উত্তর-পশ্চিম চীনে ছিং হাই হ্রদের পূর্ব দিকে এবং ছি লিয়ান পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে বাস করে থু নামের একটি জাতির মানুষ। থু জাতির লোকসংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজারের কিছু বেশি। মূলত ছিং হাই প্রদেশের হুজু থু স্বায়ত্তশাসিত জেলায় তাদের বাস। বাকিরা ছিং হাই প্রদেশ ও কান সু প্রদেশে নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
থু জাতিঅধ্যুষিত এলাকা ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এবং এতদঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় যেমন রয়েছে পাহাড় তেমন রয়েছে নদী।
থু জাতির বৃহত্তম অধ্যুষিত এলাকা হল হুজু থু স্বায়ত্তশাসিত জেলা। জেলার আয়তন ৩৩৭৬ বর্গকিলোমিটার এবং এখানকার উর্বর জমি কৃষির জন্য উপযুক্ত।
বিভিন্ন জায়গায় থু জাতির মানুষ নিজেদের ভিন্ন নামে ডাকতো। কেউ কেউ নিজেদের মঙ্গোলিয়ান বা সাদা মঙ্গোলিয়া বলে ডাকতো, কেউ কেউ থু খুন বলে ডাকতো। থু খুন মানুষ স্থানীয় মানুষ। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর এই জাতির মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী জাতির নাম 'থু' নির্ধারণ করা হয়।
থু জাতির ভাষার শব্দ মঙ্গোলিয়ান ভাষার কাছাকাছি। হুজু, মিন হ্য ও থুং রেন তিনটি আঞ্চলিক ভাষা আছে এবং তিনটি ভাষার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি থু জাতির মানুষ হান ও তিব্বত জাতির মানুষের সঙ্গে বাস করে বলে হান ও তিব্বতি ভাষাও থু ভাষার ওপর প্রভাব ফেলেছে। যেমন, থু ভাষায় ধর্মীয় শব্দ বেশিরভাগ তিব্বতি ভাষা থেকে এসেছে এবং অনেক শব্দ ও নতুন পদ হান ভাষা থেকে নেয়া হয়েছে। থু জাতির লিখিত ভাষা ছিল না। তারা হান ও তিব্বতি অক্ষর ব্যবহার করতো। ১৯৭৯ সালে ল্যাটিন অক্ষরভিত্তিক একটি পিনইন তথা লিখিত ভাষা তৈরি করা হয়।
সময়ের বিবর্তনে থু জাতির খাবার ও খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইউয়ান রাজবংশ আমল পর্যন্ত থু জাতি পশুপালন করতো এবং প্রচুর মাংস ও ডেইরি পণ্য খেতো। মিং রাজবংশ আমলের পর থু জাতি শুরু করে কৃষিকাজ এবং আলু, বার্লি ও গম তাদের মূল খাবারে পরিণত হয়। থু জাতির মানুষ নিজেদের তৈরি থালাবাসন ব্যবহার করে।
থু জাতির পোশাক বিভিন্ন রঙের। পুরুষের চেয়ে নারীর পোশাকে বেশি রঙের ব্যবহার দেখা যায়। নারীর পোশাকের একটি বৈশিষ্ট্য হল 'সাত রঙের জামার হাতা'। জামার হাতায় তারা সাত রঙ ব্যবহার করে।
প্রাচীনকালে থু জাতির নারীরা সাহসী ছিল। তারা ভালো যোদ্ধা ছিল। তখন তাদের জন্য যুদ্ধের নির্দিষ্ট পোশাক ও শিরস্ত্রাণ ছিল। পরে তারা পশুপালক জাতিতে পরিণত হয়। যুদ্ধের প্রয়োজন ফুরায়। কিন্তু মাথায় এক ধরনের পাগড়ি পরার প্রচলন রয়েই যায়। সেটাও আজকাল তেমন একটা দেখা যায় না।
থু জাতির মধ্যে রঙ্গভূমি মেলা, তান মা অপেরা মেলা ও না তুন নামে একটি উত্সব সবচেয়ে বৈশিষ্টপূর্ণ। না তুন উত্সব হল মিন হ্য জেলার থু জাতির মানুষের ফসল কাটার উত্সব। এ উত্সব চান্দ্র পঞ্জিকার সপ্তম মাসে অনুষ্ঠিত হয়। তাই এর আরেকটি নাম 'সপ্তম মাসের মেলা'। না তুন উত্সব প্রায় ২ মাস ধরে চলে। এক একটি গ্রাম পালাক্রমে উত্সব পালন করে। ৪০-৫০ জনের দলগত নৃত্য এ উত্সবের একটি বৈশিষ্ট্য।
থু জাতির অধিকাংশ মানুষ তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাস করে। (শিশির/আলিম/রুবি)