উনিশশো বিরাশি (১৯৮২) সালের বসন্তকাল। কনকনে উত্তুরে হাওয়া বিদায় নিলেও ঠাণ্ডা যথেষ্টই, সকালে ও রাতে ভালোই শীত পড়ে। চীনের হে বেই প্রদেশের লোকজন এসময়ে গোটা শীতকাল জুড়ে গায়ে দেয়া ময়লাটে, তুলো ঢুকানো জ্যাকেট পরেই এদিক-সেদিক যায়। মহা সাংস্কৃতিক বিপ্লবোত্তর চীনজুড়েই তখন এক কর্মচাঞ্চল্য; নতুন স্বপ্নে বিভোর সবাই। জ্যাকেট নিয়ে ভাবাভাবির সময় তখন কারোরই নেই ।
এমনই এক ভোরে একটা মিলিটারি জীপ এসে থামল হে বেই প্রদেশের চেং তিং উপজেলাস্থ চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের গেটে। গাড়ি থেকে নেমে এলেন পুরনো হয়ে যাওয়া সামরিক পোশাক পরিহিত এক যুবক। একহারা গড়নের শহরে যুবককে সবাই তাকিয়ে দেখছিলেন, যুবক নিজেই নিজের জিনিসপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে রেখে অফিসে ঢুকলেন। গাঁয়ের উৎসুক জনতা ততক্ষণে চিনতে পেরেছে আটাশ বছর বয়সী যুবককে। যুবকের নাম সি চিন পিং; কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান, প্রখ্যাত বিপ্লবী সি চুং শুইনের পুত্র তিনি। চীনের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হয়ে সি চিন পিং তখন অনায়াসেই বেছে নিতে পারতেন বড় শহরের আয়েশি জীবন। কিন্তু তা না করে তিনি এলেন রাজধানী থেকে অনেক দূরের এক প্রত্যন্ত গাঁয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি সেক্রেটারি হয়ে। কে জানতো আধুনিক চীনের ইতিহাসে এ যুবকই একদিন হয়ে উঠবেন এক মহান কাণ্ডারি! তাঁর মোটামুটি তিন বছরের "চেং তিং জীবন" ছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ঠাসা। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখা যাক যুবক সি চিন পিংয়ের "চেং তিং জীবনকে"।
(গ্রামের রাস্তায় টেবিল পেতে দরিদ্র গ্রামবাসীর কথা শুনছেন যুবক সি চিন পিং )
চীনে তখন সাংস্কৃতিক বিপ্লব-পরবর্তী কমরেড তেং সিয়াও পিংয়ের শাসন। উর্বর ও নদীবিধৌত চেং তিং তখন ছিল মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। চীনের উত্তরাংশে এম্নিতেই গমের ফলন বেশি হয়; পাশাপাশি এখানে তুলা, ডুমুর, পীচসহ অন্যান্য ফসলাদিও উৎপন্ন হতো। এলাকাটি শস্যশ্যামলা হলেও, কমিউনের নিয়ম মোতাবেক, চার লাখ জনসংখ্যার এ উপজেলাকে মোট উৎপাদিত ফসল থেকে সর্বমোট ৭৬ মিলিয়ন চিন (চীনের ওজনের একক, আধা কেজিতে এক চিন হিসেবে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন কেজি) সরকারের কাছে জমা দেয়ার ফলে তাঁদের ভাঁড়ারে আর তেমন কিছুই রইতোনা। তাই এলাকাটিও দারিদ্র্যপীড়িতই থেকে গিয়েছিলো। সে-অবস্থায়, সি চিন পিংয়ের পরবর্তী কালের ভাষ্য অনুসারে, এলাকাটি ছিল "উচ্চ ফলনশীল কিন্ত গরীব"। তিনি শুরুতেই এলাকার মূল সমস্যাটি ধরতে পেরেছিলেন; বুঝতে পেরেছিলেন, কাজটি মোটেও সহজ নয়। কিন্ত তিনি পিছু হটে এলেন না । তিনি ভাবতে লাগলেন, খুঁজতে লাগলেন এই চার লাখ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের উপায়।
