পাশ্চাত্য দেশগুলোর ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ
  2019-07-30 13:50:20  cri

জুন মাস থেকে হংকংয়ে ধারাবাহিক অবৈধ সহিংস ঘটনা ঘটছে। অথচ ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের কিছু দেশ সহিংস ঘটনার জন্য দায়ী একশ্রেণির জনতাকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, হংকংয়ের পুলিশ ও সাধারণ আইনের সমালোচনা করছে তারা। এমনকি, চীনা সরকারের বিরুদ্ধে হংকংয়ের 'অধিকার কেড়ে নেওয়ার' তথাকথিত কাল্পনিক অভিযোগও করে যাচ্ছে তারা। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের কূটনীতিবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এনজেল সম্প্রতি বলেন, হংকংয়ের পুলিশ বিক্ষোভ দমনের সময় সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে, যা হংকংয়ের অধিকার হরণের সামিল। বস্তুত, এ ধরনের কাল্পনিক মন্তব্য সরাসরি হংকং ও চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল।

এনজেলসহ পাশ্চাত্য রাজনীতিবিদদের কথা শুনলে মনে হবে, কেবল তাদের দেশে বিক্ষোভ-মিছিলের নামে সহিংসতা করা অপরাধ; কেবল তাদের দেশেই জনতা যখন পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তখন হামলাকারীরা হবে দাঙ্গাকারী জনতা। কিন্তু হংকংয়ে যখন বিক্ষোভের নামে সহিংসতা ঘটে, তখন সেটা 'শান্তিপূর্ণ' বিক্ষোভ! স্পষ্টতই এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

তারা কী ভুলে গেছে যে, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের 'ওয়াল স্ট্রিট দখল' আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে গোলমরিচের পানি ব্যবহার করেছিল এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুঁড়েছিল? একই বছর, লন্ডনসহ নানান জায়গায় গোলমালের ঘটনায় ব্রিটিশ পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে দাঙ্গাবাজদের ছত্রভঙ্গ করে। তখন তো তারা কিছু বলেনি! এখন হংকংয়ে সহিংসতা দমনে যখন হংকং পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তখন পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদরা কেন তার বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ হন! হংকং পুলিশের সংযম ও সহনশীলতাকে তারা উপেক্ষা করেন অবলীলায়! এটা দ্বৈতনীতি নয়কি?

যখন হংকং ব্রিটেনের প্রশাসনে ছিল তখন কেউ হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার, মানবাধিকার ও মুক্তির কথা বলেননি। তারা শুধু হংকং থেকে কল্যাণ লাভ করার ওপর নজর দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, মাতৃভূমির অধীনে হংকং-এর প্রত্যাবর্তনের পর গেল ২২ বছরে, চীনা কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় হংকংয়ে 'এক দেশ, দু রাজনৈতিক ব্যবস্থা' ও 'হংকংয়ের মানুষের দ্বারা হংকং প্রশাসন'—এই দুই নীতি মেনে চলেছে। হংকংয়ের মানুষ আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি অধিকার ও স্বচ্ছলতা উপভোগ করছে। হংকংয়ের আইনগত শাসনের সূচক ১৯৯৬ সালের ৬৬তম থেকে ২০১৮ সালে ১৬তম হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো।

পাশ্চাত্যের তথ্যমাধ্যমগুলো সবসময় নিজেদের সঠিক মনে করে। তবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পাশ্চাত্য দেশ ও রাজনীতিবিদের নগ্ন হস্তপক্ষকে তারা দেখেও না-দেখার ভান করে বা এড়িয়ে চলে। হংকংয়ের সহিংসতার খবর প্রচারের সময় তারা ঘটনার প্রেক্ষাপট এবং কার্যকারণ খুব কম বর্ণনা করে। বিশেষ করে তারা দাঙ্গাকারী জনতার উস্কানিরমূলক আচরণের খবর উল্লেখ করে না। যেমন, ১২ জুন দাঙ্গাকারী জনতা হংকং সরকারের অফিস ও আইন পরিষদভবনে হামলা চালায়। অথচ ব্রিটিশ তথ্যমাধ্যম শুধু পুলিশের রবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার খবর দেয়; দাঙ্গাকারী জনতার বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করার কোনো কথা উল্লেখ করেনি তারা। ২১ জুলাই দাঙ্গাকারী জনতা জাতীয় প্রতীককে কলঙ্কিত করে, যা কোনো সার্বভৌম দেশ সহ্য করতে পারে না! অথচ পাশ্চাত্য তথ্যমাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে সে খবর প্রচার করেনি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে: এতে পাশ্চাত্য তথ্যমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা থাকে কি?

অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতির লঙ্ঘন। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হল পাশ্চাত্য দেশগুলোর অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অস্ত্র। হংকং সরকার, হংকং পুলিশ ও জনগণ বাইরের শাক্তির এ ধরনের নগ্ন হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না। আর চীন সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব এবং হংকংয়ের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করবে। (শিশির/আলিম/লিলি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040