১. বিগত ৭ মাসে চীনের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.২ শতাংশ বেশি। এসময় বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি চীনা শুল্ক সদর দফতরের এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, গত সাত মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৩ হাজার কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩ শতাংশ বেশি। আর রফতানির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৪৮ হাজার কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৭ শতাংশ বেশি।
চীনের শুল্ক সদর দফতরের পরিসংখ্যান বিভাগের মহাপরিচালক লি কুই ওয়েন বলেন, দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধির প্রবণতার মধ্যেই চীনের অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখাচ্ছে।
আর চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একাডেমির আন্তর্জাতিক বাজারবিষয়ক ভাইস-একাডেমিক পাই মিং বলেন, সাত মাসের বাণিজ্যিক লেনদেন প্রমাণ করে যে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের রূপান্তর-প্রক্রিয়া দ্রুত সামনে এগুচ্ছে।
২. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, চীনা মুদ্রা রেনমিনপি'র বিনিময়-হার দেশটির অর্থনীতির ভিত্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। চীনে আর্থিক খাতে চলমান সংস্কার-প্রক্রিয়ায় অর্জিত অগ্রগতিরও প্রশংসা করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীন সরকার সম্প্রতি ব্যাকিং খাতের দুর্বলতা দূর করা এবং অর্থনৈতিক উন্মুক্ততা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক চীনকে 'বিনিময়-হার নিয়ন্ত্রকদেশ' হিসেবে চিহ্নিত করা প্রসঙ্গে আইএমএফ-এর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক ও চীনবিষয়ক মহাপরিচালক জ্যামস ডেনিয়াল বলেন, ২০১৮ সালে রেনমিনপি'র বিনিময়-হার অর্থনৈতিক ভিত্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল। তাই, চীনা মুদ্রার মূল্যমানে বড় ধরনের কোনো ওঠা-নামা দেখা যায়নি।
৩. এদিকে, চীনকে 'কারেন্সি ম্যানিপুলেটর' বা 'মুদ্রার বিনিময়হার নিয়ন্ত্রক' হিসেবে চিহ্নিত করতে নারাজ খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই একাধিক অর্থনীতিবিদ। তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্বিচার সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বরং বাধাগ্রস্ত করবে।
নোবেলবিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান সম্প্রতি দি নিউ ইয়র্ক টাইমস্ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ চীনা মুদ্রা রেনমিনপি'র অবমূল্যায়নকে 'মুদ্রা-হার নিয়ন্ত্রণ' বলে আখ্যায়িত করছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, চীনের ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির মার্কিন হুমকির কারণেই বাজারে ডলারের বিপরীতে রেনমিনপি'র দাম কমে গেছে। আর এটাই স্বাভাবিক। চীনের এ ব্যাপারে করার কিছু নাই; চীন নির্দোষ।
৪. চলতি বছর, ২৪০০ কোটি ইউয়ান ব্যয়ে, চীনের ৫০টি শহরে ৫০ হাজার ৫জি বেস স্টেশান স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করবে চায়না মোবাইল। সম্প্রতি কোম্পানি এ তথ্য জানায়।
৫. সম্প্রতি চীনা মানবসম্পদ ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এ বছরের প্রথমার্ধের পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত চীনের শহরাঞ্চলে ৭৩ লাখ ৩০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬৭ শতাংশ।
এদিকে, চীনা রাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায় বলা হয়েছে, পরবর্তী ধাপে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা নিয়ে কর্মসংস্থান আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের সেবা ও সহায়তাসংক্রান্ত নীতিও কার্যকর করা হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ইতিবাচকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে কর্মসংস্থান উন্নয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
চীনা মানবসম্পদ ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান ত্বরান্বিত বিভাগের পরিচালক চাং ইং বলেছেন, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৮৩ লাখ ৪০ হাজার। বর্তমানে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। পরবর্তী ধাপে চীনা মানবসম্পদ ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে স্নাতকদের কাজ পাওয়ার অবস্থা সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
চীনা মানবসম্পদ ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়, গণনিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ও চীনা গণব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া, কর্মসংস্থানের অধিকার সুরক্ষা করা, কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
এদিকে, চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, গত জুন মাসে সমগ্র চীনে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার ছিল ৫.১ শতাংশ, যা গত মে মাসের চেয়ে ০.১ শতাংশ বেশি। আর ৩১টি মহানগরে বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ, যা আগের মাসের সমান। এটা লক্ষণীয় যে, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সমগ্র চীনে নগরে আসল বেকারত্বের হার প্রত্যাশিত নিয়ন্ত্রণ-লক্ষ্য ৫.৫ শতাংশের কম ছিল।
৬. যুক্তরাষ্ট্রের দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা সম্প্রতি এক সম্পাদকীয়তে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ভুল বাণিজ্যনীতির কারণে মার্কিন অর্থনীতির পতন ঘটতে পারে। সম্পাদকীয়তে সরাসরি হোয়াইট হাউসের জাতীয় বাণিজ্য কমিশনের মহাপরিচালক পিটার নাভারোর সমালোচনা করা হয়।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর, পিটার নাভারো হলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। বাকি সব অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে যে কর কমানো ও তত্ত্বাবধান প্রশমনের নীতি গ্রহণ করেছিল, তাতে মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছিল। তবে ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক সংঘাতের পর থেকে মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা ও বিনিয়োগ কমে যায়, যা মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্তমানে মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
৭. জাপানকে নিজের বিশ্বস্ত রফতানি-অংশীদারদের তালিকা থাকে বাদ দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানিমন্ত্রী সুং ইউন-মো সম্প্রতি এ তথ্য জানান।
৮. এর আগে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিওনি কিয়ং-দু বলেন, জাপান তাঁর দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিশোধ গ্রহণ করছে, যা দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র-জাপান ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা-সহযোগিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সম্প্রতি সিউলে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, জাপান সরকার গত পয়লা জুলাই থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সেমিকন্ডাক্টর জাতীয় পণ্যের রফতানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সংঘাত শুরু হয়। পরে দোসরা অগাস্ট জাপান বাণিজ্যিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার মর্যাদা কেড়ে নেয়।
৯. ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক চা-উত্পাদনের পরিমাণ ৩৫০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে শ্রীলঙ্কা। উক্ত সময়ের মধ্যে বার্ষিক ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চা রফতানির লক্ষ্যও ধার্য করেছে দেশটি। কলম্বো টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশান সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, বিগত দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কায় গড়ে প্রতিবছর চা উত্পন্ন হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন কেজি করে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ৩৪০ মিলিয়ন কেজি চা উত্পন্ন হয়। কারণ, দেশটিতে চা উত্পাদনের জমি অপরিবর্তিত আছে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় চা উত্পন্ন হয় ৩০৩.৮ মিলিয়ন কেজি।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে শ্রীলঙ্কা বিদেশে চা রফতানি করেছে ৬৮২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।
১০. চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২১.২০ শতাংশ।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তা ছাড়া, এবারের বাজেটে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এর ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার; কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার; ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার। অন্যদিকে নয়টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সর্বশেষ মজুতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২.২০ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। সেই অঙ্ক আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৯.৬ শতাংশ বেশি।
(আলিমুল হক)