চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র প্যাকারেতে একজন কৃষকের মেয়ে। তিনি ব্রাজিলের সেয়ারা রাজ্যের রুসাসে জন্মগ্রহণ করেন। বহু বছর ধরে তিনি ফোর্তালেজার কয়েকটি স্কুলে ক্লাসিকাল ও ব্যালে নৃত্যের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। তবে তার স্বপ্ন হলো ভবিষ্যতে কোনো একদিন বড় মঞ্চে কাজ করা। অবসর নেওয়ার পর প্যাকারেতে রুসাসে ফিরে আসেন। তিনি জন্মস্থানে একটি ব্যালে নৃত্যের স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চান। তবে আশেপাশের লোকজন তাকে সমর্থন করেন না। এদিকে, রুসাসে শহর প্রতিষ্ঠার দু'শ তম বার্ষিকীতে তিনি একটা ব্যালে পরিবেশনা উপহার দিতে চান। কিন্তু এ কথা শুনে লোকজন তাকে বিদ্রূপ করেন।
এ চলচ্চিত্র দেখার পর অপেরা শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক দর্শক বলেন, যারা মনোযোগ দিয়ে শিল্প নিয়ে কাজ করেন এই চলচ্চিত্রটি তাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি বলেন, 'চলচ্চিত্রে দেখা যায়, সেই রাতে যখন সারা শহরে ব্যাপকভাবে উদযাপনী অনুষ্ঠান পালিত হয়, তখন প্রধান চরিত্র একাএকা ব্যালে পরিবেশন করেন। সেই মুহূর্তে তার পরিবেশনায় কোনো দর্শক দেখা যায় না। তবে সিনেমা হলে যারা এ চলচ্চিত্র উপভোগ করেন, তারা সবাই তার দর্শক হয়ে ওঠেন। যারা শিল্প নিয়ে কাজ করেন এ মুহূর্তটি তাদের গভীরভাবে প্রেরণা দেয়। বাস্তবে কেউ হয়তো আপনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান না, তবে বিশ্বাস রাখুন, আপনার সৌন্দর্য উপভোগের সেই মানুষ অবশ্যই আসবে।'
'প্যাকারেতে' চলচ্চিত্রটি সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়। এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র প্যাকারেতে ১৯১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যালে নৃত্য নিয়ে মগ্ন থাকার কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে পাগলি মনে করেন। তবে প্যাকারেতের স্বপ্ন ও সৌন্দর্য অন্বেষণ এবং কখনো স্বপ্ন পরিত্যাগ না করার প্রতিজ্ঞা দেখে এ চলচ্চিত্রের পরিচালক অভিভূত হয়ে ওঠেন। ফলে তিনি এ গল্পটি নিয়ে এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। চলতি বছরের জুন মাসে অ্যালান দেবার্টন এই চলচ্চিত্র নিয়ে ২২তম শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের 'গোল্ডেন গোবলেট অ্যাওয়ার্ড'-র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে অংশ নেন।
শৈল্পিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন চীনা দর্শক ওয়াং চিয়া বো বলেন, এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র প্যাকারেতে যেভাবে শিল্পের প্রতি অবিচল থাকেন তা তাকে ব্যাপকভাবে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, 'আমি আলোকচিত্র ও শিল্প নিয়ে লেখাপড়া করছি। চলচ্চিত্রে শিল্পের প্রতি প্রধান চরিত্রের অবিচল থাকা ও পাগলের মতো অবস্থা আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। প্রকৃতপক্ষে অন্যের স্বীকৃতি না পেলেও শিল্পের মাধ্যমে নিজের জন্য সান্ত্বনা বয়ে আনা যায়। চলচ্চিত্রের শেষে শিল্প প্রধান চরিত্রের নিজের মূল্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি হয়ে ওঠে, বরং অন্যদের খুশি করানোর যন্ত্র নয়।'
চৌ সিও ম্যান নামে আরেকজন দর্শক বলেন, প্যাকারেতে নামে চলচ্চিত্রটি জীবন, শিল্প ও স্বপ্নের প্রতি তার অনেক চিন্তা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, 'আমরা অনিবার্যভাবেই বয়স্ক হয়ে যাচ্ছি। যেন এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রের মতো। তিনি বার্ধক্য মোকাবিলা করলে এবং স্বপ্ন অন্বেষণ করলেও অনেক চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হচ্ছেন। তার পছন্দের শৈল্পিক স্টাইল এবং সমাজে তরুণ তরুণীদের পছন্দের মধ্যে পার্থক্য আছে। ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করার প্রক্রিয়ায় আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে উপহাস পান তিনি। তবে জীবনকে ভালোবাসা এবং স্বপ্ন অন্বেষণে তার নিরলস প্রচেষ্টার চেতনা অনেক মুগ্ধকর।'
চীনের চলচ্চিত্র দর্শকরা বলেন, ভবিষ্যতে চীনে ব্রাজিলের আরো বেশি বিভিন্ন থিম ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে বলে তারা আশা করেন।
ব্রাজিলে ফুটবল, কার্নিভাল ও বস্তির বাইরেও অনেক বৈচিত্র্যময় বিষয় রয়েছে। এসব বিষয়ভিত্তিক চলচ্চিত্র দর্শকদেরকে জানানো উচিত। লিউ নামের এক দর্শক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ব্রাজিলের সাধারণ জনগণের জীবন সম্পর্কে জানার আশা পোষণ করেন। তিনি বলেন, 'বর্তমানে অনেক মার্কিন চলচ্চিত্র ব্রাজিলে শুটিং করা হয়। এসব চলচ্চিত্রে ব্রাজিলের সাধারণ জীবন তুলে তুলে ধরা হয় না, এসব চলচ্চিত্রে ব্রাজিলের দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা হয়। আমি ব্রাজিলের শহর, জেলা ও গ্রামে বাস করা দেশটির কর্মী, ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদসহ সাধারণ জনগণের জীবন দেখতে চাই। এসব বিষয়ে আমি খুব আগ্রহী।'
(লিলি/টুটুল)