পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্থে চীনের জাতীয় মেধাস্বত্ব ব্যুরো ২ লাখ ৩৮ হাজার পেটেন্ট এবং ৩৫ লাখ ১৫ হাজার ট্রেডমার্কের অনুমোদন দিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৯.৯ ও ৬৭.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বিদেশি কম্পানিগুলোর আবেদিত পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ক আলাদাভাবে যথাক্রমে ৮.৬ ও ১৫.৪ শতাংশ বেশি। চীনের জাতীয় মেধাস্বত্ব ব্যুরোর উপ-পরিচালক চাও কাং বলেন, এ পরিসংখ্যান থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, চীনে বিনিয়োগের পরিবেশ আকর্ষণীয়।
২. চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের ক্যুরিয়ার খাতে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। সম্প্রতি স্টেট পোস্ট ব্যুরো (এসপিবি) জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্যুরিয়ার খাতের মোট রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ২১,৩৮০ কোটি ইউয়ানে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮.৩ শতাংশ বেশি। বছরের প্রথম ৬ মাসে চীনের ক্যুরিয়ার খাত মোট ২৭১৩ কোটি পার্সেল সরবরাহ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫.৮ শতাংশ বেশি। শুধু জুন মাসেই এই খাতে পার্সেল হ্যান্ডেল করা হয়েছে ৫৪০ কোটি।
৩. হংকংয়ের বিশেষ প্রশাসক লেন জেং ইয়ুয়ে অ্য সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাণিজ্য সমিতির প্রতিনিধিদের অভ্যর্থনা জানানোর সময় জোর দিয়ে বলেন, আইনের শাসন হচ্ছে হংকংয়ের সাফল্যের ভিত্তি; একে রক্ষা করতে হবে। সহিংসতা কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না।
তিনি বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ ও অন্যান্য অস্থিতিশীল উপাদানের কারণে বিগত কয়েক মাসে হংকংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি খানিকটা দুর্বল ছিল। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ০.৬ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকের অবস্থাও তেমন ভাল নয়।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ প্রশাসনিক সরকার সবসময় হংকং ও বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নজর রাখছে। পাশাপাশি, বাণিজ্যিক মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা জানার ও মেটানোর চেষ্টা করে আসছে। অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ প্রশাসনিক সরকার ব্যবস্থা নেবে।
প্রশাসক বলেন, সাম্প্রতিক সামাজিক সহিংসতাও হংকংয়ের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে, সমাজের বিভিন্ন মহলের যৌথ প্রচেষ্টায় হংকং অবশ্যই নিজের পথ খুঁজে নেবে।
৪. চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৫,৬১৪ কোটি ইউয়ানের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.২ শতাংশ বেশি। স্থানীয় সরকার সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
স্থানীয় সরকার জানায়, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে শহরটি মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে ১১২৮০ কোটি ইউয়ানের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১.৬ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া, উক্ত সময়ে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য আমদানি করা হয়েছে ৭৩৭৯ কোটি ইউয়ানের এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েচে ৩৪২৮ কোটি ইউয়ানের।
৫. নেপালের তামাকোশি-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যৌথ উন্নয়ন কাঠামোগত চুক্তি সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে স্বাক্ষরিত হয়। চীনের ইউননান প্রদেশের ভাইস গভর্নর জাং কুও হুয়া এবং নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী বারশালনাল পুন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ইউননান প্রদেশের জ্বালানি বিনিয়োগ কম্পানি, চীনের সানশিয়া শাংহাই নিরীক্ষা ও ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং নেপালের টিবিআই গ্রুপ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। প্রকল্পে মোট ৫৩ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথা।
এ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নেপালের মধ্য-পূর্বাঞ্চলে নির্মিত হবে। কাজটি সমাপ্ত হওয়ার পর বিদ্যুৎ উত্পাদনের ক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট হবে। প্রতিবছর বিদ্যুৎ উত্পাদন হবে ৯৮ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা।
জাং কুও হুয়া অনুষ্ঠানে বলেন, ইউননান ও নেপালের মধ্যে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। গত বছর দু'পক্ষের মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ কোটি মার্কিন ডলার ছিলো, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৪১ শতাংশ বেশি।
৬. দ্বাদশ চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের আলোচনা ৩০ জুলাই শাংহাই শহরে শুরু হয়। ট্রাম্প-সি ওসাকা আলোচনায় যে-মতৈক্য হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এই আলোচনা শুরু হয়। এর আগে দু'দেশের মধ্যে ১১-দফা বাণিজ্যিক আলোচনা অনুষ্ঠিতা হলেও, কোনো চূড়ান্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
