আমাদের গ্রামের যুবকরা: কুই চৌ প্রদেশের দারিদ্র্যবিমোচন কাজে জড়িত যুবকদের গল্প
  2019-07-24 08:48:12  cri

ছেন স্যু নান

হাজার বছর ধরে পাথর ও পাহাড়ের সঙ্গে তাদের বাস। তাদের উত্স এখানে। কিন্তু পাহাড়েই তারা আটকে ছিল। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ এখানেও বিস্তৃত হয়েছে। এ কাজে এখন অনেক যুবক যোগ দিয়েছে; তাদের বয়স ত্রিশ বছরের কম। স্কুল থেকে গ্রামে আসা, সরকারি অফিস থেকে গ্রামে আসা, উন্নত উপকূলবর্তী এলাকা থেকে পাহাড়ি গ্রামে আসা এ যুবকরা গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ করেন। আজকের 'পুবের জানালা' আসরে আমরা এই যুবকদের গল্প শোনাব।

তান জাই জেলার ইয়ে কে গ্রাম একটি মিয়াও জাতির গ্রাম। এখানকার বাসিন্দারা মিয়াও জাতির একটি শাখা 'চিন চি মিয়াও'-এর অন্তর্গত। চীনা ভাষায় 'চিন চি' মানে সুন্দর মুর্গি। সুন্দর, তবে দরিদ্র এ গ্রাম। ছেন স্যু নান কুই চৌ প্রদেশ সরকারি অফিসের একজন কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তিনি এ গ্রামে এসে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচনে কাজ শুরু করেন। তবে তার জন্য স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল কঠিন একটি ব্যাপার।

তিনি উপকূলবর্তী শহরে বড় হয়েছেন। গ্রাম ও গ্রামের বাসিন্দারা তার অপরিচিত ছিল। খাওয়ার অভ্যাসও অন্যরকম। কুই চৌ মানুষ ঝাল খাবার খেতে পছন্দ করে। অন্যদিকে, ছেন স্যু নান ঝাল খেতে পারেন না।

ইয়ে কে গ্রামের ২০৮টি পরিবার আছে। এক বছর ধরে তিনি  সব পরিবারের সঙ্গে যোগাযো করেন। এখন তিনি ঝাল খাবার খেতে পারেন এবং কৃষকের মতো কৃষিকাজ করতে পারেন; এমনকি, আঞ্চলিক ভাষাও বলতে পারেন।

চুই ইয়া হুয়া (ডান)

২৯ বছর বয়সী চুই ইয়া হুয়া প্রায় একই অবস্থার সম্মুখীণ হয়েছিলেন। তিনি সিয়াও জাই কুয়ান গ্রামে আসার তৃতীয় দিনেই সারা গ্রামের মানুষের প্রতি একটি সম্মেলনের আহ্বান জানন। তিনি দু'ঘন্টার একটি ভাষণ দেন। কিন্তু শ্রোতাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই! পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, শ্রোতাদের কেউ ম্যান্ডারিন বুঝতে পারেননি!! তখন থেকে তিনি আঞ্চলিক ভাষা শিখতে শুরু করেন। এখন তিনি ভাল কুই চৌ আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারেন।

তার চেহারাও এখন স্থানীয় মানুষের মতো! কালো ত্বক!! তিনি এখন স্ট্রো টুপি পরেন। বিয়ে করার পরপরই তিনি আসেন গ্রামে। তার স্ত্রী একসময় খুব রাগ করতেন। ২০১৭ সালের জাতীয় দিবসের ছুটিতে তার স্ত্রী গ্রামে এসে স্বচোখে স্বামীর কর্মস্থান দেখেন। জরাজীর্ণ বাড়িঘর, শরীরে সব মশার কামড়ের ক্ষত তার স্বামীর। তবে গ্রামবাসিন্দদের আন্তরিক কথা শুনে তার চোখ থেকে অশ্রু পড়তে থাকে। তিনি স্বামীর কাজের মাহাত্ম্য বুঝতে পারেন।

পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায় ঘন ঘন গাছপালা। এ যুবকরা যেন গাছের মতো পাহাড়ি অঞ্চলে টিকে আছেন‍!

থান তান যখন থুয়ান জিয়ে গ্রামে আসেন তখন তার বাচ্চার বয়স মাত্র ৬ মাস। তিনি ৬০ জন সিপিসিসদস্য নিয়ে গঠিত একটি দারিদ্র্যবিমোচন কর্মদল গ্রামে নিয়ে আসেন এবং স্থানীয় মানুষদের সাহায্য করতে শুরু করেন। গ্রামের বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী থান তান গ্রাম-পর্যটন উন্নয়নের প্রস্তাব দেন।

গ্রীষ্মকালে থুয়ান জিয়ে গ্রামের ধানক্ষেতে মাছগুলো বড় হয়। রাজধানী কুই ইয়াং থেকে আসা শিশু ও তাদের বাবামা এখানে মাছ ধরা একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এটা থান তানের গ্রাম-পর্যটন পরিকল্পনার একটি অংশ। পর্যটন ছাড়া, থান তানের নেতৃত্বে স্থানীয় মানুষ শূকর পালন এবং মৌমাছি পালনের ব্যবসা শুরু করে। তাদের আয়ও দিন দিন বাড়ছে।

ছেন স্যু নান গ্রামে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে ৩২ হাজার শব্দের 'ইয়ে কে গ্রাম দারিদ্র্যবিমোচন প্রতিবেদন' লিখেছেন। এ প্রতিবেদনে যেমন দেখা যায় গ্রামের ইতিহাস, তেমনি ফুটে উঠেছে এখানকার শিল্পের উন্নয়নের চিত্র। প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, দারিদ্র্যবিমোচন করতে চাইলে সাহস ও পরিশ্রম দরকার। বিস্তারিতভাবে কাজ করতে হয়। ক্যাডার এতে বড় ভূমিকা পালন করেন, তবে অবশেষে জনগণের উপর নির্ভর করে এ কাজ বাস্তাবয়ন করতে হয়।

চুই ইয়া হুয়া গ্রামে ৩ বছরের মতো কাজ করছেন। তিনি বলেন, "আমরা গ্রাম পরিবর্তন করি। পাশাপাশি, গ্রাম আমাদের উপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। এখানে তিন বছরের অভিজ্ঞতা আমার যৌবনের মূল্যবান সম্পদ।"

তাদের মতো যুবকরা এখন কুই চৌ প্রদেশের বড় বা ছোট গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচন কাজে অংশ নিচ্ছেন। কুই চৌ প্রদেশের দারিদ্র্যের হার ২০১২ সালের ২৬.৮ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮ সালে ৪.৩ শতাংশে দাঁড়ায়। বার্ষিক গড় ১০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়।

এ যুবকরা বলছেন, আবার সুযোগ পেলে তারা একই সিদ্ধান্ত নিবেন। গ্রামে আসার আগে তাদের দ্বিধা ছিল। তবে গ্রামে আসার পর তারা সরল শক্তি অনুভব করেন এবং গ্রামবাসীদের কাছ থেকে শিখেছেন আশাবাদী এবং শক্তিশালী আত্মার অধিকারী হতে। (শিশির/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040