এই ভাবনার পথখানি আসলে কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। একে তো কম বয়স, তার ওপর আবার পার্টির কেন্দ্রীয় নেতার পুত্র। অনেকেই বলাবলি করতে লাগলো, রাজধানীর আরাম আয়েশের জায়গা ছেড়ে কমরেড সি এখানে এতোসব ঝামেলার ভেতর বেশিদিন টিকতে পারবেন না। কিন্ত সি নাছোড়বান্দা, তিনি কারও কথায় নিজের মত পাল্টালেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সি বুঝলেন, অর্থনীতির আরও গভীর জ্ঞান চাই, পাশাপাশি তা হওয়া চাই বাস্তবতার নিরিখে। অনায়াসেই "রাজপুত্রের" জীবন বেছে নেবার সুযোগ থাকা যুবকটি সারাদিন একটি পুরনো সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ান চেং তিং উপজেলার অন্তর্গত দুর্গম গ্রামগুলো আর রাতের বেশীরভাগ সময়ই কাটান বই পড়ে। দিনের পর দিন সরেজমিনে দেখেন দেহাতি চীনকে, মন দিয়ে শোনেন গরীব লোকেদের কথা। পরবর্তী কালে তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তিনি এসব দেহাতি মানুষের কথা শুনতে পছন্দ করতেন। অনেক সময় এমনও দেখা গেছে দুর্গম কোনও গ্রামে হয়তো পার্টির অফিসঘরই নেই; সি রাস্তা কিংবা গাছতলাতেই টেবিল-চেয়ার পেতে বসে গেছেন! মানুষও দুরের বেইজিং থেকে আসা যুবকটিকে নিজেদের একজন ভেবেই মন খুলে বলে গেছে নিজেদের সুখ-দুঃখের সাতকাহন।
এভাবে কিছুদিন যেতেই সি চিন পিং বুঝে গেলেন মূল সমস্যাটা আসলে ঐ ৩৮ মিলিয়ন কেজি ফসলের ভেতর। অতখানি ফসল সরকারের ঘরে চলে যাওয়ার ফলেই এদের নিজেদের খাবার অংশে কম পড়ে যাচ্ছে। সি ভাবলেন এটা নিয়ে বেইজিং গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে বোঝাবেন এটা যাতে কমানো নয়। কিন্ত ওদিকে, নতুন আসা উপজেলার ডেপুটি সেক্রেটারির খোদ রাজধানীতে গিয়ে এহেন দেন-দরবারের বিষয়ে আষাঢ়ে মেঘ দেখল স্থানীয় নেতৃবৃন্দ; তারা সি-কে বোঝালেন, এটা করা মোটেই ঠিক হবে না। এ যে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল! এটা সির নিজের ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো নয় মোটে! মাত্রই ক্যাডার হয়েছেন তিনি; এখন তার উচিৎ হবে সরকারের সুনজরে থাকা। সি চিন পিং দমলেন না; স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে বোঝালেন, এটা না-করলে বহু লোক না-খেয়ে থাকবে। একটা রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না। যারা একদিন ভেবেছিলেন, শহুরে এই 'রাজপুত্র' এখানে বেশিদিন টিকতে পারবেন না, তারা এবার ভাবলেন: নাহ, এ ছেলে অন্য ধাতুতে গড়া, এ বহুদূর যাবে। সি অনুমতি পেলেন বেইজিং গিয়ে এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবার। বিরাশি সালের গ্রীষ্মেই বেইজিং থেকে এলো কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা; তারা খতিয়ে দেখতে চান সি চিন পিং যা বলেছেন তা ঠিক কি না? তদারকি সংস্থার রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ঐ ৩৮ মিলিয়ন কেজি ফসলের খাজনা থেকে ১৪ মিলিয়ন কেজি মওকুফ করে দিল। বেইজিংয়ের রাজপুত্র রাতারাতি হয়ে গেলেন চার লাখ চেংতিংবাসীর আপনজন; তারা ভালবেসে এই রাজপুত্রকে ডাকতে লাগলেন "লাও শু জি" বা 'অভিজ্ঞ সেক্রেটারি'।
অন্য যে-কেউ হলে এটুকুতেই আহ্লাদে আটখানা হয়ে যেতেন। কিন্তু ইনি যে অন্য ধাতুতে গড়া! অর্থনীতির ছাত্র না-হয়েও বুঝলেন, এতে সাময়িক লাভ হয়তো হলো, কিন্ত আখেরে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশ না-হলে এরা আবার গরিবির ফাঁদেই পড়ে যাবে। সি নিমজ্জিত হলেন গভীর ভাবনা-চিন্তায়; খুঁজতে লাগলেন টেকসই উন্নয়ন-পরিকল্পনার। অনেক ভেবে তিনি দাঁড় করালেন 'সার্বিক আঞ্চলিক সহযোগিতার নীতি'। এই আঞ্চলিক সহযোগিতার ধারণা থেকেই কিন্তু উদ্ভব আজকের "এক অঞ্চল, এক পথ" সহযোগিতার নীতির।
