জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন বলে চলচ্চিত্র নিয়ে মানুষের মূল্যায়ন বা অনুভূতি ভিন্ন: চীনা চলচ্চিত্র পরিচালক ওয়াং সিও শুয়ে
  2019-08-01 10:29:35  cri


ইরানের ৩৭তম ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব ১৮ এপ্রিল তেহরানে শুরু হয়। চীনা চলচ্চিত্র পরিচালক ওয়াং সিও শুয়ে আমন্ত্রিত হয়ে এই উত্সবের আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে পর্যালোচকের দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াং সিও শুয়ে'র পরিচালিত চলচ্চিত্র 'সো লং, মাই সান' ২০১৯ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করে।

তেহরানে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ওয়াং সিও শুয়ে বলেন, বাণিজ্যিক ফিল্ম এবং আর্ট ফিল্মের সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলার ব্যাপার নিয়ে তিনি কখনও চিন্তা করেন নি। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তিনি প্রথমে রচনার কাজ নিয়ে চিন্তা করেন এবং যে কাজ করা উচিত্ সে কাজে অবিচল থাকেন।

সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি 'সো লং, মাই সান' নামে তার পরিচালিত চলচ্চিত্রটির কথা উল্লেখ করেন। এতে দুটি পরিবারের গল্প তুলে ধরা হয়। কোনো এক দুর্ঘটনার কারণে খুব ঘনিষ্ঠ দু'টি পরিবারের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। ৩০ বছর পর তারা আবার মিলিত হয়। তাদের এই সম্পর্কের মুগ্ধকর কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয় চলচ্চিত্রটিতে। চলচ্চিত্রের প্রধান পুরুষ ও নারী চরিত্র চলতি বছরের বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রীর 'সিলভার বিয়ার পুরস্কার' লাভ করেন।

'সো লং, মাই সান' চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে ওয়াং সিও শুয়ে বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্রই নয়, বরং এতে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চীনা জনগণের জীবনের পরিবর্তনও প্রকাশিত হয়।

দর্শকদের ভালো-মন্দ মূল্যায়ন প্রসঙ্গে ওয়াং সিও শুয়ে বলেন, 'চলচ্চিত্র গণনার মতো নয়, চলচ্চিত্র নিয়ে পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভুল বা ঠিক এরকম কোনো মানদণ্ড নেই। প্রত্যেক মানুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, চলচ্চিত্র নিয়ে তাদের অনুভূতিও ভিন্ন রকম। এক একজনের নন্দনতত্ত্ব ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট ভিন্ন রকম। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। সবাই চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারেন এবং তা সমালোচনা করতে পারেন। তাই আমার কাছে চলচ্চিত্র পছন্দ করা বা সমালোচনা করা, যাই হোক, তা সবই স্বাভাবিক। জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন রকম বলে চলচ্চিত্র নিয়ে তাদের মূল্যায়ন বা ভাবানুভূতি ভিন্ন রকম।'

'সো লং, মাই সান' চলচ্চিত্র চীনে প্রদর্শনের পর জনগণের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে এর বক্সঅফিস তেমন সন্তোষজনক নয়। এ প্রসঙ্গে ওয়াং সিও শুয়ে বেশি মনোযোগ দেন নি।

ওয়াং সিও শুয়ে গত শতাব্দীর ৬০'র দশকে জন্মগ্রহণ করেন। চীনা চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে যারা অব্যাহতভাবে অনুসন্ধান করছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তি হিসেবে প্রথমে আমি রচনার ব্যাপারটি বিবেচনা করি। আমি বাণিজ্যের সঙ্গে বাজারের সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ করে গড়ে তোলা নিয়ে চিন্তিত নই, বরং আমরা নিজের কাজ ভালোভাবে করতে চাই। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ফিল্মের সঙ্গে আর্ট ফিল্মের বক্সঅফিস দখল করা খুব কঠিন হওয়া সত্ত্বেও, বাজারে নিজের কিছু জায়গা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, 'বাণিজ্যিক ফিল্মের সঙ্গে আর্ট ফিল্মের বাজার দখল করা অসম্ভব। আমাদের বাজার বৈচিত্র্যময় করে গড়ে তোলা উচিত্। তাই আর্ট ফিল্মের জন্য কিছু জায়গা বজায় রাখা উচিত্। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত্।'

ওয়াং সিও শুয়ে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৪০ বছরের সমাজ পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানেন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে চীনাদের জীবনের পরিবর্তন এবং সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার গভীর আগ্রহ আছে। তিনি বলেন, বর্তমানের চীনের উন্নয়ন দ্রুত। তাই চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন উপায়ে বিগত সময়ের দিকে তাকানো উচিত্। এ জন্য ওয়াং সিও শুয়ে ২০১৬ সালে ১০ বছর সময় দিয়ে বাড়িসংক্রান্ত তিনটি চলচ্চিত্র শুটিং করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তবে 'সো লং, মাই সান' চলচ্চিত্র শেষ করতে প্রায় ৪ বছর সময় লাগে। তিনি বলেন, বাড়িসংক্রান্ত তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি তিনি ধৈর্যশীল। তবে জনগণের সমঝোতা এবং পুঁজি বিনিয়োগ তার এই পরিকল্পনা সম্পন্ন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, 'এ তিনটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমি চীনের সমাজ ও জীবন তুলে ধরতে চাই। জানিনা তা নির্মাণ করতে কত সময় অপেক্ষা করতে হবে।'

চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের চলচ্চিত্র পরিচালকের বৈশিষ্ট্যময় প্রতিনিধি হিসেবে ওয়াং সিও শুয়ে মনে করেন, বর্তমানে চীনের চলচ্চিত্র বাজার অনেক উন্নত এবং নানা ধরনের চলচ্চিত্র উত্সবও অনেক। যা নতুন প্রজন্মের তরুণ পরিচালকদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, 'কোনো কোনো তরুণ পরিচালকের প্রথম চলচ্চিত্র বিশাল বক্সঅফিস অর্জন করছে। পাশাপাশি বাজারের চাহিদা অনেক বেশি বলে চলচ্চিত্রে পুঁজি বিনিয়োগের প্রত্যাবর্তন নিয়ে জনগণও অনেক বড় আশা পোষণ করছে। তাই তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালকদের চাপও বেশি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সম্পূর্ণভাবে নিজেকে রচনায় মনোনিবেশ করা খুব কঠিন একটি ব্যাপার। কারণ চলচ্চিত্রে পরিচালকের অনেক মনোযোগের বিষয় রয়েছে।' (লিলি/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040