুলে ধরা হয়। ব্যক্তিগতভাবে বলা যায়, আমি এমন ধরনের গল্প পছন্দ করি, তাই আমি তা শুটিং করি।'

শরত্ ক্যাটারিয়া মনে করেন, একটি চলচ্চিত্র সফল হওয়ার গোপন তথ্য হলো মন থেকে কাজ করা। তিনি বলেন, বিশ্বের সব চলচ্চিত্রেই মানবজাতির সাধারণ আবেগ খুঁজে পাওয়া যায়। তাই আন্তরিক অনুভূতিসম্পন্ন ভারতীয় চলচ্চিত্র বর্তমানে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র বাজারে নিজের অবস্থান অর্জন করে এবং চীনা অনুরাগীদের মনও জয় করে। চীনা দর্শক ম্যাডাম লিউ বলেন, 'আমি ভারতীয় চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে অনেক ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করা হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্র আমার পছন্দ করার কারণ হলো দেশটির চলচ্চিত্রের প্রধান বিষয় আমাদের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমি ভারতের রীতিনীতি ও অভ্যাস এবং সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি। তা ছাড়া, দেশটির চলচ্চিত্র দর্শকদের মধ্যে একই আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে আমি মনে করি। এটাই হলো ভারতীয় চলচ্চিত্রের সফলতার প্রধান কারণ। এটা আমাদের কাছেও শিক্ষাযোগ্য।'

চলতি বছরের শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের 'এক অঞ্চল, এক পথ' বিষয়ক চলচ্চিত্র সপ্তাহে মোট ২৪টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এই চলচ্চিত্র সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ছিলো 'জীবনের আলো'। তার মানে যে-কোনো ভাষা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট, যাই হোক না কেন, জীবনের প্রতি সারা বিশ্বের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রায় এক। যেন চলচ্চিত্র পরিচালক শরত্ ক্যাটারিয়ার কথা বলার মতো, ভারতীয় দর্শক বা চীনা দর্শক, যাই হোক, চলচ্চিত্র বিভিন্ন দেশের জনগণের মন সংযোগ করতে সক্ষম। সম্মিলিতভাবে মানবজাতির আন্তরিক অনুভূতি অনুভব করার এই প্রতিপাদ্য কখনও পরিবর্তিত হবে না।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040