চেং তিং উপজেলা থেকে কাছেই হে বেই প্রদেশের রাজধানী শি চিয়া চুয়াং। সি'র পরিকল্পনা অনুযায়ী, চেং তিং অনেকটা শি চিয়া চুয়াং সাপ্লাই বেস হিসেবে কাজ করবে। আগে কৃষিকর্ম ছিল মোটামুটি উদ্দেশ্যহীন; এখন থেকে প্রাদেশিক রাজধানী শি চিয়া চুয়াংয়ের কথা মাথায় রেখে উৎপাদন করা হবে ফসল। সি বললেন, "শি চিয়া চুয়াংয়ের যা যা লাগবে, আমরা তা তা উৎপাদন করব এখানে বসে"। তার এই অর্থনৈতিক সংস্কার ইতিহাসে 'আধা উপ-নগর উন্নয়ননীতি' (semi sub-urban development policy) নামে বিখ্যাত। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের দিকে নজর দিলেন তিনি। চাষীদের বোঝাতে লাগলেন, শুধু গম উৎপাদন করে বসে থাকার চেয়ে গম প্রক্রিয়াজাত করে ময়দা, নুডলস, কেক, কিংবা বিস্কুট তৈরি করাই বরং লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তাঁর এসব উদ্যোগের ফল কিন্ত হাতে-হাতেই মিলেছিল। এক হিসাব থেকে জানা যায় যে, ১৯৮৫ সালে তিনি যখন পার্টি সেক্রেটারি হিসেবে চেং তিং থেকে চলে যান, তখন চেং তিংয়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন খাতের মোট আয় ১৯৮২ সালের তুলনায় ২০০% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এর পাশাপাশি তিনি অন্যান্য খাত, বিশেষ করে ট্যুরিজম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির দিকেও দিলেন বিশেষ নজর। চেং তিং উপজেলাটির রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এখানে গড়ে উঠলো ইতিহাসভিত্তিক বেশ কয়েকটি ইকো পর্যটন প্রকল্প। আজও দেখা যায় শি চিয়া চুয়াং থেকে সাপ্তাহিক ছুটিতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে চেং তিং এসে বেড়িয়ে যান।
যা হোক, নয়া এ অর্থনৈতিক নীতি কিন্ত বেশ সাড়া জাগালো। কিন্তু সনাতন কমিউনভিত্তিক কৃষি-ব্যবস্থায় এটা করা মোটেই সহজ ছিল না। কারণ, তখন সবাই একই সাথে একই রকম ফসল করতেন। সি তখন বের করলেন নতুন এক উপায় এবং নাম দিলেন "ক্ষুদ্র বর্গাচাষিদের সমবায়" । এর মাধ্যমে একটি বড় কমিউনিটি-ফার্মের ছোট একটি অংশ কয়েকজন ভূমিহীন চাষি ইজারা নিয়ে নিজেরাই পছন্দের ফসল চাষ ও বিক্রি করবেন। এবার কিন্তু অনেকেই বাধা দিলো। কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটি সরকারের কমিউনভিত্তিক কৃষিব্যবস্থার সঙ্গে একদমই মানানসই নয়। অনেক পরে এসে সি ছোট একটি পাইলট প্রকল্প করার সুযোগ পেলেন। বলাই বাহুল্য, এটিও সফল হয়েছিল। এই আর্থিক নীতির সাফল্যে আনন্দিত হয়ে তখন খোদ তেং সিয়াও পিং পত্রিকাতে এর সপক্ষে লিখেছিলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি চেং তিংকে।
অনেক দিন থেকেই মনে মনে আগ্রহ ছিল দেখতে যাব চেং তিং। কিছুদিন আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো চেং তিং ঘুরে দেখবার। গত জুলাই মাসের শুরুতে উহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গিয়েছিলাম এই চেং তিংয়ে। প্রথমেই আমরা গেলাম স্থানীয় পার্টি-অফিসে। সমাদর করে তাঁরা আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। তুলে ধরলেন বিভিন্ন উন্নয়ন-প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা। চেং তিং এখন পুরোদস্তুর শহর। চেং তিং এখন একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র; পর্যটনকে ঘিরে এখানে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন শিল্পেরও প্রভূত বিস্তার ঘটেছে ।
