ছংছিং খাইচৌ'র হানফেং হ্রদের কথা
  2019-08-12 15:41:45  cri
একজন মানুষকে জানলে তাঁর বন্ধুদের চেনা যায়; একটি শহরকে জানতে শহরের অবকাঠামো দেখতে হয়। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে হানফেংহু'র অবকাঠামোর গল্প শোনাবো।

গ্রীষ্মকালের সন্ধ্যায় দিনের মতো গরম নেই। স্থানীয় নাগরিকরা পৃথক পৃথকভাবে হানফেং হ্রদের তীরে এসে নাচেন, গান করেন। কেউ কেউ শরীরচর্চা করেন। রাতে আলো জ্বলছে, হ্রদটির তীর দেখতে তখন আরও সুন্দর লাগে।

(ছবি ১, রাতে হানফেং হ্রদের সুন্দর দৃশ্য)

খাইচৌতে আগে হ্রদ ছিল না। ইয়াসি নদীর তিন গর্জেসে পড়ন্ত এলাকা মোকাবিলার কারণে হানফেং হ্রদ গড়ে তোলা হয়। শরত ও শীতকালে এখানকার জলের স্তর ১৭৫ মিটার। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে স্তর ১৪৫ মিটার। তিন গর্জেস প্রকল্প নির্মাণের কারণে খাইচৌ পুরাতন নগর স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু নতুন খাইচৌ নগর পড়ন্ত এলাকায় অবস্থিত। খাইচৌ নগরের জনসংখ্যা বেশি। সেজন্য পড়ন্ত এলাকার মোকাবিলা নগরের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

লি ওয়েন জুন ছংছিংয়ের খাইচৌর সংস্কৃতি ও পর্যটন উন্নয়ন কমিটিতে কাজ করেন। তিনি খাইচৌ পুরাতন নগর-স্থানান্তরের কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি হানফেং হ্রদ গোড়া থেকে গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন।

হানফেং হ্রদ ছাড়া নগরের আগের দৃশ্য সম্পর্কে লি ওয়েন জুন বলেন, বাঁধ নির্মাণের আগে প্রতিবছর তিন গর্জেসে জল স্তর নিচে নেমে গেলে হানফেং হ্রদের স্থানে অনেক খানা-খন্দ দেখা যেতো। আগের পরিবেশ ভাল ছিল না।

পড়ন্ত এলাকার আয়তন কমানো এবং নতুন নগর ও কাছাকাছি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ইয়াংসি নদীর প্রথম পর্যায় শাখা নদী ফেংস্যি নদীতে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছে। গ্রীষ্মকালে ইয়াংসি নদীর জলাধারের জলস্তর ১৪৫ মিটারে নেমে আসে। জলস্তর কমার সময় জল ধরে রেখে হানফেং হ্রদ গড়ে তোলা হয়েছে।

হানফেং হ্রদ গড়ে তোলার পর খাইচৌ নগরের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। 'বর্তমানে আমাদের হানফেং হ্রদ-এলাকায় পর্যটকদের আনাগো বেশি।' লি ওয়েন জুন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যখন তাদের বাড়িতে অতিথি আসেন, তখন তারা অবশ্যই তাঁদেরকে হানফেং হ্রদে নিয়ে আসেন। কারণ হ্রদটি হলো তাদের প্রতীক।

(ছবি, খাইচৌ'র সেতু)

'বাতাস ও বৃষ্টি সেতু' হলো খাইচৌ নগরের বৈশিষ্ট্য। আসলে সেতুটি হলো পড়ন্ত এলাকার জন্য নির্মিত জলস্তর সমন্বয় বাঁধ। সুন্দর দৃশ্য গড়ে তোলার জন্য খাইচৌ মিং রাজবংশের শৈলী অনুযায়ী সেতুটি তৈরী হয়।

বর্তমানে হানফেং হ্রদের দু'তীরে ১৫ কিলোমিটার লম্বা ও ২ শতাধিক বর্গকিলোমিটার আয়তনের পার্ক এবং ২০ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি আয়তনের চর্চা চত্বর রয়েছে।

সময় পেলে মাদাম লং ইয়ং ছিয়ং হানফেং হ্রদের তীরে হাঁটাহাঁটি করেন। তিনি বলেন, আগে নগর ছিল নোংরা। কিন্তু বর্তমানে তাদের হানফেংয়ের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। এছাড়াও তাদের শরীরচর্চার স্থান নির্মিত হয়েছে।

(ছবি ৩: হানফেং হ্রদ হলো স্থানীয় নাগরিকদের শরীরচর্চা ও বিনোদনের জায়গা)

