চীনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী 'বলদর্পী আচরণ' ও 'হুমকি'র অভিযোগ
  2019-07-26 14:56:12  cri

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ জনের কিছু বেশি মানুষ যৌথভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছে। তাতে চীনের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে বলা হয়, চীন 'সম্প্রসারণবাদ' ও 'সার্বিক জাতীয় শক্তি' ব্যবহার করে অন্যদের সঙ্গে বলদর্পী আচরণ করে ও হুমকি দেয়।' এই পরিপ্রেক্ষিতে চীনকে মোকাবিলার আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে। ওই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় চীনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সত্যিই আশ্চর্য এক অভিযোগ। এসবের সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করে চীনের মানুষ। প্রিয় শ্রোতা, বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ জনের কিছু বেশি মানুষ একটি উন্মুক্ত চিঠি স্বাক্ষর করে। চিঠিতে- 'চীন বর্তমান আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে সম্মান করে না' উল্লেখ করে, 'চীনকে মোকাবিলা করার' আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ করে যে, মার্কিন কর্তৃত্বাবাদের বৈশিষ্ট্য হলো একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ ও স্বার্থপরতা। আর এগুলোই হচ্ছে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার প্রকৃত ধ্বংসকারী। ১৭৭৬ সালের পর দুইশ বছরের বেশি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ৯০ শতাংশের বেশি সময় ধরে যুদ্ধে জড়িত রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে, চীন একটি যুদ্ধও শুরু করেনি। তাহলে কোন দেশটি শান্তি ধ্বংস করেছে- তা প্রমাণিত হয়।

সাম্প্রতিক বছরে বিশ্বে অনেক গুরুতর নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে, যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। যেমন, সন্ত্রাসদমনের অজুহাতে আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করেছে, সিরিয়াতে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে, এতে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য সংকট বয়ে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাবাদ চর্চা করছে। যেমন, জেরুসালেমকে একতরফাভাবে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে; যা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগকে অবজ্ঞা করেছে। চীনা বিশ্লেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে বিশ্বের শান্তি ধ্বংসকারী ও বিশৃঙ্খলার মূল উত্স।

বর্তমান বিশ্ব অনেক অশান্ত হয়ে উঠেছে। মানবজাতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে কোরিয়ার পরমাণু ইস্যু, ইরানের পরমাণু সংকট, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার। শীতল যুদ্ধের ধারণা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করাই হবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক সিদ্ধান্ত।

কিন্তু আমেরিকা একদিকে শুল্ক 'লাঠি' ব্যবহার করে চীন, মেক্সিকো, কানাডা, ইইউ ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক বহপক্ষবাদ নীতিতে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও ইউনেস্কোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বা চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার চলমান ব্যবস্থা নষ্ট করেছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বোল্টন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের সম্পর্ক 'হাতুড়ি-পেরেকের' মতো; যুক্তরাষ্ট্র যাকে আঘাত করতে চায় তাকে আঘাত করবে। 'আমেরিকা ফার্স্ট' ঘোষণার মাধ্যমে দেশটি মার্কিনী আধিপত্যবাদ ও স্বার্থপরতা দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও শৃঙ্খলা অবজ্ঞা করেছে ও তা নষ্ট করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'অবরোধ' নীতি দেশটির সন্ত্রাসী নীতির এখন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক আক্রমণ ছাড়াও এই অবরোধ তারা কার্যকর করছে ইরান, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়ায় অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। তারা খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার মতো শক্তি অর্জন করেছে। এ জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসতে ইচ্ছুক।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিবিদ বিশ্ব শৃঙ্খলা নষ্ট করে যাচ্ছে ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন অস্বীকার করছে। সেই সঙ্গে, অযৌক্তিকভাবে চীনের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তাদের ধারণা- 'চীন বর্তমান আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা মানে না।' তার মৌলিক কারণ হলো, চীন জাতিসংঘ সনদের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন দেশের প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ও বিশ্ব প্রশাসন ব্যবস্থা কোনো একটি দেশের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। চীন মনে করে, বিভিন্ন দেশের উচিত্, আলোচনা-পর্যালোচনা ও জাতিসংঘ সনদের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করা এবং সম্মিলিতভাবে আরও ন্যায় ও দায়িত্বশীলতার পথে এগিয়ে যাওয়া।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040