মুলাও জাতির লোকসংখ্যা ২ লাখের বেশি। তারা মূলত কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় বাস করে। কুই চৌ প্রদেশেও তাদের একটা অংশের বাস। মুলাও জাতির মানুষের পারিবারিক নামের মধ্যে অধিকাংশই লুও, ইন, উ, সিয়ে, ভান ও লিয়াং।
মুলাও জাতিঅধ্যুষিত এলাকার অধিকাংশ কার্স্ট ল্যান্ডফর্ম। মুলাও জাতির মানুষ পাহাড়ি উপত্যকায় বাস করে। মুলাও পাহাড়ি গ্রাম কুয়াংসি মুলাও জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মুলাও জাতিঅধ্যুষিত এলাকার আবহাওয়া উষ্ণ ও বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গড় বৃষ্টিপাত ১৩০০ মিলিমিটারের বেশি—যা কৃষির জন্য উপযুক্ত। এখানে মূল খাদ্য ধান, আলু, ভুট্টা ও গম। এখানে কয়লার মজুদ প্রচুর।
মুলাও জাতির ভাষা তুং ও সুই জাতির ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং তুং ও মাওনান ভাষার কাছাকাছি। মুলাও জাতির কোনো লিখিত ভাষা নেই। তারা হান ভাষার অক্ষর ব্যবহার করে। মুলাও ভাষায় রয়েছে বেশকিছু তুং ও হান ভাষার শব্দ। মুলাওদের কেউ কেউ তুং ও হান ভাষা বলতে পারে।
একসময় অধিকাংশ মুলাও নিজেদের 'লিং' বলে ডাকত। হান জাতি তাদেরকে মুলাও বলে ডাকত এবং চুয়াং জাতি তাদেরকে 'পু চিন' বলে ডাকত। ১৯৫৬ সালে মুলাও চীনের একটি সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং 'মুলাও' নামটি জাতির নাম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
মুলাও জাতির বাড়িঘর, পোশাক, খাবার ও প্রথায় যেমন নিজের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি এসবে হান ও চুয়াং জাতির প্রভাবও রয়েছে।
মুলাও মানুষের শোকের সময় খুব দীর্ঘ। পিতা-মাতা মারা গেলে সন্তান তিন বছর শোক পালন করে; এসময় প্রতিদিন সকাল ও রাতে চা ও খাবার দিয়ে পূজা করে।
মুলাও জাতির উত্সব অনেক বেশি। কারণ, তারা যেমন চুয়াং ও হান জাতির উত্সব পালন করে, তেমনি নিজেদের উত্সবও পালন করে। প্রায় প্রতিমাসে উত্সব থাকে।
বসন্ত উত্সবকে মুলাও জাতির মানুষ ডাকে 'নিয়ান উত্সব'। নববর্ষের প্রথম দিন সূর্যোদয়ের পর, নারীরা মশাল জ্বালান এবং ব্যারেল নিয়ে নদীর ধারে আসেন। তারা নদীর পানিতে কিছু কয়েন নিক্ষেপ করে পানির দেবতার পূজা করেন। তার পর পানি নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। মুলাও জাতির মানুষ বিশ্বাস করে, এমন পানি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। সারা গ্রামের মধ্যে যে সবার আগে পানি বাড়িতে নিয়ে আসবে, সে সবচেয়ে ভাগ্যবান প্রমাণিত হবে।
হুয়া পো উত্সব পালন করে তারা। চান্দ্রপঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন এ উত্সব পালিত হয়। হুয়া পো একটি দেবতার নাম। ইনি উর্বরতার দেবতা। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দেবতার বাগানে চাষকৃত ফুলগুলো মানুষে পরিণত হতে পারে এবং উনি যে বাড়িতে ফুল পাঠিয়ে দেন, আসেই বাড়িতে শিশুর জন্ম হয়। মুলাও জাতির মানুষ বিশ্বাস করে, মানুষ মৃত্যুর পর আবারও দেবতার বাগানের ফুলে পরিণত হয়।
'পোকা খাওয়া দিবস' চান্দ্রপঞ্জিকার ষষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় দিন। বিবাহিত নারী নিজের বাবা-মার বাড়িতে ফিরে এ উত্সব পালন করেন। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পথে কিছু পোকা ধরতে হয় এবং এ পোকা বাড়িতে নিয়ে রান্না করে সবাই খায়।
মুলাও জাতির লোক খেলাধুলা পছন্দ করে। খড় ড্রাগন নাচ: খড় দিয়ে ড্রাগন তৈরা করে তারা। বসন্ত উত্সব চলাকালে এক এক পরিবারে গিয়ে ড্রাগন নাচ করে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
হাতি ও বাঘ: মাঠিতে একটি লাইন তৈরি করা হয় এবং দু'জন লাইনের দু'পাশে দাঁড়ায়। পরে হাত দিয়ে দু'জন দু'জনকে আক্রমণ করে। হাত ছাড়া, অন্য অংশ ব্যবহার করতে পারে না এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর হাত ছাড়া, অন্য অংশের উপর আঘাত হানতে পারে না। প্রতিদ্বন্দ্বীকে দূরে ঠেলতে পারলে তথা ভারসাম্যহীন করে ফেলতে পারলেই বিজয়ী হওয়া যায়। (শিশির/আলিম/রুবি)