আফ্রিকার সিংহ রক্ষার কাজ করছেন চীনা সিংবা
  2019-07-27 14:51:54  cri

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমি আপনাদেরকে আফ্রিকায় বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় নিয়োজিত একজন চীনা মানুষের গল্প শোনাবো। জঙ্গলের রাজা হিসেবে আফ্রিকান সিংহের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। সেজন্য অধিক থেকে অধিকরত মানুষ বন্যপ্রাণী সুরক্ষার কাজে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে আফ্রিকায় গিয়ে সিংহ সুরক্ষার কাজে নামা প্রথম চীনা মানুষ হলেন সিংবা। তিনি আফ্রিকার তৃণভূমিতে দশ বছর ধরে আছেন। যদিও আফ্রিকায় থাকার পরিবেশ খবুই খারাপ, তবুও তিনি নিজের কাজ করতে খুবই পছন্দ করেন।

সিংবা হলেন আফ্রিকায় বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় ফুলটাইম কাজে নিয়োজিত প্রথম চীনা মানুষ। সোয়াহিলি ভাষায় সিংবার অর্থ হলো সিংহ। সিংবা আফ্রিকায় এ কাজ করার কারণ সম্পর্কে সাংবাদিককে বলেন, "আমি ছোটবেলায় 'বনের রাজা' শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র দেখেছি। তখন থেকে আমি সিংহ পছন্দ করি। তখন থেকেই আমি আফ্রিকার সিংহ নিজ চোখে দেখতে চাই। ২০০৫ সালে আমি আফ্রিকায় আসার সুযোগ পাই। আমি ও আমার বন্ধুরা মাসাই মারায় যাই। তখন আমার মনে হয়, নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।"

২০১০ সালে সিংবা চীনে তার ভালো চাকরি ত্যাগ করে একা একা কেনিয়ায় এসেছিলেন। তখন থেকে তিনি বন্যপ্রাণী সুরক্ষার কাজ শুরু করেন। ২০১১ সালে তাঁর উদ্যোগে মারা বন্যপ্রাণী সুরক্ষা তহবিলের সামাই মারা ওল কিনইয়েই (Ol Kinyei) সুরক্ষা এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি হল আফ্রিকায় চীনা মানুষের উদ্যোগে প্রথম সেসরকারি গণকল্যাণ সংস্থা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "সিংহের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। ১০০ বছর আগে ২ লাখ ছিল। কিন্তু বর্তমানে ৩০ হাজারেরও কম। এখন সুরক্ষা না করলে সিংহ শীঘ্রই বিলুপ্ত হবে। সেজন্য আমি এখন সিংহ সুরক্ষার কাজ করি। আমার মনে হয়, সিংহগুলো হলো আমার পরিবারের সদস্য।"

সিংবা প্রতিদিন সুরক্ষা এলাকায় তাঁবুতে থাকেন এবং ১৫ জন স্থানীয় কর্মীকে নিয়ে মোটরসাইকেল বা এসইউভি চালিয়ে টহল দিতে যান। তাঁদের কাজ হলো শিকারিদের কবল থেকে সিংহ রক্ষা করা। যদিও তাঁর কাজ খুবই ক্লান্তিকর, তবুও তিনি নিজের কাজ পছন্দ করেন। তিনি বলেন, "সিংহগুলো জানে যে, আমরা তাদের সুরক্ষা দিচ্ছি। তারা কখনো আমাদেরকে আক্রমণ করে না। যখন আমি পাহারার কাজ করি, তখন সিংহগুলো আমাদের কাছে এসে যেন 'হ্যালো' বলে। কোনো কোনো ছোট সিংহ আমাদের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করে। তারা কখনো কখনো আমাদের গাড়ির উপরে উঠে আসে। সুরক্ষা এলাকায় পরিবেশ সম্প্রীতিময়।"

পাহারার কাজ ছাড়াও সিংবা তহবিলে বাসস্থান সুরক্ষার কাজ করেন, যাতে বন্যপ্রাণীগুলোর জন্য নতুন নতুন ভালো এলাকা খোঁজা যায়। সিংবা বলেন, বর্তমান মাসাই মারায় বৃহত্তম সমস্যা চোরাশিকারি না, বরং লোকসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি। এর ফলে বন্যপ্রাণীর বসবাসের পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এ সম্পর্কে সিংবা বলেন, "মাসাই মারায় আমরা স্থানীয় উপজাতির সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে আরো গোচারণ ভূমি বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করি। এ ব্যবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারাও সুরক্ষা এলাকায় কাজ করতে পারেন এবং আগের চেয়ে বেশি আয় করতে পারেন। সুরক্ষা এলাকা হল মানুষ ও পশুর মধ্যে বিরোধ সমাধানের শ্রেষ্ঠ উপায়।"

সিংবা বলেন, তিনি আশা করেন, নতুন 'সিংহ রাজা' শীর্ষক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আরো বেশি পশুপ্রেমী বন্যপ্রাণী সুরক্ষার কাজে অংশ নিতে উত্সাহী হবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আফ্রিকার তৃণভূমির বৈচিত্র্য পৃথিবীতে বিরল। বলা হয়, আফ্রিকা হলো প্রাণীবৈচিত্র্যের শ্রেষ্ঠ স্থান। কিন্তু আফ্রিকার এই বৈচিত্র্য হুমকির মুখে। দি এখন সুরক্ষা করা না-হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা হয়তো কার্টুনেই পশু দেখতে পাবো। আমি সবাইকে বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় কাজ করতে আহ্বান জানাই। আমি আশা করি, এসব পশু স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে আফ্রিকার তৃণভূমিতে বসবাস করতে পারবে।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040