আজকের টপিক প্রসঙ্গ: বরিস জনসন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবেন, ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ কেমন হবে?
  2019-07-24 14:02:11  cri

ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন গতকাল (মঙ্গলবার) ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হিসেবে নির্বাচিতি হন। তার মানে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন।

নির্বাচের আগে অনুষ্ঠিত জনজরীপ থেকে বরিসের বিজয়ী হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তখন তিনি ৬০ শতাংশ সদস্যের সমর্থন পান। কিন্তু বিবিসির খবরে একটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা হল ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরিস কি তেরেসা মে'-এর স্থান থেকে সফল হতে পারে? যদি বরিস অক্টোবর মাসের আগে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে না পারেন তাহলে ইইউ'র মধ্যে থাকার পক্ষে সমর্থনকারী লেবার পার্টিকে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। তিন বছর ধরে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে পদস্থলন হওয়া ব্রিটেন নতুন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কোন পথে যাবে? বরিসের কার্যমেয়াদ কত দিন থাকতে পারে? এসব বিষয় নিয়ে আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা আলোচনা করবো।

১. বরিস কি চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে?

বরিস বহু বার এবং বহু অবস্থায় বলেছিলেন, যদি ৩১ অক্টোবর ইইউ'র সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে ব্রিটেন চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে।

ইংল্যান্ড ব্যাংকের গভর্নর এ বিষয় নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং ইইউ বাজার ও শুল্ক ইউনিয়ন থেকে জোর করে বেরিয়ে যাওয়া ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য ২ থেকে ৪ বছরের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর আগে অর্থনীতিবিদরাও বলেছিলেন, ২০১৬ সালে গণভোট থেকে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি দেখা দিয়েছে। যদি চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যায় তাহলে এ নেতিবাচক প্রভাব প্রথমে ব্রিটেনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপর আঘাত হানবে।

বরিসের এ অধিষ্ঠান মোকাবিলায় গত ১৮ জুলাই ব্রিটেনের সংসদের নিম্ন কক্ষে একটি সংশোধিত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে পরিষ্কারভাবে সংসদের অনুমোদন ছাড়া ইইউ থেকে চুক্তিহীনভাবে বেরিয়ে যাওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে।

গত রোববার অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হামোন্ড টেলিভিশনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, 'আমি নিজেই পদত্যাগ করেছি, কারণ আমি পুরোপুরি চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে'। গত সোমবার আইনমন্ত্রী ডেভিড গাউক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনকেনও পদত্যাগ করেছেন। এসব পদত্যাগ হলো কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে উদারপন্থীদের চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য 'না' বলার একটি পদক্ষেপ।

কিন্তু বরিস যদি সিদ্ধান্ত নেন যে চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবেন। তাহলে কি সম্ভব হবে?

তেরেসা মে-এর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পারি, তার উদ্যোগে তৈরী চুক্তি সংসদে বহুবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কারণ কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে মতভেদ এতোই বেশি যে কোনোভাবেই তারা এক মত হতে পারে না। বরিস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদগ্রহণের আগে কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা কোনোভাবেই চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে রাজি হবে না। এসব বিরোধিতা হলেও বরিস যদি নিজের মতে জোরাজুরি থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবিশ্বস্তের ভোট দিয়ে তার কার্যমেয়াদ শেষ হতে পারে।

২. লেবার পার্টির বড় সুযোগ

যদি বরিস ৩১ অক্টোবরের আগে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে না পারে তাহলে লেবার পার্টির জন্য ভাল সুযোগ আসতে পারে। তারা নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবিশ্বস্ত প্রস্তাব দিতে পারে। এর মাধ্যমে ওয়ার্কার্স পার্টি ক্ষমতায় আসতে পারে। কিন্তু লেবার পার্টি এখন নিজের সমস্যার মধ্যে ব্যস্ত। তারা সম্ভবত এত তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

৩. ইইউ'র সঙ্গে নতুন চুক্তি হতে পারে?

ইউরোপীয় কমিশনের নতুন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডের লেয়েন যদিও বলেছিলেন সময়সীমা আবার বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু বরিস বার বার বলেছেন, ৩১ অক্টোবরের আগে কাজটা সমাপ্ত করতে হবে।

ইইউ'র প্রধান আলোচক বানিয়ের কথা অনুযায়ী, তেরেসা মে কখনো চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেননি। বরিস এ হুমকি দিয়ে সম্ভবত ইইউ'র সঙ্গে দরকষাকষি করতে চেয়েছিলেন। যেমন উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমারেখা সংক্রান্ত ব্যাকস্টপ বাতিল করা, এবং তার মাধ্যমে নতুন চুক্তি দিয়ে সংসদে তদবির করতে পারে। যদি তা হতে পারে তাহলে সবাই একটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে। নইলে পুরো ব্যাপারটা দেখে মনে হয় এসব ঝামেলা করে ব্রিটেনের জন্য আসলে কি লাভ হতে পারে?

(স্বর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040