আমাদের ঘুরিয়ে দেখানো হলো থা ইউয়ান নামক একটি গ্রাম, যে গ্রামের বাসিন্দারা সবাই অ্যাপার্টমেণ্টে বাস করে এবং গ্রামটি সরকারিভাবে দারিদ্র্যমুক্ত। গ্রামের মোড়ল (পার্টি সেক্রেটারি ) ইন শিয়াও পিং মধ্যবয়স্ক একজন সদাশয় ব্যক্তি। আমাদের নিয়ে গেলেন তার অফিসঘরে, আপ্যায়ন করলেন স্থানীয় একরকম চা দিয়ে। অফিসের দেয়ালে এখানে-সেখানে সি চিন পিংয়ের বড় বড় ছবি ও বিভিন্ন বাণী দেখলেই বোঝা যায় এলাকাটি এখনও মনে রেখেছে তাঁদের সেই "লাও সু জি" মানে অভিজ্ঞ সেক্রেটারিকে। মোড়ল ইন শিয়াও পিংয়ের কাছেই শুনলাম 'আধা উপ-নগর উন্নয়ননীতি'-র আধুনিক সফল প্রয়োগের গল্প। থা ইউয়ান গ্রামে ডুমুর পাওয়া যায়। এই ডুমুর তারা উদ্দেশ্যহীনভাবে বিক্রি না-করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি করেছেন একটি কোম্পানি, যেখানে বেইজিং থেকে আসা এক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন। এই কোম্পানি ডুমুর শুকিয়ে প্যাক করে সারা বছর ধরে বিক্রি করে। ডুমুরের জেলিও বানায় এরা। বছরশেষে মুনাফার ভাগ পায় সবাই। মোড়লের অফিসের চা-ও নাকি সেই শুকনো ডুমুরের চা। আমি তাঁকে জানালাম, বাংলাদেশও দারিদ্র্যবিমোচনে এই ক'দিনে বেশ এগিয়েছে। শুনে তিনি খুব খুশী হলেন; পাশাপাশি আমাকে বললেন, আমি যেহেতু চীনের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের "এক অঞ্চল, এক পথ" গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, সেহেতু আমি যেন এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও লিখি। কারণ, চীন ও বাংলাদেশ—উভয়ের লড়াই-ই দারিদ্রতার বিরুদ্ধে। আসলেই তাই! "এক অঞ্চল, এক পথ" সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করে, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অনেক সাফল্যের শিক্ষণীয় গল্পই কিন্তু আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্দেশ্যে। সবশেষে তাঁকে আমন্ত্রণ জানালাম সুযোগমতো বাংলাদেশে বেড়াতে আসতে ও চীনের উন্নয়ন-অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে।
(গ্রামের মোড়ল ইন শিয়াও পিং (সর্ববাঁয়ে ) এর অফিস থেকে বের হয়ে আসছি আমরা)
লেখাটি শেষ করছি সি চিন পিংয়ের একটি গল্প দিয়ে। গল্পকথক ওয়াং ইয়ো হূই তখন সি চিন পিংয়ের সিনিয়র ক্যাডার হিসাবে হে বেই প্রদেশেরই রাজধানী শহরে উচ্চপদে আসীন। সিনিয়র হলেও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তার। ১৯৮৩ সালের এক শীতকালে সি চিন পিং সাইকেল চালিয়ে চেং তিং থেকে এলেন প্রাদেশিক রাজধানী শি চিয়া চুয়াংয়ে। শীতকালে এমনিতেই আবহাওয়া থাকে শুষ্ক, তার ওপর সাইকেল চালিয়ে ধুলোমাখা এতোটা পথ আসায় একটু ঊষ্ণ জলে স্নান করবার জন্য ব্যাকুল ছিলেন সি চিন পিং। অফিসের কাজ সেরে সি জনাব ওয়াং ইয়ো হূইর কাছে জানতে চাইলেন, একটু গরম পানি হবে কি না। জনাব ওয়াং অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, গরম পানি দিয়ে কী হবে? উত্তরে সি জানালেন, তিনি ধুলোমাখা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন; একটু গরম পানি পেলে জনাব ওয়াং ইয়ো হূইর বাথরুমেই তিনি স্নান সেরে ফেলতে পারেন। সি এসেছিলেন সরকারি কাজে, চাইলেই সরকারের টাকায় যে-কোনও ভালো হোটেলে গিয়ে আয়েশ করে স্নান সেরে চাইকি একটু ঘুমিয়েও নিতে পারতেন! শুধুমাত্র সরকারের টাকার অপচয় হবে ভেবে সি সেটা করলেন না। শুনে শ্রদ্ধায় নত হয়ে গিয়েছিলেন ওয়াং ইয়ো হূই। পরবর্তী জীবনে শুধু চেং তিংই নয়, নিজের কর্মগুণে সি চিন পিং যেখানেই গিয়েছেন সফল হয়েছেন, হয়ে উঠেছেন গণমানুষের প্রিয় নেতা।
ডঃ মোস্তাক আহমেদ গালিব, পরিচালক, "এক অঞ্চল, এক পথ" গবেষণাকেন্দ্র, উহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন।