মিরকারিমির পরিচালিত প্রথম ফিচার ফিল্ম 'দ্য চাইল্ড অ্যান্ড দ্য সোলজার' ১৯৯৯ সালে ইরানের ইস্পাহান আন্তর্জাতিক শিশু ও যুববিষয়ক চলচ্চিত্র উত্সবে 'দ্য গোল্ডেন বাটারফ্লাই পুরস্কার' লাভ করে। এ ছাড়া ২০০০ সালে ফ্রান্সের নান্টেস থ্রি কন্টিনেন্টস ফেস্টিভালেও পুরস্কার লাভ করে এ ফিচার ফিল্মটি। তাছাড়া, এটি ২০০১ সালে ক্রোয়েশিয়ার শিশু ও যুববিষয়ক চলচ্চিত্র উত্সবে 'দ্য গোল্ডেন শু' পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি পুরস্কার অর্জন করে।
মিরকারিমির 'আন্ডার দ্য মুনলাইট' শিল্পকর্মে সমাজ ও ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। যা ২০০১ সালে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে 'শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম' পুরস্কার এবং ২০০১ সালে টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার ও বিশেষ জুরি পুরষ্কার লাভ করে।
চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের কারণে মিরকারিমি ৪ বছর আগে ইরানের বৃহত্তম বার্ষিক চলচ্চিত্র উত্সব বা ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন।
শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব নিয়ে মিরকারিমি বলেন, 'আমি মনে করি, শাংহাই চলচ্চিত্র উত্সব হলো চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উত্সবের মধ্যে অন্যতম একটি। এটি এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী চলচ্চিত্র উত্সবের মধ্যে অন্যতম একটিও বটে। এর ব্যাপকতা এবং প্রভাবও দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এশিয়ার বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীন, ইরান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন এশীয় দেশ চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব এশিয়া এবং বিশ্বের চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের জন্য বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করেছে।এটি বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের পারস্পরিক সমঝোতা ও বিনিময় বেগবান করবে।'
মিরকারিমি বলেন, আমরা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও সভ্যতার পরিপূর্ণ গ্রামে বাস করে থাকি। এশিয়ার আরো সুপ্রাচীন সভ্যতা ও সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এই সুযোগসুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজের ভাষা ও প্রকাশের পদ্ধতিতে এশিয়ার গল্প বিশ্বকে জানানো উচিত্।
তিনি বলেন, 'এশিয়া হলো বিশ্ব সভ্যতার উৎপত্তিস্থল।এর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও সভ্যতা আছে। যা বিশ্বসভ্যতা গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তবে এশিয়ার চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা সারা বিশ্বে ততটা সুপরিচিত নন। শুধুমাত্র ইউরোপের চলচ্চিত্র উত্সবের মাধ্যমে তারা অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বা সুপরিচিত হয়ে ওঠে।'
ইরানের ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের চেয়ারম্যান হিসেবে মিরকারিমি মনে করেন, একে অপরের সংস্কৃতি নিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জানাশোনা ও বোঝাপড়া যথেষ্ট নয়। তাই তিনি এশীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের সঙ্গে এশিয়ার সংস্কৃতি বিশেষ করে চলচ্চিত্র-বিষয়ক এক গবেষণালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। এই গবেষণালয় এশিয়ার সংস্কৃতি এবং চলচ্চিত্র মহলের ব্যক্তিদের জন্য বিনিময় ও পারস্পরিক সমঝোতার প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাছাড়া, এটি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ধীশক্তিসম্পন্ন তরুণ চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের সমর্থন ও সাহায্য করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উত্সবের যৌথ শক্তি পালন করা উচিত্। একটি গবেষণালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত্। এই গবেষণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের আবিষ্কার করা, তাদের পরিচিত করা এবং সুপারিশ করা যায়। তা ছাড়া, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উত্সবের মাধ্যমে আমাদের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।'
পরিচালক মিরকারিমি চীনের সি'আন রেশমপথ-বিষয়ক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নেন। তিনি এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো চীন সফর করেন এবং প্রথমবারের মতো শাংহাইয়ে আসেন। তবে প্রতিবারই চীনে এসে তিনি মুগ্ধ হন। এবার শাংহাইয়ের ছি পাও প্রাচীন জেলা পরিদর্শনের পর তার মনে রচনার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয় এবং চীন সংক্রান্তটি এক চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছাও জন্ম নেয়।
তিনি বলেন, 'এটি মন জয় করার এবং পরিপূর্ণ গল্প তৈরির একটি জায়গা। সুপ্রাচীন রাস্তায় হাটার সময় আশেপাশের স্থাপত্য দেখে আমি ভাবতে থাকি, এর প্রতিটি ইট ও ইটের গল্প আছে। এসব স্থাপত্য নিয়ে আমি একটি গল্প রচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ভাবছি, এটাই পূর্ব সংস্কৃতির আকর্ষণীয় শক্তি। যা আমার মধ্যে অনুপ্রেরণা ও রচনার উদ্যম বয়ে এনেছে।'
মিরকারিমি বলেন, কাজের প্রয়োজনে তিনি বিশ্বের ৬০ বা ৭০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তবে চীন ও ইরানের মধ্যে যত মিল তিনি দেখেছেন, এমন দেশের সংখ্যা বেশি নয়। চীন এবং ইরান সুদীর্ঘ ইতিহাসসম্পন্ন প্রাচীন সভ্যতার দেশ। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দু'দেশের কিছু বিষয়ের মধ্যে ব্যাপক মিল আছে। পরিবার নিয়ে চীনাদের চিন্তাধারা এবং পরিবারের ওপর চীনাদের গুরুত্ব প্রায় একই। চীনাদের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা তার মনে গভীর দাগ কেটেছে।
তিনি বলেন, 'চীনের কাছ থেকে আমাদের অনেক শেখার বিষয় আছে। চীনাদের পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টা আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে। আমি নিজ চোখে চীনের পরিবর্তনশীল অবস্থা এবং অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন দেখেছি। চীনারা তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে এসব সফলতা অর্জন করেছেন। সফলতার জন্য দরকার ত্যাগ ও পরিশ্রম।'
(লিলি/টুটুল)