পূর্বের আলোচনাগুলো সফল হয়নি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক আচরণের কারণে। ট্রাম্প প্রশাসন চাপ প্রয়োগ করে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, যা একটি ব্যর্থ কৌশল। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক দাবি চীনের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার পরিপন্থি। এ কারণে সেসব দাবি মানা চীনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে দু'পক্ষের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং আলোচনা ভেঙ্গে যায়। পরে গত জুন মাসের শেষ দিকে চীন ও মার্কিন প্রেসিডেন্টদ্বয় ওসাকায় পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে একমত হন। সেই মতৈক্যের ফল হচ্ছে শাংহাই আলোচনা।
ওসাকা আলোচনার পর কয়েক মিলিয়ন টন সয়াবিনবাহী জাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে এসেছে। পাশাপাশি, ১১০টি চীনা রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে যু্ক্তরাষ্ট্র। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, দু'পক্ষ ওসাকা মতৈক্য বাস্তবায়নের ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু, ট্রাম্প প্রশাসন যদি চাপ প্রয়োগের পুরাতন কৌশল ব্যবহার করে, তবে এই আলোচনাও ব্যর্থ হতে বাধ্য।
গেল এক বছরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হতে পারে না। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হয়েছে। প্রধান সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আসল জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশে কমে যায়, যা আগের প্রান্তিকের ৩.১ শতাংশের চেয়ে কম। বিশেষ করে মার্কিন নির্মাণশিল্পের অবস্থা করুণ। ফেডারেল ব্যাংক অব সেন্ট লুইসের উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মার্কিন শিল্প-উত্পাদন টানা দুটি প্রান্তিকে হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সম্প্রতি প্রকাশিত 'বিশ্ব অর্থনীতি আউটলুক রিপোর্ট'-এ বলেছে, চলতি বছর মার্কিন অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি হার ২.৯ শতাংশ হবে এবং আগামী বছরে ১.৯ শতাংশে হ্রাস পাবে। এ কারণে হোয়াইট হাউস ফেডারেল রিজার্ভ-এর কাছে বার বার সুদ কমিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত বাস্তববাদী হওয়া এবং পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য-বিরোধ মিটিয়ে ফেলা। এতে দু'দেশ যেমন লাভবান হবে, তেমনি বৈশ্বিক অর্থনীতিও উপকৃত হবে।
৭. চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে শ্রীলঙ্কা চা রফতানি করেছে ১২১৮০ কোটি রুপির, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
খবর অনুসারে, শ্রীলঙ্কা থেকে সবচেয়ে বেশি চা আমদানি করেছে ইরাক। এর পরেই আছে তুরস্কা, রাশিয়া ও ইরানের স্থান। লিবিয়া, চীন ও আজারবাইজানও দেশটি থেকে চা আমদানি করেছে। তা ছাড়া, শ্রীলঙ্কা থেকে ভারত, জার্মানি, ও যুক্তরাষ্ট্রের চা আমদানি বেড়েছে।
৮. চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আলবেনিয়ায় আকাশপথে যাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৪ লাখের বেশি। দেশটির পরিসংখ্যান সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, প্রথম ৬ মাসে দেশটির তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন ১৪ লাখ সাড়ে ১১ হাজার যাত্রী, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশটির একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বর্তমানে তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করছে ২১টি এয়ারলাইন্স। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে এই কোম্পানিগুলো এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এদিকে, বছরের প্রথম ৬ মাসে আলবেনিয়া ভ্রমণ করেছেন ২১ লাখ বিদেশি পর্যটক।
৯. ফল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ ২৮তম স্থানে রয়েছে। আর আলাদাভাবে আম ও পেয়ারা উৎপাদনে আছে যথাক্রমে সপ্তম ও অষ্টম স্থানে। গত মঙ্গলবার সংসদভবনে একাদশ জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৫ প্রজাতির ফলের ৮৪টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪ প্রজাতির ফলের ৮৪টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ প্রজাতির ফলের ৭টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর থেকে ফলের ২ প্রজাতির ২টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
১০. বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে উৎসে কর ৫ শতাংশ কাটা হবে। ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে উৎসে কর কাটা হবে ১০ শতাংশ। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকেই এ হার কার্যকর হবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে তিনি জানান, শিগগিরই এ ব্যাপারে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় মন্ত্রী সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর ১০ শতাংশ কাটা হবে বলে জানিয়েছিলেন। পরে এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সিস্টেম ডেপেলপের ক্ষেত্রে সরকার এখনও প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি। তবে, পয়লা জুলাই থেকে প্রবাসীরা যারা টাকা পাঠাচ্ছেন, তাদের ২ শতাংশ হারে অর্থ সহায়তা দিয়ে দেওয়া হবে। (আলিমুল হক)