হানফেং হ্রদ নির্মিত হওয়ার পর হ্রদে বা তীরে ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো হয়। হ্রদের পশ্চিমাঞ্চলে পদ্ম চাষ করা হয়েছে। পদ্ম পানির মান উন্নত করেছে এবং পানিতে বসবাসরত প্রাণীগুলোর জন্য সুপরিবেশ গড়ে তুলছে। এ সুন্দর দৃশ্য বাসিন্দাদের প্রশংসা পেয়েছে।

(ছবি ৪: হ্রদে সুন্দর পদ্ম)

হানফেং হ্রদের উত্তর তীরের পূর্বাঞ্চলে উইয়াং বাঁধ অবস্থিত। এখানে পড়ন্ত এলাকা উচ্চ, সেজন্য এলাকাটিতে গাছ লাগানোর উপযোগী। খাইচৌ উইয়াং বাঁধের ১৯০ মু তথা প্রায় ১২.৬৬ হেক্টার পড়ন্ত এলাকায় ২০ ধরণের গাছ লাগানো হয়েছে। গ্রীষ্মকালে উইয়াং বাঁধ সবুজে ভরপুর। শীতকালে গাছ সবুজ থেকে লাল রঙে পরিণত হয়। তখন আরো সুন্দর লাগে।

(ছবি ৫: শীতকালে হানফেং হ্রদের তীরে বনের সুন্দর দৃশ্য)

হ্রদ ও বন ছাড়াও খাইচৌ নগর হানফেং হ্রদের তীরে কয়েকটি জলভূমির নান্দনিক স্থান নির্মিত হয়েছে। হানফেং হ্রদের সবুজায়ন এলাকায় অনেক বর্জ্য পদার্থ নিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরণের মাইকাল ঘর রয়েছে। হানফেং হ্রদের জাতীয় জলাভূমি পার্কের পরিচালনা ব্যুরোর পরিচালক স্যিয়ং সেন বলেন, একটি হল হানফেং হ্রদের তীরে অবস্থিত 'পোকা হোটেল'। এসব মাইকাল ঘরে এক শো'রও বেশি ধরণের পোকা বাস করে।

(ছবি ৬: স্যিয়ং সেন হানফেং হ্রদের তীরে অবস্থিত পোকা ঘর)

জলাভূমি পোকা ছাড়াও উভচর, সরীসৃপ, জলজ প্রাণী, জলাভূমি পাখি আকর্ষণ করে। বর্তমান হানফেং হ্রদ এলাকায় জীববৈচিত্র্য অনেক উন্নত হয়েছে।

খাইচৌ হলো চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাখি স্থানান্তরের প্রধান করিডোর। পাখিগুলোর জন্য খাইচৌ নগর হানফেং হ্রদে দু'টি কৃত্রিম পাখিদ্বীপ নির্মাণ করেছে। পাখিদ্বীপে বন্য হাঁসের জন্য উপযুক্ত অগভীর পুকুর নির্মাণ করা হয়েছে এবং পাখি বসবাসের জন্য গাছ ও ঝোপঝাড় লাগানো হয়েছে। প্রতিবছর শরৎ ও শীতকালে ২ শতাধিক ধরণের প্রায় ২০ হাজার পাখি উত্তর চীন থেকে খাইচৌতে আসে।

(ছবি ৭: হানফেং হ্রদের পাখি)

বিভিন্ন ধরণের পাখি স্থানীয় বাসিন্দাদের নতুন বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। পাখিরা শীতকালে হানফেং হ্রদে একটি সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করে।

খাইচৌ নতুন নগরের বিরাট পরিবর্তন সম্পর্কে ছংছিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক এবং জাতীয় জলাভূমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটির সদস্য ইউয়ান স্যিং চং বলেন, পড়ন্ত এলাকার পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার অবস্থা খুবই ভাল। সুন্দর দৃশ্য ও জীববৈচিত্র্য আরো ভাল হয়েছে। তিনি পড়ন্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ কাজে অংশ নেন।

হানফেং হ্রদের বিস্তৃত জল ও দীর্ঘ তটরেখা জলক্রীড়ার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সরবরাহ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খাইচৌ নগরে হানফেং হ্রদ হাফ ম্যারাথন, আন্তর্জাতিক মোটরবোট ওপেন, সিটি ফিশিং ম্যাচ, লেক সাইক্লিং রেস ও ড্রাগন বোট আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়ে আসছে। খাইচৌ নগর দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের বৃহত্তম জলক্রীড়া অনুশীলনকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

(ছবি ৮: হানফেং হ্রদ আন্তর্জাতিক মোটরবোট ওপেন)

হানফেং হ্রদের আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান হারে পর্যটকরা খাইচৌ ভ্রমণে আসছেন। ২০১৮ সালে খাইচৌতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৩১ হাজার ৩০০ জন। পর্যটন শিল্পের আয় ৫৫৬ কোটি ৮০ লাখ ইউয়ান আরএমবি।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040